RSS and Left

বামপন্থীদের বিরুদ্ধে ‘অন্ধভক্ত’দের লেলিয়ে দিচ্ছে সঙ্ঘ

রাজ্য

দেশ হারেনি। হেরেছে আরএসএস। সামরিকবাহিনী অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে সঙ্ঘের প্রচার, গোদী মিডিয়ার বাড়াবাড়ি। এই অবস্থায় দলের কর্মীদের বিদ্বেষ বামপন্থীদের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে আরএসএস, বিজেপি। 
গোদী মিডিয়া যা প্রচার করছিল, তেমনটি সামরিক বাহিনী করেনি। করার কথাও ছিল না। তারা পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করেনি। করাচি দখল হয়নি। উলটে ঢুকে পড়েছেন ট্রাম্প। আরএসএস, বিজেপি’র কর্মীদের কাছে এই অবস্থা অত্যন্ত লজ্জার বলে মনে হয়েছে। যদিও ভারতের সামরিক বাহিনী যে বীরত্ব, বুদ্ধিমত্তা এবং বাস্তবজ্ঞানের পরিচয় রেখেছে সংঘর্ষের চারটি দিনে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ভারতের সামরিকবাহিনী প্রথম থেকেই বুঝিয়েছে যে, তাদের লক্ষ্য সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি ভাঙা, সন্ত্রাসবাদীদের আড়াল করার জন্য পাকিস্তানের হামলার জবাব দেওয়া। 
কিন্তু যাদের মাথায় হলাহল, সেই নয়া ফ্যাসিবাদী শক্তির কাছে এই বিচারজ্ঞান আশা করা অন্যায়। হয়েছেও তাই। দেশের পররাষ্ট্র সচিব, তাঁর মেয়েকে জঘন্য ভাষায় আক্রমণ করতেও সঙ্ঘ পরিবারের কর্মী, সমর্থকরা ছাড়েনি। এই মুষলপর্বের আভাস পেয়ে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য কর্মীদের রাগ, ঘৃণা, বিদ্বেষ বামপন্থীদের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে আরএসএস।
বিজেপি তার আগামী সমস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত করেছিল রবিবার। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য বিজেপি’ও সেই পথ নিয়েছিল। রাজ্য বিজেপি প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে তারা বিধানসভাভিত্তিক মিছিল করবে। সেই উদ্যোগ স্থগিত করা হয় সোমবার। কারণ, বিজেপি’র মনে হয়েছিল, এই ধরণের কর্মসূচিতে কর্মীদের ‘টানা যাবে না।’ রাজ্য বিজেপি’র এক নেতা অবশ্য সোমবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন,‘‘ভারত জিতেছে, এই অনুভূতি কর্মীদের মধ্যে নেই। আসলে মিডিয়ার প্রচারে যেভাবে কর্মীদের মধ্যে প্রবল আশা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি তবে মোদীজির ভাষণের সিদ্ধান্ত জেনে আমরা আবার পুরানো সিদ্ধান্তে ফিরেছি।’’ ফলে সেনাবাহিনীর লড়াইকে কুর্ণিশ জানিয়ে মিছিল করবে বিজেপি। রাজ্যে তা আগামী ১৬ মে হতে পারে। 
গত ৭ মে রাত থেকে আরএসএস তাদের প্রচারক দলকে সমাজ মাধ্যমে যেভাবে উত্তেজিত করেছে, যেভাবে এক বিরাট ‘আশা’ তৈরি করেছিল কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে, গত ১১ মে তা বেলুনের মতো ফেটেছে। আর তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বিদেশ সচিবকে অসন্মান করা, তাঁর মেয়ের  উদ্দেশ্যে ‘সঙ্ঘসুলভ’ আক্রমণের মাধ্যমে।
এই পরিস্থিতিতে নিরাশায় ডুবতে বসা কর্মীদের বিদ্বেষকে বামপন্থীদের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে সঙ্ঘের নেতারা। সেই কাজ প্রধানত গত ১২ মে থেকে শুরু হয়েছে সঙ্ঘের আইটি সেলের মাধ্যমে। সমাজমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে নাম গোপন করে, বেনামে নানা অ্যাকউন্ট তৈরি হয়েছে গত কয়েকদিনে। যারা বেছে বেছে বামপন্থী আন্দোলনের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের আক্রমণ করছে। যারা দেশের পররাষ্ট্র সচিবের মেয়েকেও নোংরা ভাষায় আক্রমণ করতে দ্বিধা করেনি, তারা বামপন্থী নেতা, কর্মী, সমর্থকদের আক্রমণ করতে ভাষা প্রয়োগে শ্লীলতা বজায় রাখবে, তা হতেই পারে না। তা হয়ওনি। 
