Electoral Bonds

এবার কমিশন বলল, বন্ড-তথ্য প্রকাশ করা হবে সময়ের মধ্যেই

জাতীয়

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো নির্দিষ্ট সময়ে স্টেট ব্যাঙ্ক নির্বাচনী বন্ডের তথ্য নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়ার পর বুধবার নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, যথা সময়ে বন্ড-তথ্য প্রকাশ করা হবে। এদিন জম্মুতে এক অনুষ্ঠানে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, এসবিআই থেকে যাবতীয় বন্ড-তথ্য নির্বাচন কমিশন পেয়েছে। তা যথা সময়ে প্রকাশ করা হবে। উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসবিআই বন্ড-তথ্য মঙ্গলবার বেলা পাঁচটার আগেই নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট একইসঙ্গে আগামী শুক্রবারের মধ্যে (১৫ মার্চ) নির্বাচন কমিশনকে সেই তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশও দিয়েছিল। ফলে শুক্রবার বন্ড-তথ্য প্রকাশ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এখন রাজীব কুমারের এদিনের কথা মতো যথাসময়ে সেই তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় কি না, তা দেখার। এদিকে এসবিআই এদিন সুপ্রিম কোর্টকে আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করা হয়েছে বলে হলফনামা পেশ করে জানিয়ে দিয়েছে।
এদিন এসবিআই’র বন্ড-তথ্য পেশ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় সিপিআই(এম) নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, দেখা গেল, মাত্র দু’দিনে বন্ড গোনা হয়ে গেল। এসবিআই প্রথমে বন্ড-তথ্য গোনার জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টে তাদের আবেদন খারিজ করে দেওয়ার মাত্র এক দিনের মধ্যেই তারা গোনা শেষ করে নির্বাচন কমিশনে তা জমা দিয়ে দিল। তাহলে সময় চাওয়া নিশ্চয়ই ইচ্ছাকৃত দীর্ঘসুত্রিতা ছিল? আসলে এটা ছিল বন্ড-তথ্য গোপনে মোদী সরকারের বেপরোয়া চেষ্টা। নির্বাচনের নামে যে বিপুল অর্থ দলীয় তহবিলে তোলা হয়েছে, সেই ক্ষতিকর আর্থিক দাপটের তথ্য গোপনে মরিয়া মোদী সরকার।  
এদিকে এসবিআই বন্ডের যে যে তথ্য পেশ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনকে তা চিঠিতে বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দিয়েছে। জানা গিয়েছে, এসবিআই মঙ্গলবার সিলবন্ধ খামে ও পেন ড্রাইভে পিডিএফ ফরমাটে সব বন্ড-তথ্য নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে। বন্ড-তথ্য নিয়ে সিল বন্ধ খামে আলাদা করে পেন ড্রাইভের পাসওয়ার্ড পাঠানো হয়েছে। এসবিআই নির্বাচন কমিশনকে বন্ড-তথ্য সংক্রান্ত চিঠিতে জানিয়েছে, ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোটি ২২ হাজার ২১৭টি বন্ড বিক্রি করেছে এসবিআই। এদিকে নিয়ম ছিল, বন্ড ১৫ দিনের মধ্যে ভাঙানো না হলে সেই বন্ডের টাকা চলে যাবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। এসবিআই জানিয়েছে, ১৮৭টি বন্ড সময়মতো না ভাঙানোয় তার টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা পড়েছে। বাকি ২২ হাজার ৩০টি বন্ড বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভাঙিয়ে নিয়েছে। এসবিআই’র চেয়ারম্যান দীনেশ কুমার খাড়া সুপ্রিম কোর্টে হলফনামায় জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো তথ্যে বন্ড কেনার তারিখ, বন্ডের ক্রেতার নাম, বন্ডের টাকার অঙ্ক (ডিনোমিনেশন) এবং বন্ড গ্রহীতা রাজনৈতিক দলগুলির নাম, তাদের বন্ড ভাঙানোর তারিখ এবং তার ডিনোমিনেশন উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে দুই দফায় বন্ড-তথ্যকে সাজানো হয়েছে বলে হলফনামায় জানিয়েছে এসবিআই। প্রথম ধাপে দেখানো হয়েছে, ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিলের মধ্যে মোট ৩ হাজার ৩৪৬টি বন্ড বিক্রি হয়েছে। তার মধ্যে ১ হাজার ৬০৯টি বন্ড ভাঙানো হয়। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল লোকসভা ভোট শুরু হয়। দ্বিতীয় ধাপে দেখানো হয়েছে, ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার ৮৭১টি বন্ড বিক্রি হয়। তার মধ্যে ২০ হাজার ৪২১টি বন্ড ভাঙানো হয়েছে। ২০১৯ এবং ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটকে ঘিরে বন্ড বিক্রির তুলনা করলে দেখা যাবে, ২০১৯ সালের তুলনায় আসন্ন লোকসভা ভোটের জন্য বন্ডের বিক্রি ছয় গুণ বেড়েছে। বন্ডের বড় অংশের টাকা গিয়েছে শাসক দল বিজেপি’র কোষাগারে। দ্বিতীয় স্থানে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেই। রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, যে দলের বিরুদ্ধে রাজ্যে বেআইনি টাকা পাচার ও লোপাটের ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। তাদের  বিরুদ্ধে নানা ভুয়ো বা শিখণ্ডী সংস্থার মাধ্যমে টাকা পাচারের অভিযোগও রয়েছে। নির্বাচন কমিশন বন্ড প্রকল্পের বিরোধিতা করে শিখণ্ডী সংস্থার মাধ্যমে টাকা পাচারের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছিল।

Comments :0

Login to leave a comment