Teachers' recruitment scam

দুর্নীতিতে প্রভাবশালী যোগের প্রমাণ লোপাট করছিলেন কাকু

রাজ্য

Teachers recruitment scam

 


নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সাংবিধানিক উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিদের যুক্ত থাকার তথ্য প্রমাণ নষ্ট করার সর্বতো চেষ্টা চালিছেন অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ, পারিবারিক সংস্থার একদা অংশীদার সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’। এমন বিস্ফোরক অভিযোগই এবার সামনে আনল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
যদিও তদন্তকারী সংস্থার দাবি, সেই চেষ্টা সম্পূর্ণ ভাবে সফল হয়নি। সাংবিধানিক শীর্ষ পদে থাকা এমন ব্যক্তিদের এই নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার নথি তথ্য যা তাঁর মোবাইলে ছিল তা ডিলিট করে দেওয়া হয়েছিল ইডি’র তল্লাশি অভিযানের আগেই। যদিও ইডি’র একটি সূত্রের দাবি ইতিমধ্যে সেই ডিলিট করে দেওয়া যাবতীয় নথি উদ্ধার করা গেছে। ২০১৪ সালের টেটে অবৈধভাবে অযোগ্যদের পাশ করিয়ে দেওয়া এবং চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কারবারেই যুক্ত ছিলেন সেই সাংবিধানিক উচ্চ পদে যুক্ত থাকা কয়েকজন ব্যক্তি যাদের সঙ্গে কালীঘাটের কাকুর যোগ ছিল। আর সেই দুর্নীতির বহর কয়েকশো কোটি টাকা। যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন শীর্ষ প্রভাবশালী কয়েকজন। কালীঘাটের কাকু সেই নথি তাহলে কার বা কাদের নির্দেশে নষ্ট করেছিলেন? এবার জেরায় তা জানতে চাইছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।

ইতিমধ্যেও আদালতকেও এই বিষয়ে অবহিত করেছে ইডি। অপরাধীর মনোভাব থেকেই সমস্ত তথ্য, প্রমাণ নষ্টের চেষ্টা চালিয়েছিলে কালীঘাটের কাকু। কাকে আড়াল করতে? উঠছে প্রশ্ন। কালীঘাটের কাকুই জানিয়েছিলেন ২০০৯সাল থেকে অভিষেক ব্যানার্জির অফিসে তিনি কাজ করতেন। তাহলে ভাইপো সাংসদের অফিসের কর্মচারী হিসাবে কোন উচ্চ সাংবিধানিক পদে আসীন ব্যক্তিদের ছবি, মেসেজ, কথোপকথন ডিলিট করেছিলেন কালীঘাটের কাকু? ইতিমধ্যে কালীঘাটের কাকুই সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন তাঁর সাহেব অভিষেক ব্যানার্জি। 
তবে ২০১৪’র প্রাইমারি টেটের ৩২৫জন চাকরিপ্রার্থীর তালিকা যা কুন্তল ঘোষ পাঠিয়েছিলেন তাঁর কাছে, তিনি কার নির্দেশে সেই তালিকা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পাঠিয়েছিলেন? ৩২৫ জনের মধ্যেই একাধিকজন খালি খাতা জমা দিয়েছিল। তাঁদেরই পাশ করিয়ে দেওয়া এবং পরবর্তী নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য কুন্তল ঘোষ ৩কোটি ২৫ লক্ষ টাকা তুলেছিল। ৩২৫জনের সেই তালিকা এরপর মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পাঠান সুজয় ভদ্র। এখানেই ইডি প্রশ্ন তুলছে সুজয় ভদ্র কোনোরকম সরকারি বা দলীয় পদে না থাকলেও মানিক ভট্টাচার্যকে কীভাবে ৩২৫জন অযোগ্যের তালিকা পাঠিয়ে সুপারিশ করেন? তাহলে উনি কি কারো হয়ে এই সুপারিশ করেছেন? কে সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি যার সুপারিশ কালীঘাটের কাকু পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই তৎপরত হয়ে উঠতেন মানিক ভট্টাচার্য?