বামপন্থীদের প্রচারে, অবস্থানে সঙ্ঘ, বিজেপি সমস্যায় পড়েছে। কারণ, সিপিআই(এম) সহ বামপন্থীরা একদিকে ‘অপারেশন সিঁদুর’কে সমর্থন করেছে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি ভাঙতে হবে, এই দাবি বামপন্থীদের। একইসঙ্গে বামপন্থীরা পহেলগামে ২৬ জন ভারতীয়কে খুন করা সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তি চেয়েছে। রবিবারই সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক এমএ বেবি আগরতলায় বলেছেন,‘‘পহেলগামের হত্যাকারীদের ভারতের হাতে তুলে দিতে পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়াতে হবে।’’ মার্কিন প্রশাসন হস্তক্ষেপ করলে এই দাবি পূরণ হবে না। কারণ, লাদেন সহ সন্ত্রাসবাদীরা বরাবর মার্কিন প্রশাসনের মদত পেয়েছে। স্বভাবতই পহেলগামের সন্ত্রাসবাদীদের ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চাপ বাড়ানোর দাবি সঙ্ঘ, বিজেপি এবং তাদের দোসর তৃণমূল তুলতে পারেনি।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে বামপন্থী কর্মীদের, সমর্থকদের আক্রমণের রাস্তায় নেমেছে সঙ্ঘ।  
সমাজমাধ্যমে তো বটেই, বিভিন্ন এলাকায় বামপন্থী কর্মীদের সম্পর্কে ‘দেশদ্রোহী’ প্রচার ছড়ানো শুরু করেছে সঙ্ঘ, বিজেপি। কিন্তু তৃণমূল সম্পর্কে কোনও কথা তারা বলছে না। লক্ষ্য সেই এক। পাহেলগামে পাকিস্তান থেকে আসা উগ্রপন্থীদের নৃশংসতার পর ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘর্ষের ঘটনাবলীকেও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে নেমেছে আরএসএস। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তাদের কৌশল স্পষ্ট—বামপন্থীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করা। আগামী নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে শুধু বিজেপিই আছে, এই ভাষ্য প্রতিষ্ঠা করা। তৃণমূলের যাবতীয় দুষ্কর্মকে আড়াল করার এই কৌশলে সঙ্ঘের সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাত হয়েছে।
তৃণমূলের কর্মীরা তাই ‘টার্গেট’ নয়। মমতা ব্যানার্জি সহ তৃণমূল নেতারা তাই চুপ করে আছেন। তবে যেহেতু তৃণমূল মার্কিন প্রশাসনের বিশ্বস্ত, ২০১১-র আগে থেকেই তৃণমূলকে নানাভাবে মার্কিন প্রশাসন সাহায্য করেছে, তাই ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘর্ষ থামানোর ক্ষেত্রে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের তারা বিরোধী নয়। ‘কাশ্মীর সমস্যা’ নিয়ে যেভাবে মার্কিন প্রশাসন তাদের এক্তিয়ার, অধিকারের বাইরে গিয়ে, দাদাগিরির ভঙ্গিতে আলোচনা করতে চেয়েছে, তারও বিরোধী নয় মমতা ব্যানার্জির দল। 
কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের এই হস্তক্ষেপের বিরোধী বামপন্থীরা। ১৯৭১ অথবা ১৯৯৯—প্রতিবারই মার্কিন প্রশাসনের হস্তক্ষেপের সোচ্চার বিরোধিতা বামপন্থীরা করেছে। 
সঙ্ঘ, বিজেপি তৃণমূলের এই পরিস্থিতিতে বামপন্থীদের সম্পর্কে কুৎসা প্রচারের যৌথ কর্মসূচির অন্যতম কারণ বামপন্থীদের এই অবস্থানও।

Comments :0

Login to leave a comment