সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে উঠলো চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। নকিলা মণ্ডল সরাসরি খুনের অভিযোগে সরব হলেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক আধিকারিকের বিরুদ্ধে। বিচারের আশায় শরনাপন্ন হলেন বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারের। করলেন লিখিত অভিযোগ। অভিযোগের কপি তুলে দিলেন সংবাদমাধ্যমের কাছে। কী সেই অভিযোগ?
বছর তিরিশের যুবককে আটক করে খুন করা হয় তারপর তার দেহ লোপাট করে দেওয়ার অভিযোগ। অভিযোগ উঠলো বিএসএফের কমান্ডারের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ ৬ মাস ধরে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন একাকি বৃদ্ধা মা। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪পরগনার স্বরূপনগর থানার অন্তর্গত বিথারী হাকিমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দহরকান্দা গ্রামে। নিখোঁজ যুবকের নাম মিলন মন্ডল(৩০)। ইতিমধ্যে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় বা তদন্ত করে ছেলের মৃতদেহ মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হোক এই দাবি নিয়ে বসিরহাট পুলিশ সুপারের পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদে অভিযোগ দায়ের করলেন নিখোঁজ যুবকের মা নকিলা মন্ডল। তিনি অভিযোগ করেছেন গত বছর ২০২৩ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাড়ির কাছে সোনাই নদীর ধারে তার দিনমজুরী করে খাওয়া ছেলে ঘোরাফেরা করছিল। ১১২ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের বিএসএফের কমান্ডার রবীন্দ্র কুমার যাদবের নির্দেশে তাকে আটক করে খুন করা হয়। এরপর তার দেহ লোপাট করে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় দহরকান্দা গ্রামের মানুষ অভিযোগ করছেন মিলন মন্ডলকে বিএসএফ গুলি করে খুন করে দিয়ে তার দেহ লোপাট করে দিয়েছে।
দহরকান্দা গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, ‘‘আমাদের গ্রামে কেউ মেয়ে দেয় না। বা এই গ্রামের মেয়েকে কেউ নেয় না। অর্থাৎ গ্রামের ছেলে মেয়েদের বিয়ে হয় না বিএসএফের অত্যাচারের কারণে।’’
মিলন মণ্ডলের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিএসএফের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করে সিপিআই(এম) নেতা হামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘বিএসএফ এবং স্থানীয় প্রশাসনের দায় এবং দায়িত্ব মিলন মণ্ডলকে খুঁজে বার করা। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি সেই দায় এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে বিএসএফ এবং প্রশাসন। সীমান্ত এলাকা চোরাচালানকারীদের মুক্তাঞ্চল। অথচ সেখানকার বসবাসকারী ভারতীয়রা নিজ ভূমে পরবাসী। বিএসএফের অত্যাচারের কারণে কৃষকরা তাদের জমিতে চাষের কাজ ঠিকমতো করতে পারেন না। ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে গেলে হাজারো কৈফিয়ত দিতে হয়। হাকিমপুর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামের চাইতেও অনেক বেশি দাম জিরো পয়েন্টের ওই গ্রামের দোকানগুলিতে। শুধুমাত্র বিএসএফের কারণে। ভারতের বাসিন্দা হয়ে ভারতে বসে ব্যবসা করতে হলে বিএসএফকে পয়সা দিতে হয়। যার কারণে জিনিসের দাম বাজার ছাড়া বেশি নিতে বাধ্য হয় গ্রামবাসীরা।’’
একই অভিযোগ করেন বিথারী হাকিমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হুমায়ন কবির। তার একটাই দাবি বিএসএফের অত্যাচার বন্ধ হোক। আর সঠিক তদন্ত করে মিলন মণ্ডলের মৃতদেহ খুঁজে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হোক।
স্থানীয় বিজেপির মন্ডলের প্রাক্তন সভাপতি প্রশান্ত সরকার জানিয়েছেন, ‘‘বিএসএফ সাধারণ মানুষের উপরে অত্যাচার করে না। সাধারণ মানুষের উপরে অত্যাচার করে তৃণমূলের লোকজন। আর সবাই পাচার কার্যের সঙ্গে জড়িত। মিলন মন্ডল নামে যুবক নিখোঁজ হয়েছে সেটা আমাদের জানা আছে। তবে তাঁর দেহ পাওয়া যায়নি সেটা তদন্ত করে দেখার বিষয়। বিএসএফের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।’’
এ বিষয় নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মফিদুল হক সাহাজি জানিয়েছেন, ‘‘দীর্ঘ ছয় মাস ধরে মিলন মন্ডলের ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে তার বৃদ্ধ মা প্রশাসনের দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা। এ বিষয় নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের জেলা নেতৃত্ব ও জেলা পরিষদের সভাধিপতির সঙ্গে আলোচনা করে একটা বিহিত ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন নিখোঁজ যুবকের মা নকিলা মন্ডলকে।’’
যদিও এ বিষয় নিয়ে বিএসএফর তরফে কোন সদুত্তর পাওয়া যায় নি। জানা যায় এই ঘটনার পুলিশী তদন্ত চলছে। তাই এই মামলা সম্পর্কে কোন তথ্য বা মন্তব্য করতে তারা চান না।
BSF
বিএসএফ কমান্ডারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ
×
Comments :0