MD SELIM

উত্তরকন্যায় পুলিশের অন্যায়ের নিন্দা, বৃহত্তর বাম ঐক্যের প্রস্তুতি নিয়েও বললেন সেলিম

রাজ্য জেলা

জলপাইগুড়ি জেলা সিপিআই(এম) দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম ও পীযুষ মিশ্র।

দাঙ্গা করলে ধরে না পুলিশ। কাজ চাইলে সেই পুলিশই নির্দয়ভাবে মারে যুবদের। উত্তরকন্যা অভিযানে পুলিশের আক্রমণের তীব্র সমালোচনায় একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 
শনিবার জলপাইগুড়িতে সিপিআই(এম) জেলা কমিটির সভায় যোগ দেন তিনি। সেখানেই সাংবাদিক সম্মেলন করেন। ২০২৬’র নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে বক্তব্য জানান তিনি।  স্বচ্ছ ভোটার তালিকা, আর জি কর কাণ্ডে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কেও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। 
শুক্রবার শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যা অভিযানে ডিওয়াইএফআই নেতা কর্মীদের ওপর বর্বর পুলিশী আক্রমণেরও কড়া প্রতিবাদ জানান সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ অন্যায় আচরণ করেছে। একদিকে রাজ্যজুড়ে যেখানে বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায় উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে। দাঙ্গা করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সেখানে পুলিশ নিষ্ক্রিয়। অন্যদিকে যারা কাজ চাইছে, যারা উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন চাইছে, তাদেরকে চারদিক দিয়ে ঘিরে মারা হচ্ছে। অনেকেই গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। কিন্তু তাদের দমানো যায়নি। গ্রেপ্তার করেও পুলিশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে শেষে। কোন প্রয়োজন ছিল না টিয়ার গ্যাস চালানোর, লাঠি চালানোর, জল কামান প্রয়োগ করার।’’ 
সেলিম বলেন জলপাইগুড়িতে লোকসভায় সিপিআই(এম) প্রার্থী ছিলেন দেবরাজ বর্মন। তাঁকেও আঘাত করেছে পুলিশ। নির্দয়ভাবে মেরেছে। গোটা রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে, আজও হবে। 
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআই(এম) এবং বাম আন্দোলনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  ‘‘আমাদের রাজ্য সম্মেলন থেকে বার্তা দিয়েছি। ২৫ ফেব্রুয়ারি সিপিআই(এম) রাজ্য সম্মেলন শেষ হয়েছে। আমরা বলেছি ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকেই ২০২৬’র প্রস্তুতি নিতে হবে। তার জন্য রাজনৈতিক সংগঠনিক প্রস্তুতি চলছে। আন্দোলন চলছে। আমরা বাম ঐক্যকে দৃঢ় করছি। সেখানে বামফ্রন্টের মধ্যে যে যে দল আছে তাদের শক্তির পুনর্বিন্যাস নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।  বামফ্রন্টের বাইরেও যে বাম দলগুলি আছে তাদেরকেও আমরা আহ্বান জানিয়েছি। আমরা সবাই মিলে একটা বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এরপরও বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে যারা থাকবে তাদের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা হবে।’’ সেলিম বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের মানুষকেও বলছি যে বিজেপি এবং তৃণমূলের মায়া ত্যাগ করে আসুন। সবাইকে নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করব।’’
আর জি কর কাণ্ড প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী বলে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি যেটা বলবে সেটাই ঠিক। সুতরাং সিবিআই কী করবে, সে তো কেন্দ্রের মোদীর কথামত চলছে। তদন্ত যখন চলছে, আন্দোলন চলছে, তখনই আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলে গেছেন রাজ্য সরকার যা বলবে তাতেই আমাদের সায় আছে।’’
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। ওষুধের ছাড়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকে কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারই। কেন্দ্রের ড্রাগ ল্যাবরেটরি আছে, রাজ্যের ড্রাগ ল্যাবরেটরি আছে, ড্রাগ কন্ট্রোলও আছে। তারপরও দেখা যাচ্ছে এ ধরনের ভেজাল ওষুধ ছাড়পত্র পাচ্ছে। কারণ বিজেপি এবং তৃণমূল দুই দলই নির্বাচনী বন্ডে ওষুধ সংস্থাগুলির থেকে শয়ে শয়ে কোটি টাকা নিয়েছে। তার বিনিময়ে নিম্নমানের ওষুধ, ভেজাল ওষুধ, যা মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর, তার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। 
সেলিম বলেন, ‘‘জাল স্যালাইনে মারা গেছেন মানুষ। জলপাইগুড়ি জেলায় এরকম ঘটনা ঘটেছে। আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। মেদিনীপুর থেকে জলপাইগুড়ি, ভেজাল ওষুধ বা স্যালাইনে ক্ষতি হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের। তার জন্য বিজেপি এবং তৃণমূল, দু’দলই দায়ী। আমরা  দু’দলেরই দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’’ 
ভোটার তালিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ ভোটার তালিকা এবং ভোটে কারচুপি মহারাষ্ট্র, হরিয়ানায় এবং দিল্লি নির্বাচনে আমরা দেখেছি। যাতে নির্বাচনে কারচুপি না হয়, মানুষের মত প্রতিফলিত হয়, তার জন্য আমরা আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত করেছি।’’ 
সেলিম এই প্রসঙ্গেই বলেন, ‘‘যখন মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, দিল্লি নির্বাচনে কারচুপি যখন সামনে চলে এসেছে তখন ঝাঁপি থেকে আরএসএস মমতাকে বার করেছে। মমতা তখন বলছেন এখন ভুতুড়ে ভোটার, ভোটার তালিকার কথা। বলছেন, অন্য রাজ্যের ভোটার ঢুকে পড়েছে। আমরা চাই ত্রুটিমুক্ত ভোটার লিস্ট হোক। মৃত ভোটারদের তালিকা আমরা গত ১০ বছরে বারবার দিয়েছি। কিন্তু কমিশন বলেছে ডেথ সার্টিফিকেট জোগাড় করে দিতে। পঞ্চায়েত বা পৌরসভায় মৃত্যু নথিভুক্ত হয়। তাহলে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-য় সহজেই তথ্যটাকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন বা রাজ্য প্রশাসন ভোটার তালিকাকে ত্রুটিমুক্ত করতে পারে।’’
সিপিআইএম জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক পীযূষ মিশ্র বলেন, 
‘‘মানুষের যে অধিকার হরণ হচ্ছে সেগুলো নিয়েই জলপাইগুড়ি জেলা ব্যাপী সর্বত্র আন্দোলন শুরু হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা খুবই খারাপ। পুলিশের একটা অংশ চাইছে এই দুর্নীতি চালিয়ে যেতে। শুধু প্রান্তিক মানুষ নয় মধ্যবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ এবং তাদের বাড়ির ছেলেরাও এর সম্মুখীন হচ্ছে।’’

Comments :0

Login to leave a comment