সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির ইংরেজি সাপ্তাহিক মুখপত্র ‘পিপল্স ডেমোক্রেসি’র আগামী সংখ্যার সম্পাদকীয়তে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
সম্পাদকীয়, ৭ এপ্রিল বিহারের নওয়াদায় নরেন্দ্র মোদী জনসভা করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘আরজেডি এবং কংগ্রেস সমস্ত ধরণের চেষ্টা করেছে, যাতে অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি করা না যায়।’’ মোদী আরও বলেন, ‘‘এই দলগুলি রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠাও বয়কট করেছে।’’ মোদী উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখেন, ‘‘প্রভু রামের প্রতি এই দলগুলির এত শত্রুতা কেন?’’
এখানে না থেমে মোদী বলেছেন, ‘‘রাম নবমী আসছে। আপনারা কিন্তু মনে রাখবেন কারা কারা পাপ করেছে।’’
সিপিআই(এম)’র তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ কি মানুষের ভাবাবেগ ও ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করা নয়? এটা কেবলমাত্র নির্বাচনী বিধিভঙ্গ নয়, বরং বিদ্বেষ ও বিভাজন ছড়ানোর অভিযোগে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হওয়া উচিত।
কেবল বিহারেই নয়, ৬ এপ্রিল রাজস্থানের আজমেরে দাঁড়িয়েও একই ধরণের ভাষণ দেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘কংগ্রেসের যে সদস্যরা রাম মন্দিরের উদ্বোধনে গিয়েছিলেন, তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করছে কংগ্রেস।’’ এর সঙ্গে মোদী যুক্ত করেছেন, ‘‘যাঁরা রাম মন্দিরের উদ্বোধনের বিরোধিতা করতে পারেন, তাঁরা নিশ্চিত ভাবে রাম নবমীর শোভাযাত্রারও বিরোধিতা করবেন।’’
রাম নবমী ১৭ এপ্রিল, আর লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ হবে ১৯ এপ্রিল। মোদীর ভাষণে আশঙ্কা, গত কয়েকবছরের মতো এবারও ধর্মীয় উৎসবকে মিদ্বেষ ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করবে বিজেপি সহ সঙ্ঘ পরিবার।
৯ এপ্রিল উত্তর প্রদেশের পিলভিটের সভা থেকে মোদীর আক্রমণের নিশানায় ছিল কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টি। এই দুই দলকে আক্রমণ করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘কংগ্রেস এবং এসপি রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করেছে। এটা প্রভু রামচন্দ্রের অপমান। ইন্ডি জোটের দলগুলো রাম মন্দিরের প্রতি ঘৃণা পুষে রাখে।’’
পিপল্স ডেমোক্রেসি লিখছে, ভাষণ থেকেই স্পষ্ট, দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ধর্মীয় আবেগ উস্কানোর চেষ্টা করেছেন মোদী।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, এগুলি কয়েকটা নমুনামাত্র। একের পর এক ভাষণে রাম এবং রাম মন্দিরকে ব্যবহার করে ভোট কুড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে বিজেপি। ৬ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে রোড শো করেন মোদী। সেখানে চলা গানের কথাগুলি হল, ‘‘ যো রাম কো লায়ে হ্যে, হাম উনকো লায়েঙ্গে’’, যার তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘‘যিনি রামকে (ঘরে) এনেছেন, আমরা তাঁকে (ক্ষমতায়) আনব।’’
নরেন্দ্র মোদীর দেখানো পথে চলছেন অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথের মত বিজেপি নেতারা। উল্লেখ্য, বিরোধীরা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পূর্ণ সরকারি মদতে পরিচালনার বিরোধিতা করেন। ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে বিজেপি’র কর্মসূচি করে অসমাপ্ত মন্দিরেই উদ্বোধন করে দেন প্রধানমন্ত্রী। সংবিধান অনুযায়ী সরকার এই ভূমিকা নিতে পারে না। বিজেপি ফের সরকারে এলে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান বদালনো হবে, বলেছেন বিরোধীরা। জনমনে তার প্রতিক্রিয়া পড়ায় শুক্রবার বারমেরের জনসভায় মোদী বলেছেন, ‘‘আজ চাইলে বাবা সাহেব আম্বেদকরও সংবিধানকে বদলাতে পারবেন না।’’
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, ‘‘ ধর্মীয়, জাতিগত ও সম্প্রদায়গত ভাবাবেগকে নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না। মসজিদ, মন্দির, গির্জা সহ কোনও ধর্মীয়স্থানকে নির্বাচনী মঞ্চ বানানো যাবে না।’’ নির্বাচনী আচরণ বিধি সংক্রান্ত নির্দেশিকায় কমিশন নোটিস পাঠিয়ে বিষয়টি মনে করিয়েছে। তবে বিরোধীদের হিন্দুবিরোধী সাজাতে মোদীর একের পর এক প্রচারে লাগাম টানেনি কমিশন।
নরেন্দ্র মোদীর একাধিক বক্তব্য’র কোলাজ করে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে সিপিআই(এম)। ২০১৯’র লোকসভা নির্বাচনেও নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ’র একাধিক বক্তব্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরবর্তীকালে প্রকাশ পায়, কমিশনের একজন কমিশনার এই বক্তব্যগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেন নি। অশোক লাভাসা নামের সেই আধিকারিক পরবর্তীকালে পদত্যাগ করেন, কারণ তাঁর পুত্র এবং স্ত্রীকে আয়কর অভিযানের নামে হেনস্থা করা শুরু হয়। এবারও কমিশনের নিরপেক্ষতায় প্রশ্ন উঠছে।
Comments :0