শারদীয়া ১৪৩১
মণ্ডা মিঠাই
নতুনপাতা
ইতিহাসের আলোকে উৎসব সংখ্যা
পল্লব মুখোপাধ্যায়
উৎসব সংখ্যা বলে একসময় তেমন কিছু ছিল না। উৎসবের ছুটি কাটানোর সমান্তরালে
উৎসব সংখ্যার পাতায় পাতায় পাঠকের মগ্ন চোখ। উৎসব সংখ্যার কী রমরমা, নিছক
পড়া নয় বরং গোগ্রাসে গেলার জন্য কী না আকুলিবিকুলি। আসুন, ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে
উৎসব সংখ্যার পুরোনো দিনের কথা খোঁজা যাক।
১৯২৪ সালের 'প্রবাসী'-র বিজ্ঞাপন বলছে, ‘আশ্বিনের প্রবাসী অন্যান্য সংখ্যা
অপেক্ষা বেশি ছাপা হইতেছে’। 'ভারতবর্ষ' ছিল মাসিক পত্রিকা। শারদীয় সংখ্যা বলে
আলাদা করে প্রকাশিত হয়নি। তবে উৎসবের মাসের পত্রিকাটি হত একটু বেশি পৃষ্ঠার।
বাঙালির প্রথম শারদ সংখ্যা প্রকাশ করেছিলেন কেশব চন্দ্র সেন। 'ভারত সংস্কার
সভা' তখন বিখ্যাত সাপ্তাহিক 'সুলভ সমাচার' প্রকাশ করত। সিদ্ধান্ত হল, ১২৮০
বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৮৭৩ সালের উৎসবে তাঁরা একটি 'ছুটির সুলভ' প্রকাশ করবেন।
উৎসব নয়, উৎসবের ছুটি ছিল এই সংখ্যার উপলক্ষ্য। সে বছর পয়লা আশ্বিন
উৎসব সংখ্যার প্রকাশ উপলক্ষে প্রকাশিত প্রথম বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, 'ছুটির
সুলভ। আগামী ছুটি উপলক্ষ্যে সুলভের বিশেষ একখণ্ড বাহির হইবে। উত্তম কাগজ,
উত্তম ছাপা। দাম কিন্তু ১ পয়সা। মজা করে পড়িতে পড়িতে ঘরে যাও। একটি পয়সা
দিয়ে সকলের কিনিতেই হইবে। দেখো যেন কেউ ফাঁকি পড়ো না।'
প্রথম পূর্ণাঙ্গ শারদীয়া প্রকাশ করে 'ভারতবর্ষ'। ১৯১৩ সালের কার্তিক সংখ্যা ছিল
প্রথম শারদীয়া সংখ্যা। ১৩২০ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসের ওই সংখ্যায় নানান ছবি ও
গুণী লেখকদের লেখা সমৃদ্ধ ২০০ পাতার বই প্রকাশিত হয়।
১৯২২ সালের মাসিক 'বঙ্গবাণী' পত্রিকায় উৎসবের সময় শরৎচন্দ্রের 'মহেশ'
প্রকাশিত হয়। আবার ১৯২৫ সালের মাসিক 'বসুমতী' পত্রিকাটি উৎসব সংখ্যা হিসেবে
প্রকাশিত হয়। কিন্তু তখনও পর্যন্ত উৎসব সংখ্যা হিসেবে আলাদা কোনও বই
প্রকাশিত হয়নি। ১৯২৫ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত এই তিন বছর 'বার্ষিক বসুমতী'
প্রকাশিত হয়েছিল যার মলাটে লেখা থাকত 'শারদীয়া' এই কথাটি।
এরপর ১৯২৬ সালে পৃথক উৎসব সংখ্যা প্রকাশিত হয়। দাম ছিল ২ আনা। এই উৎসব
সংখ্যাটি হলুদ রঙের একটু মোটা কাগজের মলাট বিশিষ্ট | মলাটে কোনও ছবি ছিল না।
পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৫৪টি। তবে মলাটের ওপর অংশটি ছিল লাল কালিতে ছাপা। আবার,
১৯২৬ সালেই ঠাকুরবাড়ির পত্রিকা 'ভারতী'-তে উৎসব সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। দাম
ছিল ১ টাকা।
সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার-এর সম্পাদনায় ১৯৩৫ সালে প্রথম শারদীয়া প্রকাশ করে
'আনন্দবাজার'। প্রাবন্ধিকদের তালিকায় ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র রায়, যদুনাথ সরকার
প্রমুখ। বাংলা চলচ্চিত্রের সূচনাপর্ব নিয়ে নরেন্দ্র দেব-এর একটি প্রবন্ধও ছিল ওই
সংখ্যায় | ১৯৩৯ সালে শারদীয়া 'আনন্দবাজার'-এ প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথ-এর বড়
গল্প 'রবিবার'। ওই সংখ্যাতেই ছাপা হয় প্রথম উপন্যাস মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর
'শহরতলী'। ১৯৪০ সালের শারদীয়া 'আনন্দবাজার'-এ প্রকাশিত হয় উপন্যাস হিসেবে
রবীন্দ্রনাথ-এর 'ল্যাবরেটরি'।
Comments :0