গল্প — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
বাবা কতো ভালো!
সৌরীশ মিশ্র
এক
"রাকা কোথায় গেলি?" সুজিতবাবু তাঁর সাইকেলটা বাড়ি থেকে প্যাসেজে বের করতে করতে আশেপাশে মেয়েকে না দেখে ডাকলেন।
"এই তো বাবা, আমি এখানে।" বাড়ির পিছনের বাগানটা থেকে সাড়া দেয় ছোট্ট রাকা।
সুজিতবাবু ডানদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখতে পেলেন এবার তাঁর মেয়েকে। বাগানে দাঁড়িয়ে আছে সে।
"কি করছিস বাগানে? তাড়াতাড়ি আয়।"
রাকা বাগান থেকে বেড়িয়ে সুজিতবাবুর পাশে এসে দাঁড়ায়। তারপর বাবার পিছন পিছন যেতে থাকে। ওর পিঠে স্কুল ব্যাগ। "জানো বাবা..." যেতে যেতে বলে ওঠে রাকা।
"সব শুনব সাইকেলে উঠে। চল্ তাড়াতাড়ি এখন, না হলে দেরী হয়ে যাবে পৌঁছতে।"
সাইকেল বাড়ির সামনের রাস্তাটায় এনে দাঁড় করালেন সুজিতবাবু। তারপর সাইকেলে চড়ে বসলেন তিনি। রাকাও পাদানিতে পা দিয়ে উঠে বসল চালকের সিটের পিছনের ক্যারিয়ারটায়।
"ধরেছিস রিংগুলো?" মেয়েকে জিজ্ঞেস করেন সুজিতবাবু। সাইকেলের চালকের সিটের পিছনে যে দু'টো রিং আছে ক্যারিয়ারে যে বসছে তার ধরার জন্য, সেই রিংগুলোর কথাই বলছেন সুজিতবাবু।
"হ্যাঁ, ধরেছি তো।" উত্তর দেয় রাকা।
প্যাডেলে এবার চাপ দেন সুজিতবাবু। সাইকেল এগোতে থাকে ধীরে ধীরে।
দুই
স্কুলে যাচ্ছে রাকা। সুজিতবাবুই প্রতিদিন ওকে স্কুলে পৌঁছে দেন সাইকেলে। এখন প্রায় সকাল সাড়ে ছ'টা। সাতটা থেকে রাকার স্কুল।
তিন
"এবার বল্ কি বলছিলি?" একটুখানি এগিয়েই মেয়েকে বললেন সুজিতবাবু।
"জানো বাবা, এর আগের বছর রথের মেলা থেকে যে বেলিফুলের গাছটা আমায় কিনে দিলে না তুমি, যেটা বাগানে লাগিয়েছিলাম গো আমি, তুমি আর মা মিলে, সেটায় কুঁড়ি এসছে, জানো। কাল দেখেছিলাম ছোট্ট ছিল এক্কেবারে। আজ দেখলাম, আর একটু বড় হয়েছে। কতোটা বড় হোলো কুঁড়িটা, সেটাই তো দেখছিলাম বাগানে গিয়ে। কবে ফুটবে বাবা ফুল?"
"আমি তো দেখিনি। তবে তুই যা বলছিস, মনে হয় ফুটবে দু'-তিনদিনের মধ্যেই।"
"ফুটলে খুব সুন্দর গন্ধ বেরোবে, না বাবা?"
"হ্যাঁ, তা তো বেরোবেই।"
"বাবা, এবার রথের মেলা যাব না?"
"যাব তো।"
"এবারও কিন্তু একটা ফুলের গাছ কিনে দিতে হবে আমায়। দেবে তো বাবা?"
"হ্যাঁ দেবো। কি গাছ কিনবি, ভেবেছিস?"
"ভেবেছিই তো। এবার একটা শিউলি ফুলের গাছ কিনব বাবা। ভালো হবে না? আমাদের বাগানে তো কতো রকমের, ফুলের গাছ আছে। শিউলি কিন্তু নেই।"
"বাঃ, ভালোই ভেবেছিস তো। সত্যিই তো, আমাদের বাগানে তো শিউলি গাছ নেই। ঠিক কথা একেবারে, একটা শিউলি গাছ তো থাকা দরকার বাগানে। শরৎকালে ফুল ফুটবে। মা দুর্গা আসছেন, গাছটা ফুল ফুটিয়ে তা একটু আগে থেকে জানিয়েও দেবে আমাদের। ফুল ফুটলে সুন্দর একটা মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকবে আমাদের বাড়ির আশপাশ। বেশ আইডিয়া দিয়েছিস রাকা।"
বাবার কথাগুলো শুনতে খুব ভাল লাগছিল রাকার। ওর বাবা কতো ভালো! কখনো কিছু বললে, না বলে না কক্ষনো। ওর বাবা দ্য বেস্ট বাবা ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। মনে মনে কথাগুলো ভাবে ছোট্ট রাকা। এতক্ষণ সাইকেলের চালকের সিটের পিছনের যে রিং দু'টো ধরে বসেছিল রাকা, সেগুলো ছেড়ে দেয় এবার সে। রাকা এবার ওর বাবার কোমড়টা দু'হাতে জড়িয়ে ধরে। তারপর, মাথাটা রাখে বাবার পিঠে।
"কি রে ঘুম পাচ্ছে নাকি তোর?" মেয়ে পিঠে মাথা রাখায় জিজ্ঞেস করেন সুজিতবাবু।
"না তো।" আলতো করে বলে রাকা।
সুজিতবাবু বুঝতে পারেন মেয়ে আদর করছে তাঁকে।
সুজিতবাবুর মনটাই ভাল হয়ে যায় মুহূর্তে।
Comments :0