SFI Student's Union

কলেজে কলেজে ‘মনোজিৎ মডেল’, নাম জানালো এসএফআই, ক্যাম্পাস রক্ষার লড়াইয়ের ডাক

রাজ্য কলকাতা

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রণয় কার্য্যী ও দেবাঞ্জন দে।

হাইকোর্টের রায়ের পরও রাজ্যের আশি শতাংশ কলেজে খোলা রয়েছে ইউনিয়ন রুম। বন্ধ না করা হলে তালা মেরে দেওয়া হবে। অপরাধ চক্র চলানো হচ্ছে বিভিন্ন জলেজে, টাকা তোলার জন্য কলেজে কলেজে চালানো হচ্ছে ‘মনোজিৎ মডেল’। 
রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেছেন এসএফআই সভাপতি প্রণয় কার্য্যী এবং সম্পাদক দেবাঞ্জন দে। তাঁরা বলেন, ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করার জন্য এই চক্র চলছে, ছাত্র রাজনীতির অপরাধকরণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন কলেজে এমন ‘দাদা’-দের নাম এবং মদতদাতা তৃণমূলের নেতা বা মন্ত্রীদের নাম তুলেও নির্দিষ্ট অভিযোগ করেছে এসএফআই। তাঁরা বলেন অপরাধমুক্ত ক্যাম্পাস করতে গেলে ভয়মুক্ত ক্যাম্পাস করতে হবে। তার জন্য তৃণমূল মুক্ত ক্যাম্পাস করতে হবে। তার জন্য ছাত্র সংসদের দিন ঘোষণা করতে হবে। 
সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ঘটনা দেখিয়েছে আরেকবার। তৃণমূলের মদতে ক্যাম্পাসে অপরাধ চক্র চলছে। ক্যামাক স্ট্রিট-কালীঘাটের যৌথ আশ্রয়ে চলছে ক্রাইম সিন্ডিকেট। সোশাল, ফেস্টের নামে টাকা তোলা, ভর্তির সময় টাকা তোলার কোটি কোটি টাকার চক্র চলছে। প্রতিটি ক্যাম্পাসে এমন ‘মনোজিৎ মডেল’ তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের মাথারা। 
‘মনোজিৎ মডেল’ মানে টিএমসিপি’র কোনও নেতা যে হয়ত দশ বছর আগে কলেজে পড়ত, তাদের পুষে রেখে দেওয়া হয়। মনোজিৎ মিশ্রের নামে আশেপাশের একাধিক থানায় ধর্ষণ, ভাঙচুর থেকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ছিল। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ওকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় শ্লীলতাহানির অভিযোগে। পরীক্ষা না দিয়েও ক্যাম্পাসে ফিরে আসে কোন জ্যাঠামশায়ের বরাভয়ে? 
এমন মডেল যে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মনোজিতের মাধ্যমে অনুমোদন করতে হবে। যেন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষের ওপরে এই মনোজিৎ। এদের তৈরি করা হয়েছে অপরাধ চক্র চালানোর জন্য। যাতে দুর্নীতির টাকা কালীঘাট থেকে ক্যামাক স্ট্রিটে পৌঁছে যায়। এই মনোজিতের ছবি দেখা গিয়েছে তৃণমূলের শীর্ষস্তরের নেতাদের সঙ্গে। এমনকি ঘটনার পরও প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। 
শোনা যাচ্ছে এখন পুলিশকর্তার বাড়ি পর্যন্ত মনোজিৎ গিয়েছিল আশ্রয় পাওয়ার জন্য। তিলোত্তমার ঘটনায় দেখেছি টালা থানার আধিকারিকদের কী ভূমিকা, তথ্য প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা হয়েছে। কসবা কাণ্ডেও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কিনা সেদিকে আমাদের নজর রাখতেই হবে।
আইনজীবী সায়ন ব্যানার্জির দায়ের করা মমলায় হাইকোর্টের নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়েছি। ২০১৭’র পর নির্বাচন হয়নি। গত আট বছর ধরে যে ইউনিয়ন পরিচালিত হয়েছে তার প্রতিটি অবৈধ। দীর্ঘদিন আমরা বলেছি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা ঘেরাওয়ের পর কর্তৃপক্ষ ৯টি ক্যাম্পাসের ইউনিয়ন রুম বন্ধ করে। এসএফআই’র লড়াই স্বীকৃতি পেয়েছে হাইকোর্টের রায়ে।
