হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করা হয় যে, অজুখানা দীর্গদিন পরিষ্কার না হওয়ার কারণে তারা সেটি পরিষ্কার করতে চায়। এর পাশাপাশি হিন্দুত্ববাদীরে পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে জেলা শাসকের উপস্থিতিতে এই কাজ হবে। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে।
হিন্দুত্ববাদীরদের আইনজীবী সুধীর ত্রিপাঠী সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন যে, মসজিদ কমিটি এবং হিন্দুত্ববাদীর মধ্যে আলোচনার পর এই পরিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জেলা শাসকের উপস্থিতিতে। গত বৃহস্পতিবার জেলা শাসকের নেতৃত্বের দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের পর শনিবার অজুখানা পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। জেলা শাসক সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের পর পরিষ্কার করার হচ্ছে।
২০২১ সালে হিন্দু নারীদের একটি দল জ্ঞানবাপী মসজিদে হিন্দু দেবতাদের পূজো করার অনুমতির জন্য উত্তর প্রদেশের একটি আদালতের কাছে যাওয়ার পরে মামলা হয়। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি মসজিদের অজুখানায় যেই পাথরটি রয়েছে তা ফোয়াড়া নয়, তা শিব লিঙ্গ।
বাবড়ি মসজিদ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরপরই আরএসএস সহ উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় বলা হয় যে তাদের পরবর্তী লক্ষ কাশি। বাবড়ি মসজিদ ধ্বংসের সময় বিজেপি আরএসএস স্লোগান তোলে ‘‘ইয়ে তো স্রিফ ঝাঁকি হ্যায়, কাশি মথুরা বাকি হ্যায়।’’
এর আগে আদালতের নির্দেশে যখন মসজিদের ভিডিওগ্রাফি হয় তখন অজূখানার পাথরের ভিডিও আদালতের কাছে জমা পড়ার আগেই বাইরে চলে আসে। সেই নিয়ে বিতর্কও হয়। তারপরই আদালতের নির্দেশে গত দুবছর বন্ধ রয়েছে অজুখানা।
২২ জানুয়ারি ওই উত্তরপ্রদেশেই রাম মন্দির উদ্বোধন। ২৪ জানুয়ারি জ্ঞানবাপী মসজিদের ‘বিজ্ঞানসম্মত সমীক্ষা’-র রিপোর্ট আপাতত প্রকাশ করা হবে কি না সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বারাণসী জেলা আদালত।
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির লাগোয়া এই মসজিদের নিচে মন্দিরের ভিত রয়েছে, এই মর্মেই আদালতে যান একাংশ। তার ভিত্তিতে গত বছরের ২১ জুলাই জেলা আদালত সমীক্ষার নির্দেশ দেয় প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এএসআই’কে।
কয়েকদফায় সময়সীমা পিছানোর পর গত ১৮ ডিসেম্বর রিপোর্ট জমা দিয়েছে এএসআই। কিন্তু অন্তত চার সপ্তাহ প্রকাশ না করার আবেদনও জানিয়েছে বারাণসী জেলা আদালতের বিচারপতির কাছে। শনিবার বিচারপতি জানিয়েছেন ১৯ জানুয়ারি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে মামলার শুনানি রয়েছে। তার পর সিদ্ধান্ত হবে।
২২ জানুয়ারি ভেঙে দেওয়া বাবরি মসজিদের জমিতে রামমন্দিরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পর জ্ঞানবাপীর রিপোর্ট প্রকাশ বিবেচনা করবে জেলা আদালত।
বাবরি মসজিদ-রামমন্দির মামলাতেও হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলি মন্দির ভেঙে মসজিদ গড়ার তত্ত্ব দিয়ে এসেছে। সুপ্রিম কোর্ট রামমন্দিরের পক্ষে রায় দিলেও মন্দির ভেঙে মসজিদ তত্ত্বের কোনও প্রমাণের উল্লেখ করেনি। সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছিল, এই বিতর্ক বরাবরের মতো মিটিয়ে দেওয়া হলো। অন্য উপাসনাস্থলের ক্ষেত্রে ধর্মস্থানের চরিত্র বজায় রাখার আইন কার্যকর থাকবে। বাস্তবে তা হয়নি। জ্ঞানবাপী মসজিদের পাশাপাশি মথুরায় শাহী ঈদগাহ নিয়েও চলছে বিবাদ।
Comments :0