SALIM MEMARI JUDICIARY

মেমারিতে সেলিম, আদালতে তৃণমূল-বিজেপি ঢুকে গেলে গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক

রাজ্য

শঙ্কর ঘোষাল: বর্ধমান

প্রভাবশালীরা আদালতকেও প্রভাবিত করলে সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষা হবে না, দুর্নীতি দমনের বদলে দুর্নীতি প্রশ্রয় পাবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন পূর্ব বর্ধমানের মেমারি বাসস্ট্যান্ডে প্রয়াত সিপিআই(এম) নেত্রী কমরেড মহারানি কোঙারের স্মরণসভায় সেলিম বলেছেন, কলকাতা হাইকোর্টে যে অভিযোগ এসেছে তা আগে কখনো শোনা যায়নি। আইন আদালত সবার জন্য সমান, কে ভবিষ্যতের নেতা হবে সেটা দেখা আদালতের বিষয় নয়। চিট ফান্ডকাণ্ড, নারদকাণ্ড, নিয়োগ দুর্নীতি, কয়লা পাচার সব দুর্নীতির তদন্তেই প্রভাবশালীদের ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা দেখা গিয়েছে। তদন্ত নিয়ে যাদের ভয় তারাই তদন্ত ঠেকাচ্ছে। আদালতও যদি তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয় তাহলে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন। 
সেলিম বলেছেন, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জিকে বাঁচাতে বিজেপি’র ভূমিকা দেখাই যাচ্ছে। নর্দমার নোংরা জল যেখান দিয়ে যায় সব নোংরা করে দিয়ে যায়। এখন আদালত কক্ষেও তৃণমূল-বিজেপি ঢুকে গেলে, তদন্ত আটকানোর জন্য আদালতের বেঞ্চ ব্যবহৃত হলে সেটা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক হবে।
এদিন মেমারি বাসস্ট্যান্ডে কমরেড মহারানি কোঙারের স্মরণসভায় বহু মানুষ এই জননেত্রীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। শুরুতেই প্রয়াত নেত্রীর প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরি, অঞ্জু কর, পার্টিনেতা অমল হালদার, অচিন্ত্য মল্লিক, সৈয়দ হোসেন সহ নেতৃবৃন্দ। স্মরণসভায় এছাড়াও স্মৃতিচারণা করেন পার্টিনেতা অমল হালদার, শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পার্টির পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক সৈয়দ হোসেন।
সভায় মহারানি কোঙারের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে উল্লেখ করে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি, গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে দেননি। সমাজ যেমন চলছে তা পরিবর্তনের জন্য কাজ করে গেছেন আদর্শে স্থির থেকে। এখনকার শাসকরা লুট দুর্নীতি করে টাকা পাচার করছে, আর কোঙার পরিবারের সদস্যরা কমিউনিস্ট আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে অর্থ দান করছেন। বর্তমানের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকদের সঙ্গে কমিউনিস্টদের এতটাই তফাত। 
মতাদর্শে এই দৃঢ়তা নিয়েই দেশকে সাম্প্রদায়িক শক্তির কবলমুক্ত করার সংগ্রামে শামিল হতে আহ্বান জানিয়েছেন সেলিম। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইতে তৃণমূলকে কল্পনা করাও ভুল হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেলিম বলেছেন, অভিষেক ব্যানার্জিকে দুর্নীতি মামলা থেকে বাঁচাতে তৃণমূল আরএসএস’র কথায় ওঠবোস করছে। তলব তো করছে গ্রেপ্তার কেন করছে না? টাকা উদ্ধার করছে না কেন? ইডি সবাইকে ডাকছে কবে বিজেপিতে যোগ দেবে তা ঠিক করার জন্য? 
কোচবিহারে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় তৃণমূলের বাধা সম্পর্কে সেলিম একথাও বলেন, কংগ্রেসের ন্যায় যাত্রার বিরুদ্ধে পোস্টার লিখে টিটকারি, হামলা করছে তৃণমূল। কেন? আসামে বিজেপি’র হিমন্তবিশ্ব শর্মা যা করেছে, এখানে তৃণমূলও তাই করবে? এখানে যারা ইনসাফ চাইছে, হক চাইছে, অধিকার চাইছে, গণতন্ত্র চাইছে, সেই সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি একসাথে হবে। আর যারা বিজেপি, আরএসএস’র দালাল, লুট করছে, দুর্নীতি করছে তারা তফাত যাবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের যদি লড়াই হয় তাহলে তৃণমূল সবসময় ন্যায়ের বিপরীত দিকে থাকবে।
সেলিম বলেছেন, আজকে গোটা দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইতে কমিউনিস্টরা রয়েছে, কারণ তাঁদের আদর্শ আছে, নীতি আছে। দুর্নীতিকে আড়াল করার জন্য ধর্মকে বর্ম করে আপস করে না। যদি মহারানি কোঙারকে শ্রদ্ধা জানাতে হয়, তাঁর স্মৃতিকে জাগরুক রাখতে হয় তাহলে মাথা তুলে এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। এদিন স্মরণসভায় এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পার্টিনেতা তন্ময় ভট্টাচার্য, তাপস সরকার, সমর ঘোষ, তাপস চ্যাটার্জি, শুকুল শিকদার, আক্তার আলি, সুদীপ্ত বাগচী, অভিজিৎ কোঙার, অরিন্দম কোঙার, সুকান্ত কোঙার, অপূর্ব চ্যাটার্জি, অশেষ কোঙার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। 

Comments :0

Login to leave a comment