১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নতুন দিল্লি রেল স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে ১৮ জনের মৃত্যুর দায় কার? মৃত ১৮ জনের মধ্যে ১০ মহিলা যাত্রী সহ ৩ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধা আছেন। এছাড়াও, আহত ১৫ জনের মধ্যে তিনজন গুরুতর আহত। তারপরের দিনই আমাদের রাজ্যের আসানসোল রেল স্টেশনেও একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছিল, যার থেকে বোঝা যায় দিল্লির ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণের তেমন ইচ্ছে রেল দপ্তরের নেই। দেশজুড়ে গত ৩ মাস ধরে ভারত সরকার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে কুম্ভ মেলার নাম করে নরেন্দ্র মোদীর পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে ৪৫ কোটি (১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভারতবাসীকে জড়ো করেছেন প্রয়াগরাজের কুম্ভ মেলায়। অনুমান শেষ পর্যন্ত ৬০ কোটি মানুষ আসবেন। যদিও এই সংখ্যা বিজেপি সরকার প্রচারিত, ফলে সংশয়ের অবকাশ থাকেই। অথচ না আছে রেল যাত্রীদের নিরাপদে যাতায়াতে ব্যবস্থা, না আছে সড়ক পথে যাতায়াতের সুষ্ঠু ব্যবস্থা, না আছে প্রয়াগরাজের মেলাপ্রাঙ্গণে উপযুক্ত নিরাপত্তা। এর ফলে এখনও পর্যন্ত নানা দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে শতাধিক মেলায় আগত যাত্রীর। প্রধানমন্ত্রী নিজের পাতা জোড়া ছবি ছেপে সবাইকে কুম্ভ মেলায় আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, অথচ বেহাল যাতায়াত, বেহাল রেল, বেহাল নিরাপত্তা। এর দায়ভার কে নেবে?
দিল্লি রেলস্টেশনে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ভয়াবহ এই ঘটনার কারণ যাত্রীরা ‘প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস’এবং ‘প্রয়াগরাজ স্পেশাল’ এই দুটি ট্রেনের ঘোষণায় বিভ্রান্ত হয়েছিলেন এবং ট্রেন ধরতে না পারার আশঙ্কায় তাড়াহুড়ো করে ফুটওভারব্রিজ পার হতে চেয়েছিলেন। সেদিন অতিরিক্ত চারটি ট্রেন প্রয়াগরাজের দিকে যাচ্ছিল, যার মধ্যে তিনটি ট্রেন অনেক দেরিতে চলছিল। যার ফলে চারটি ট্রেনের সম্মিলিত প্রচুর যাত্রী একই সময়ে স্টেশনে জড়ো হয়েছিলেন। প্রয়াগরাজে যাওয়ার জন্য প্রচুর মানুষের সমাগম এবং রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ক্রমাগত অসংরক্ষিত কামরার টিকিট বিক্রি অব্যাহত থাকায় এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। রেল দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রচুর মানুষ ১৪ নং প্ল্যাটফর্মে প্রয়াগরাজ যাওয়ার ট্রেন ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তা সত্ত্বেও ঐদিন প্রতি ঘণ্টায় প্রয়াগরাজের জন্য প্রায় ১,৫০০ অসংরক্ষিত টিকিট বিক্রি করে এবং স্টেশনে প্রবেশে কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। যাত্রীদের সবকটি প্রবেশপথ দিয়ে স্টেশনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। দিল্লি পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, এই দুঃখজনক ঘটনা ঘটানোর মূল কারণ ছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিশাল একটি ভুল। যে দুটি ট্রেন প্রয়াগরাজের দিকে যাচ্ছিল, তাদের প্রায় একই ধরনের নাম হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। ‘প্রয়াগরাজ স্পেশাল’-এর ১৬ নং প্ল্যাটফর্মে আসার ঘোষণায় ১৪ নং প্ল্যাটফর্মে ‘প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস’-এর জন্য অপেক্ষমাণ হাজার হাজার যাত্রী প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তন করার জন্য ছুটতে থাকেন, যার ফলে ফুটওভারব্রিজ এবং তার সিঁড়িতে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনার দায়ভার রেল দপ্তরেরই। দুর্ঘটনার মূল কারণ ট্রেনের দেরি, স্টেশনে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, কয়েক হাজার মানুষ স্টেশনে জড়ো হওয়ার পরেও টিকিট বিক্রি অব্যাহত রাখা। ভিড় আরও বেড়ে যায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস এবং প্রয়াগরাজ স্পেশাল, যা আগে চলে যাওয়ার কথা ছিল, দেরিতে চলছিল। যার ফলে ১৪ ও ১৫ প্ল্যাটফর্মে বিশাল ভিড় হয়ে যায়। কোনোরকম আগাম সতর্কতা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না নিয়ে রেল দপ্তর এত মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, যিনি সোশাল মিডিয়ায় রিল ভিডিও তৈরি করার জন্য 'রিল মন্ত্রী' উপাধি অর্জন করেছেন, ভারতের ব্যস্ততম রেল স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের মৌলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
The government is responsible
এই মৃত্যুর দায় সরকারেরই

×
Comments :0