সংবিধান এবং গণতন্ত্রকে রক্ষার লক্ষ্যে ছাব্বিশটি দল বিজেপি বিরোধিতায় এক জায়গায় বৈঠক করেছে। সেই তালিকায় সিপিআই(এম) এবং বামপন্থী দলগুলি রয়েছে। আবার তৃণমূল কংগ্রেসও রয়েছে। কিন্তু দেশের ক্ষেত্রে বিজেপি সরকার যা করছে পশ্চিমবঙ্গে সেই একই আক্রমণ চালাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে এই মর্মে ক্ষোভ জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘বিরোধী দলগুলি যে প্রস্তাব নিয়েছে সেটি দেখুন। ছত্রে ছত্রে বামপন্থীদের সঙ্গে তৃণমূলের বিরোধ ধরা পড়বে। সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের লড়াই তৃণমূল এবং বিজেপি দু’দলের সঙ্গেই।’’
১৭-১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে বৈঠক থেকে বিরোধী মঞ্চের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। প্রকাশ করা হয়েছে তার প্রস্তাব। বলা হয়েছে, ‘‘সংবিধানের ওপর এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারগুলির সাংবিধানিক অধিকারের ওপর আক্রমণ অব্যাহত। তার মোকাবিলা করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’’
বলা হচ্ছে, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সমানে দুর্বল করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।’’ বলা হচ্ছে, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে বিজেপি সরকার তার অধীনস্থ সংস্থাগুলির নির্লজ্জ অপব্যবহার চালাচ্ছে। আমাদের গণতন্ত্রকে দমন করছে।’’
রাজ্যগুলিকে দখল করতে বিজেপি’র প্রয়াসের সঙ্গে পঞ্চায়েত বা পৌরসভা দখলে তৃণমূলের বেপরোয়া মনোভাব দ্রুত চলে আসছে তুলনায়। বিরোধীদের ওপর ধারাবাহিক আক্রমণে এ রাজ্যে তৃণমূলও প্রশাসনকে ব্যবহার করছে নিয়মিত। ‘গাঁজা কেস’ দেওয়ার হুমকি তৃণমূলের মাতব্বরদের প্রকাশ্যে দিতে শোনা গিয়েছে।
সেলিম বলেছেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেভাবে ভোট লুট করা হলো, গণনাকেন্দ্রেও চলল লুট। একটিই লক্ষ্য, কিভাবে তৃণমূল জিতবে আর বিজেপি’কে দ্বিতীয় করবে। ঝোপেঝাড়ে ফেলে দেওয়া ব্যালট উদ্ধার হচ্ছে। সেখানে বিজেপি’র প্রতীকে ছাপ নেই। তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধীদের পক্ষে ছাপ রয়েছে।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে বিজেপি শুয়ে পড়েছে। জাগানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল।’’
লোকসভায় বুধবারই অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সেলিম এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘দেশে একের পর এক হিংসায় প্রধানমন্ত্রী নীরব থাকেন কেন, তার জবাব চাইবেন বিরোধীরা। নীরব মোদীকে এবার সরব হতে হবে, এটাই জয়। সেই সঙ্গে বোঝা যাবে কে কোথায় দাঁড়িয়ে।’’
তৃণমূলকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘‘সংসদীয় স্তরে তাদের এক নেতা ভুবনেশ্বরে বন্দি ছিলেন। রোজভ্যালি চিটফান্ড কান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বন্দি থাকার পর ছাড়া পান তিনি। এই নেতার কাজ হচ্ছে বিজেপি’র বিরুদ্ধে বিরোধীরা একজোট হলেই তাকে ভেস্তে দেওয়া। সিএএ বিল, তিন তালাক বিল, লোকপাল বিল, বিচারপতির ইমপিচমেন্ট- সর্বদা দেখা গিয়েছে তৃণমূলের বেশ কিছু সাংসদ গরহাজির। এবার অনাস্থায় কী ভূমিকা নেয় তৃণমূল, দেখা যাবে।’’ সেলিম মনে করিয়েছেন যে প্রতিষ্ঠার সময় থেকে আজ পর্যন্ত তৃণমূল কখনও বিজেপি’র আদর্শগত ভিত্তি প্রতিষ্ঠান আরএসএস’র বিচারধারার বিরোধিতা করেনি। আরএসএস’র লক্ষ্য ভারতের সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে ফ্যাসিস্ট হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
Comments :0