Maldah SFI Rally

স্বৈরাচারী দুই শক্তির থেকে শিক্ষাকে বাঁচানো ডাক ছাত্র সমাবেশে

রাজ্য

মালদহে সমাবেশ শুরুর আগে মিছিল বুধবার। ছবি ফেসবুক থেকে।

সত্যব্রত ভট্টাচার্য

বিজেপি-তৃণমূলের মতো স্বৈরাচারী শক্তির হাত থেকে শিক্ষা, কাজ বাঁচানোর জন্য আরও তীব্র লড়াই লড়তে জেলায় জেলায় তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে হবে। বুধবার মালদহে এসএফআই’র প্রকাশ্য সমাবেশে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক ও এসএফআই’র প্রাক্তন সর্বভারতীয় নেতা মহম্মদ সেলিম একথা বলেছেন। 
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, সাধারণ গরিব মানুষের শিক্ষার অধিকার এবং কাজের অধিকার দুটোরই ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ধর্মের নামে নানা চালাকির আশ্রয় নিয়েছে ওই দুই দল। এখন গণতন্ত্রের বিপন্নতা প্রকট, চরম শোষণের শিকার সাধারণ মানুষ। এর বিরুদ্ধে সমস্ত শক্তিকে এক হয়ে লড়তে হবে। 
প্রশাসনের চূড়ান্ত অসহযোগিতা সত্ত্বেও মালদহে হয়েছে এসএফআই রাজ্য ৩৮তম সম্মেলন। বুধবার হয় প্রকাশ্য সমাবেশ। সকাল থেকেই গোটা মালদহ জুড়ে ছিল সাজো সাজো রব। সমাবেশের আগে এক বিশাল বর্ণাঢ্য মিছিল শহর পরিক্রমা করে। রথবাড়ি মোর থেকে মিছিল শুরু হয়ে রাজমহল রোড, ফোয়ারা রোড হয়ে গৌর রোড, কে জে সান্যাল রোড ধরে ফের ফোয়ারা মোরে এসে মিছিল শেষ হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত অসহযোগিতা থাকায় মেলেনি মাঠের অনুমতি। ফলে সমাবেশের স্থান হয় ফোয়ারা মোড়ে রাস্তার ধারে। এদিন মিছিল ও সমাবেশ চলাকালীন  বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হয়, পুলিশের বাধা আসে বারবার। পতাকা হাতে তরুণ তুর্কি ছাত্রছাত্রীরা এবং মালদহবাসীরা তা প্রতিরোধ করেন। 
মহম্মদ সেলিম বলেন, আমরা এভাবেই রাস্তায় আন্দোলন করবো। কোন বাধা মানবো না। 
তৃণমূল এবং বিজেপি, দু’দলেরই অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী মনোভাবে তীক্ষণ সমালোচনা করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘ বিধানসভায়, সংসদে বাম শূন্য হয়ে গিয়েছে। তার মানে, সেখানে গরিব মানুষের কথা, শিক্ষার কথা, স্বাস্থ্যের কথা, ব্যবসার কথা, বাসস্থানের কথা আর হবে না। সেখানে ধন কি বাত হবে। সেখানে আদানি-আনম্বানির সম্পদ কী করে বাড়ে তার ব্যবস্থা হবে।’’ 
তিনি বলেন, ‘‘মানুষ অধিকারের জন্য সংগঠিত হবে, মিছিল করবে, তা এরা করতে দেবে না।’’ হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বলছি মাঠে জায়গা না দিলে পথে নামব। জেলা প্রশাসন আমাদের জায়গা দেয়নি মিটিং করার। মালদাবাসীকে অভিনন্দন তাঁরা বাধা উপেক্ষা করে সমবেত হয়েছে। পুলিশ বলবে রাস্তা ক্লিয়ার কর। আর অভিষেক ব্যানার্জি যখন মিছিল করবে তখন এই পুলিশ, এই আইপিএস, ডব্লিউবিসিএস অফিসাররা দড়ি ধরে পাহারা দেবে।’’
বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও এসএফআই’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী, এসএফআই সাধারণ সম্পাদক ময়ুখ বিশ্বাস, সংগঠনের সর্বভারতীয় নেত্রী দীপ্সিতা ধর, এসএফআই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি প্রতীক উর রহমান, প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য সহ সংগঠনের নবনির্বাচিত সভাপতি প্রণয় কার্যি, সম্পাদক দেবাঞ্জন দে প্রমুখ। সমাবেশে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করেন অধ্যাপক সত্যরঞ্জন চৌধুরী। সমাবেশ পরিচালনা করেন, প্রতীক উর রহমান এবং প্রণয় কার্জি।   
সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘শিক্ষানীতিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে কর্তৃত্ব কায়েম করছে সরকারে থাকা দুই দল। ভবিষ্যতের ভিত্তিকে নড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ভয়াবহ অর্থনৈতিক বৈষম্য এসেছে। সামাজিক ন্যায় বিচার ভাঙছে ক্রমশ। মানুষের ভবিষ্যতের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে।’’
চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই সংবিধানকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমাদের দেখতে হবে যাতে জ্ঞান চর্চা বা লেখাপড়ার দিকটি সবার মধ্যে যেন ছড়িয়ে পড়ে। ভারতের ছাত্র ফেডারেশন এই মনোভাব নিয়েই চলে। সকলের জন্য শিক্ষা ও কাজের অধিকারকে অগ্রাধিকার দেয়।’’
দীপ্সিতা ধর বলেন, ‘‘মনুবাদ বলছে মহিলাদের নাকি শিক্ষার অধিকার নেই। মোদী বলেছেন, মহিলাদের জন্য সব স্কলারশিপ বন্ধ হবে। তাঁর কাছে মহিলাদের উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনই নেই। প্রশ্ন তুলতেই হবে আমাদের।’’ 
ময়ুখ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাংলার নবীন প্রজন্মের যন্ত্রণা আর হতাশা বাড়ছে। এর অবসান হবেই। তৈরি হচ্ছে শত শত অগ্নি স্ফুলিঙ্গ। সব হাতে কাজ, সবার জন্য শিক্ষা নিয়ে ভাবতে দেবে না ওরা। স্কলারশিপ বন্ধ, হোস্টেল বন্ধ।’’

Comments :0

Login to leave a comment