Sitaram Yeachury

‘এক ভোট’ গণতন্ত্র-বিরোধী ধারণা: ইয়েচুরি

জাতীয়

 ‘এক-দেশ, এক-ভোট’ ব্যবস্থা একেবারেই অগণতান্ত্রিক এবং অবাস্তব ধারণা। যা ফের গোটা দেশে জটিলতা তৈরি করবে। এই ধরনের ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে গোটা দেশে একসঙ্গে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন করতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকেছে মোদী সরকার। কেন্দ্রের এই উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করে একথা বললেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। রবিবার ট্যুইট করে তিনি আরও বলেন, এসবের মধ্য দিয়ে চমক দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। কিন্তু বাবা সাহেব আম্বেদকার দেশের প্রতিটি মানুষের একই অধিকারের কথা বলেছিলেন। আমরা কখনই  তাঁর এই বক্তব্য থেকে সরে আসব না। মানুষের মধ্যে বিভাজন করে, বিভ্রান্ত করে এবং বিদ্বেষ ছাড়ানোর বিজেপি’র অপচেষ্টার কোনও প্রভাব ফেলতে দেওয়া হবে না। এর আগে মোদী সরকারের এই অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আরও একটি ট্যুইট করে বলেন, আইনসভায় কোনও সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলার পরও তাকে ক্ষমতায় রেখে দেওয়াটাই আইন বিরুদ্ধ কাজ। সরকারকে নির্বাচিত করার অধিকার মানুষের হাত কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন চাপিয়ে দেওয়াও সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ।           
তাঁর সঙ্গেই নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের নামে মোদী সরকারের এই বিতর্কিত পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনায় সরব হয়েছেন রাহুল গান্ধী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল সহ একধিক বিরোধীদলগুলির শীর্ষ নেতারা। 
মারাঠি দৈনিক লোকসত্তার একটি অনুষ্ঠানে ইয়েচুরি বলেন, প্রথমেই সরকারের উচিত সংবিধানের ৩৫৬ ধারা বাতিল করা। কারণ কেন্দ্রকে রাজ্য সরকারের ওপর কর্তৃত্ব ফলানোর ক্ষমতা দিয়েছে সংবিধানের এই ধারা। তিনি বলেন, ‘এক-দেশ, এক-ভোট’ ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও আসন্ন সংসদের বিশেষ অধিবেশনের কর্মসূচিতে এই বিষয়ে কোনও কথা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু এই ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যেই একটি কমিটিও ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। কিন্তু ভারতের মত দেশের এই ধরনের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অবাস্তব।
ওই সভাতে ইয়েচুরি আরও বলেন, এখন আর সেই দিন নেই যখন কোনও একটি রাজনৈতিক দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গঠন করবেই এমন নিশ্চয়তা আছে। কিন্তু কোনও দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ত্রিশঙ্কু অবস্থা তৈরি হলে এক সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট করানোর ব্যবস্থা আরও সমস্যা বাড়াবে। কোনও রাজনৈতিক দল ভোটের আগে অন্য কোনও দলের সঙ্গে জোট না-ও করতে পারে। এমনকি সরকারি নীতি বা অন্যান্য কারণে টানা পাঁচ বছর ধরে সমর্থন না-ও জানাতে পারে। সেক্ষেত্রে কি রাষ্ট্রপতি শাসন চালু করা হবে? না সংখ্যালঘু হয়ে পড়া ওই সরকারকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে? এই প্রশ্ন তুলে ইয়েচুরি বলেন, গণতন্ত্রে মানুষের ভোটে নির্বাচিত সরকারই ক্ষমতায় থাকে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির মধ্য দিয়ে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাবে। 
এই মুহূর্তে দেশে চালু থাকা নির্বাচনী ব্যবস্থায় ভোটের খরচ কমানো এবং নির্বাচনী বিধির জেরে উন্নয়নমূলক প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এই যুক্তিকে সরাসরি খারিজ করে দিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষের কথায়, যখনই নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হয় সেই সময় থেকেই জল, রাস্তা, বিদ্যুতের মত পরিষেবা চালু করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই কারণে তাঁরা সবসময় ভোটকে স্বাগত জানায়। এমনকি ভোটের কারণে তাঁর আর্থিকভাবে লাভবানও হয়ে থাকে। 
এদিকে, ইয়েচুরির সঙ্গেই এদিন ‘এক-দেশ, এক-ভোট’ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন রাহুল গান্ধী। তিনি মোদী সরকারের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বলেন, এই পদক্ষেপ ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আঘাত হানবে। এতে রাজ্যগুলির সর্বনাশ ডেকে আনবে। রবিবার সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাহুল। মোদীর এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন আপ’র প্রধান নেতা এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। তিনি বলেন ‘এক-দেশ, এক-ভোট’ এর পরিবর্তে গোটা দেশে একই মানের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা সবচেয়ে জরুরি। যেখানে গরিব-ধনী নির্বিশেষে সম মানের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। একই সকলে দেশের সমস্ত মানুষকে উন্নত স্বাস্থ্য পারিষেবার আওতায় আনার বিষয়টিও এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে গোটা দেশ উপকৃত হবে।  

 

Comments :0

Login to leave a comment