এবার প্রশ্ন হলো তা’হলে কবে বৈধ ইউনিয়নের জন্য নির্বাচন হবে? রাজ্য সরকারকে এবার নির্বাচনে তারিখ জানাতে হবে। এর আগে আদালতও হলফনামা দিয়ে জানাতে বলেছিল কেন ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা হচ্ছে না। রাজ্য সরকার আদালতে কোনও বক্তব্য জানায়নি। এসএফআই’র দাবি, রাজ্য সরকার যদি হলফনামা না দেয় তা’হলে মেডিক্যাল কলেজে মডেলের দিকে এগবে ছাত্রছাত্রীরা। যেখানে ছাত্রছাত্রীরা কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে নির্বাচন করাতে বাধ্য করেছে। 
স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নাম করে এদের দিয়ে অবৈধ ইউনিয়ন চলছে। এই কমিটি ভাঙতে হবে। তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা নিজেদের লোকদের দিয়ে কমিটি বানাচ্ছে। ৮ বছরে ১৬ সেমেস্টারে কোটি টাকা ইউনিয়ন ফি হিসেবে তোলা হয়েছে। এই টাকার হিসেব প্রকাশ করতে হবে। এই টাকা কোথায় গেল? যখন খুশি, যেমন খুশি টাকা তোলা হয়েছে।
হাইকোর্টের রায় সত্ত্বেও ৮০ শতাংশের বেশি কলেজে অবৈধ ইউনিয়ন রুম খোলা রয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। ছাত্রছাত্রীরা এবার নিজেরাই তালা দেবে যদি না কর্তৃপক্ষ ন্যবস্থা না নেয়। আইন মেনে চলতে চাই। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় দেওয়া নির্দেশ পালন না হলে তা পালন করা হবে। 
১৫টি কলেজ যেখানে দাদাতন্ত্র চালাচ্ছে বলছি। এমন আরও কলেজ আছে। এসএফআই ইউনিট আছে কি নেই ছাত্রভোট হলে প্রমাণ হয়ে যাবে।
মণীন্দ্র কলেজে রাজীব-বুবু গ্যাঙ কলেজ নিয়ন্ত্রণ চালাচ্ছে। জয়পুরিয়া কলেজে রোহিত সরকার। এখন শিক্ষাকর্মী হিসেবে কাজ করছে। মন্ত্রী শশী পাঁজার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দেবাঞ্জন। সুরেন্দ্রনাথ কলেজে দেবাশিস ব্যানার্জি চারটি প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট কিভাবে। এই দেবাশিস কোনও জনপ্রতিনিধি ছিল না। দেবাশিসের ছেলে শিবাশিসের ছেলে, তার জন্মদিনে কেক কাটা হয়। তার টাকাও ছাত্রছাত্রীদের থেকে তোলা হয়। সেন্ট পলস কলেজে বাপন কয়াল অপরাধ চক্র চালাচ্ছে।  
সিটি কলেজ আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার উলটো দিকে। এখানে বোমা, অস্ত্র থাকলেও তল্লাশি হয় না। একসঙ্গে তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ এবং বিজেপি নেতা সজল ঘোষ মিলে পরিচালনা করে যাচ্ছে। একাধিক অবৈধ চাকরি দিনের পর দিন। আশুতোষ কলেজে সার্থক ব্যানার্জির চক্র চালিয়ে আসছে। এরা তৃণমূল নেত্রী মালা রায়ের তত্ত্বাবধানে চলছে বলে অভিযোগ তোলে এসএফআই। ঠাকুরপুকুর কলেজে ১১ জন চাকরি পেয়েছে অবৈধভাবে। এমন বিভিন্ন কলেজে তৃণমূল নেতাদের ব্যবস্থাপনায় এমন অবৈধ চাকরি হচ্ছে, বলেন দেবাঞ্জন। 
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিরূপ চক্রবর্তী শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ঘনিষ্ঠ। এই অভিরূপ হাইকোর্টের রায়ে ক্যাম্পাসে ঢোকা নিষিদ্ধ। তবু ঢুকছে। চক্রের মাথা তৃণমূলের এই মদতপুষ্ট। দমদম মতিঝিল কলেজেও এমন অবৈধ নিয়োগের নমুনা দিয়ে দেবাঞ্জন ব্রাত্য বসুর ভূমিকায় প্রশ্ন তোলেন। 
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের ডেপুটেশন দিয়ে অবৈধ ইউনিয়ন রুম বন্ধ করার দাবি জানাবে এসএফআই।

Comments :0

Login to leave a comment