তবে শুধু কুন্তল নয়, নিয়োগকাণ্ডেই ধৃত আরেক তৃণমূলী ‘সম্পদ’ হুগলী জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু ব্যানার্জির সঙ্গেই কালীঘাটের কাকুর ঘনিষ্ঠ যোগের তথ্য মিলেছে। এখানেও সেই একই চিত্র। শান্তনু ব্যানার্জিও প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিকে সরাসরি নিয়োগের জন্য কালীঘাটের কাকুরই দ্বারস্থ হয়েছিলেন। পার্থ চ্যাটার্জি থেকে মানিক ভট্টাচার্য- যাবতীয় তালিকা এদের দু’জনের কাছ পাঠিয়ে দিয়ে গোটা নিয়োগ দুর্নীতির কারবারে সমন্বয় রক্ষা করতেন কালীঘাটের কাকু। আর সেই দুর্নীতির পরিমাণ কয়েকশো কোটি তা আদালতে সাবমিশনেই জানিয়ে দিয়েছে ইডি।
কালীঘাটের কাকু গভীর জলের মাছ- দাবি ইডি’র। যদিও মিডিয়ার সামনে এমনকি গ্রেপ্তারের আগের মুহুর্ত পর্যন্ত ‘আত্মবিশ্বাস’ দেখালেও ১৪দিনের হেপাজতের প্রথম দিনের জেরাতেই তাঁর রক্ষণ ভেঙে পড়েছে বলে দাবি ইডি’র। তবে এখনও সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এখনও অধিকাংশ বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন কালীঘাটের কাকু। তবে আদালতে জানানোর পরে ইতিমধ্যে খাওয়া দাওয়া শুরু করেছেন। জেরা এড়ানোর কৌশলেই কালীঘাটের কাকু গ্রেপ্তারির পরেই খাওয়া বন্ধ করে দেন। বুধবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিচারক সেই প্রসঙ্গেই কালীঘাটে কাকুকে ভর্ৎসনা করে বলেছিলেন, খুবই বুদ্ধিমানের কাজ করেছেন, তবে এতে কী লাভ হবে, বাইরে তো আপনার পরিবারের লোকেরা চাইবে আপনি তাড়াতাড়ি যাতে বেরোতে পারেন, এতে কী তা সম্ভব! ইঙ্গিত বুঝেই ‘অনশন’ তুলে খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র।

নিজেকে ‘সামান্য’ ব্যক্তি বলে দাবি করা সুজয় ভদ্র অভিষেক ব্যানার্জির পারিবারিক সংস্থা ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’র ডিরেক্টর বনে গিয়েছিলেন। দুবছরের বেশি সময় ধরে ডিরেক্টর ছিলেন। সেই সময় ভাইপো সাংসদও ছিলেন ডিরেক্টর। সেই সময়কার একাধিক লেনদনেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তেই তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুজয় ভদ্রকে কেন ডিরেক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হলো, তার জায়গায় অভিষেক ব্যানার্জির বাবা-মা ও স্ত্রী বোর্ড অফ ডিরক্টর্সে ঢুকেছিলেন। তার পরবর্তীতও আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখছে ইডি। সুজয় ভদ্রের আরেকটি সংস্থা রয়েছে। সেখানেও তিনি ডিরেক্টর ছিলেন। সলিটায়র প্লেসমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড নামে ঐ সংস্থা যদিও নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত শুরু হতেই গুটিয়ে ফেলার জন্য আরওসি’তে চিঠি দিয়েছেন সুজয় ভদ্র। এছাড়াও আরও তিনটি সংস্থার সঙ্গে তাঁর যোগের তথ্য মিলেছে। তবে সরাসরি নয়। সেই সংস্থাগুলির মাধ্যমে বেনামে প্রচুর সম্পত্তি করেছেন। তবে একা নিজের নামে নয়। উচ্চ প্রভাবশালীর পরিবারের সদস্যদের নামেও। নিয়োগ দুর্নীতির টাকাও পার্কিং করা হয়েছিল। এমনকি ধৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু ব্যানার্জির স্ত্রীর কোম্পানির সঙ্গেও আর্থিক লেনদনের তথ্য এসেছে ইডি’র হাতে।

Comments :0

Login to leave a comment