Biman Bsu Adhir Chowdhury

আসন সমঝোতার সুফল মিলবে, বলছেন বিমান বসু-অধীর চৌধুরী

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

রবিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বিমান বসু ও অধীর চৌধুরী।

দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধান রক্ষায় এবং রাজ্যকে তৃণমূলের দুর্নীতি দুষ্কৃতীরাজ থেকে মুক্ত করতে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের মধ্যে যে নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছে তার সুফল লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে নিশ্চিতভাবে দেখা যাবে বলে একই সঙ্গে জানালেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। রবিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে অধীর চৌধুরীর আমন্ত্রণে একটি সাংবাদিক বৈঠকে যোগ দেন বিমান বসু, দু"জনে একই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে বাম কংগ্রেসের বোঝাপড়ার সাফল্য নির্বাচনী ফলাফলেই স্পষ্ট দেখা যাবে।
বিমান বসু বলেছেন, ‘মিডিয়া তাদের প্রচারে দেখাচ্ছে যেন এরাজ্যে তৃণমূল বনাম বিজেপি লড়াই হচ্ছে। কিন্তু লড়াই আসলে তিন পক্ষের মধ্যে হচ্ছে এবং বাম কংগ্রেসের সাফল্য ভোটের ফলাফলেই দেখা যাবে। বাম কংগ্রেসের মধ্যে বোঝাপড়া এবার উন্নততর হয়েছে। প্রথম দফার নির্বাচন থেকেই যৌথ সভা মিছিল হয়েছে, সাত দফা পর্যন্তই এভাবে সর্বত্র বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের যৌথ প্রচার হবে।’ 
বাম কংগ্রেস কত আসন প্রত্যাশা করছে? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘যত বেশি সম্ভব আসন জেতার জন্যই আমরা লড়াই করছি। তৃণমূল এবং বিজেপি’ও বুঝে গেছে ওদের হাল ভালো নয়, তাই বেপরোয়া হয়ে গেছে।’ মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি বহরমপুরে হারলে রাজনীতি থেকে ছুটি নিয়ে নেবো। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি বলুন, বহরমপুরে তৃণমূলের হার মানে মমতা ব্যানার্জির হার।’
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের যৌথ লড়াইয়ের গুরুত্ব উল্লেখ করে বিমান বসু বলেছেন, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধান বাঁচাতেই বিজেপি’কে হারাতে হবে এবং এরাজ্যে সেই বিজেপি’কে হাত ধরে নিয়ে এসেছে যে তৃণমূল তাকেও হারাতে হবে। মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল যে বিজেপি’র জোটসঙ্গী ছিল, বাজপেয়ী মন্ত্রিসভায় মমতা ব্যানার্জি রেলমন্ত্রী ছিলেন, এমনকি এবারের নির্বাচনেও তৃণমূলের প্রতীকে অনেক বিজেপি’র প্রার্থীরা লড়ছেন সেটা ভুলিয়ে দেওয়া যাবে না। চোরের আবার গর্জন কীসের? একেক রাজ্যের বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী ইন্ডিয়া ব্লকের শরিকরা লড়াই করছেন, সেই অনুযায়ী এরাজ্যে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস আসন সমঝোতা করে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। 
পৌর ও পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো ভোট লুটের কায়দায় তৃণমূল যে লোকসভা নির্বাচনে সুবিধা করতে পারবে না সেকথা উল্লেখ করে অধীর চৌধুরী বলেছেন, পুলিশকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস চালিয়ে এবারও জিততে চাইছে তৃণমূল। কিন্তু এবারের নির্বাচন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে হচ্ছে। আগে থেকেই আমরা তাদের কাছে ডেপুটেশন দিয়েছি, তারা আশ্বাস দিয়েছে ভোটারদের অধিকার নিশ্চিত করবে। আমরাও তাই ভোটারদের বলছি, পুলিশ আর গুণ্ডা দিয়ে তৃণমূল এবারের ভোটকে প্রহসনে পরিণত করতে পারবে না। একটা বুথও লুট করতে দেবো না। বারেবারে ঘুঘু ধান খেয়ে যেতে পারবে না। 
অধীর চৌধুরী একথাও বলেন, তৃণমূল বিজেপি’ও বুঝে গেছে হাল ভালো না, তাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মোদীকে তাই দৌড়ে বেড়াতে হচ্ছে আর চারশো সিটের গল্প বলতে হচ্ছে। আর তৃণমূলকে আমাদের মিছিলে প্রচারে বাধা দিতে হচ্ছে। 
বাম কংগ্রেস বিজেপি’র সঙ্গে সমঝোতা করেছে বলে মমতা ব্যানার্জি যে প্রচার করছেন সেই প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে অধীর চৌধুরী বলেছেন, ইতিহাস জানে বাম এবং কংগ্রেস কখনো সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপোষ করেনি। মমতা ব্যানার্জি করেছেন, বিজেপি’র জোট সঙ্গী ছিলেন, ওঁর জন্যই বাংলায় আরএসএস’এর শাখা চারশো থেকে বারো হাজার হয়েছে।
অধীর চৌধুরীর পালটা প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রী আগে বলুন যে কী এমন ঘটলো যার জন্য তিনি নীতিশ কুমারের মতো পালটি মেরে ইন্ডিয়া থেকে পালিয়ে গেলেন? আর বিজেপি কেন ডায়মন্ড হারবারে অনেক লড়াইয়ের কথা বলেও শেষপর্যন্ত খোকাবাবুকে জেতানোর জন্য সহজ প্রার্থী দিল? আমি এখনই বলে রাখছি, আগামী দিনে বাম কংগ্রেস এরাজ্যে ভালো ফল করলেই তৃণমূল তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। তখন রাজ্যে সরকার টিকিয়ে রাখতে তৃণমূল বিজেপি জোট সরকার দেখা গেলেও অবাক হবেন না। 
মমতা ব্যানার্জি বিজেপি’র কাছে আত্মসমর্পন করেছেন বলে দাবি করে অধীর চৌধুরী বলেছেন, হেমন্ত সোরেন এবং কেজরিওয়াল জেলে গেছেন। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি তাঁর ভাইপোকে তিহার জেলে পাঠাতে চান না, তাই রাজভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, কেবল গল্প করেছেন। আসলে আত্মসমর্পন করেছেন বিজেপি’র কাছে। ইডি সিবিআই’র ভয়ে খোকাবাবু এখন ধৌত হচ্ছেন মোদীর ওয়াশিং মেশিনে। 
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করে অধীর চৌধুরী বলেছেন, প্রথম ইউপিএ সরকারের মতো আবারও মানুষের অধিকারকে আইনী স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কাজের অধিকারকে, কৃষি ফসলের সহায়ক মূল্যকে আইনী বাধ্যতামূলক করা হবে। গরিব পরিবারের একজন করে মহিলাকে বছরে ১ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে

Comments :0

Login to leave a comment