RG Kar Rape

আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন

কলকাতা

কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে রাতে ডিউটিরত তরুণী চিকিৎসকের অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার হলো শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত হয়েছে। তাতে ধর্ষণ করে খুনের ইঙ্গিতই মিলেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি, চেস্ট বিভাগের চিকিৎসক ওই তরুণীর দেহে ১০ জায়গায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। দুটি চোখ, মুখ, ঠোঁট, আঙুলের নখ, বাঁদিকের পা,  পেট, বাঁদিকের গোড়ালি, ডান হাত, গোপনাঙ্গ সহ ১০টি জায়গায় আঘাত মিলেছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে।
তবে ময়নাতদন্তের আগে, এদিন দুপুরে তরুণী চিকিৎসকের মা অভিযোগ করেছেন, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। সহপাঠী থেকে বাকি চিকিৎসকদের দাবি, ওই তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর সবরকম চেষ্টা করলেও ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে খুন বলেই জানা যাচ্ছে। পুলিশ কিংবা হাসপাতালের তরফে এবিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা না হলেও ঘটনাটি নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সন্ধ্যায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে রাজ্য মহিলা কমিশন।     
এদিন সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ আরজি কর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের চার তলায় সেমিনার হল থেকে ওই তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতেও তিনি ‘অন ডিউটি’ ছিলেন। তাঁর বিভাগ তিন তলায়। ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করার পর তিনি বৃহস্পতিবার রাতে সেমিনার হলে পড়াশোনা করতে যান। তার আগে সহকর্মী দুই জুনিয়র চিকিৎসকের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছিলেন।
শুক্রবার মেডিসিন বিভাগে ডিউটিরত এক জুনিয়র চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘সকালে হাসপাতালে এসেই দেখি ভিতরে পুলিশ। এরপরেও কিছু জানতে পারিনি। খানিক পরে মৃতা তরুণী চিকিৎসককে বাড়ি নিয়ে যেতে তাঁদের গাড়ির চালক ওয়ার্ডে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। টানা দেড়দিন কাজের পর এদিন ওই সিনিয়র চিকিৎসকের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। চালকের এদিক সেদিক খোঁজাখুঁজির পর জানা যায় সেমিনার হলের কথা। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর পুলিশ আগেই জানলেও তা চেপে রেখেছিল। সেমিনার হলে কোনও সিসিটিভি নেই।’ 
এদিন চিকিৎসকের মা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে মেয়ের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘রাত ১১টায় কথা হয়েছে। তখন ওরা খাবার অর্ডার করেছিল। আমায় বলল, তোমরাও খেয়ে নাও। তার পর কোনও কথা হয়নি। ওই শেষ।’’ চিকিৎসকের মায়ের দাবি, ‘‘আমার মেয়েটাকে খুন করে ফেলেছে এরা। আমার এই একটা মাত্র মেয়ে। অনেক কষ্ট করে ডাক্তার করেছিলাম। লোকের সেবা করতে এসে নিজেই খুন হয়ে গেল।’’
মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর পর হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জুনিয়র চিকিৎসক থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসকরা মহিলা চিকিৎসকের ওই নৃশংস খুনের প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে যখন কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের উপস্থিতিতে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে, তখনই আরজি কর হাসপাতালের রেসিডেন্সিয়াল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে ডাঃ আরিফ আহমেদ নস্কর বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন, ‘‘হাসপাতালের ‘ওই সিনিয়র ডিউটি স্টাফ’কে মার্ডার করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, ‘‘ওই চিকিৎসক টানা ৩৬ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছিলেন।’’ 
হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডাঃ সন্দীপ ঘোষ এদিন ‘তদন্ত চলছে’ বলে দায়সারা বিবৃতি দিলেও অ্যাসোসিয়েশনের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় তাদের দাবির কথা। ঘটনাটির বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের পাশাপাশি মহিলা পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসক, বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ময়না তদন্ত করার দাবি করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ভিডিওগ্রাফিও করার কথা বলা হয়। আরজি কর হাসপাতালে অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিশেষ ব্যবস্থায় ‘মেডিকোলিগাল অটোপসি’ করার দাবিও তোলা হয়। 
এই দাবি না মানা পর্যন্ত ওই তরুণী চিকিৎসকের দেহ ছাড়া হয়নি। জরুরি বিভাগের মধ্যে লাগাতার বিক্ষোভে সরব থাকেন জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসকরা। শেষে দাবি মেনে ময়নাতদন্ত করতে বিকাল গড়িয়ে যায়। তবে এদিন ময়নাতদন্ত শুরু হতেই মহিলা চিকিৎসকের মা-বাবা ও পরিজনদের হাসপাতাল ছাড়তে দেখা গিয়েছে। জুনিয়র চিকিৎসক থেকে সিনিয়র চিকিৎসকরা ডিউটিরত চিকিৎসকদের নিরাপত্তার অভাব নিয়ে অভিযোগ করে চলেন।
সকালে চিকিৎসকের ওই রহস্যজনক মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই উত্তাল হয়ে উঠে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ। মৃত্যুর প্রতিবাদে হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন’র কর্মবিরতির জেরে এদিন বেলার দিকে পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যায়। এরই মধ্যে হাসপাতালের অধ্যক্ষ, সুপার, পুলিশ কমিশনারের দফায় দফায় বৈঠক চলে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে একপ্রস্থ, পরে জুবিলি বিল্ডিংয়ে বৃহস্পতিবার রাতে জরুরি বিভাগ ও অন্যত্র ডিউটিরত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মীদের ডাকা হয়। চলে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ। তবে রাত পর্যন্ত কাউকে আটক করার খবর মেলেনি।
ঘটনার তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটির করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আরজি কর হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের প্রফেসর ডাঃ অপূর্ব বিশ্বাস, ওই বিভাগেরই অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাঃ রীনা দাস এবং এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল’র ফরেন্সিক বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাঃ মলি ব্যানার্জি রয়েছেন কমিটিতে। তদন্তের পর রিপোর্ট দেবে স্বাস্থ্য দপ্তরকে। এমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের যখন এই সব বৈঠক চলছে, তখন হাসপাতাল চত্বর জুড়ে শুরু হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিক্ষোভ। সেখানে এই ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। দফায় দফায় আরজি কর হাসপাতালের সামনের রাস্তা অবরোধ করা হয়। বিক্ষোভের সময় অনেক মুমূর্ষু রোগী নিয়ে হাসপাতালে আসা অ্যাম্বুলেন্স ভিতরে ঢুকতে পারেনি। পুলিশের তরফে রাস্তা থেকেই অন্য সরকারি হাসপাতালের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় ওই সব অ্যাম্বুলেন্সকে। দুপুর থেকে চলতে থাকা বিক্ষোভ আর কর্মবিরতির জেরে বিপাকে পড়ে যান সেখানে থাকা রোগী ও তাঁদের পরিজনরা। 
 

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment