নির্বাচনী প্রচারে ঘৃণাভাষণ দিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই ভাষণগুলির ফলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈরিতা তৈরি হচ্ছে। এই অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে দিল্লির মন্দির মার্গ থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যায় সিপিআই(এম)। অভিযোগ নিতে যদিও অস্বীকার করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দিল্লি পুলিশ।
সোমবার মন্দির মার্গ থানায় অভিযোগ জানাতে যান সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত এবং দিল্লির রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য পুষ্পিন্দর সিং গ্রেওয়াল। মন্দির মার্গ থানা অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে দিল্লি পুলিশের কমিশনারের কাছে যেতে বলে।
প্রসঙ্গত, দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে। গত ১০ বছর ধরে একের পর এক ইস্যুতে বারবারই বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ নিতে দেখা গিয়েছে দিল্লি পুলিশকে। সোমবার তারই ধারাবাহিকতা দেখল দিল্লি।
সিপিআই(এম)’র অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, ভারতীয় দন্ডবিধির ১৫৩-এ,১৫৩-বি, ২৯,৫০৪ এবং ৫০৫ নম্বর ধারাগুলি লঙ্ঘন করে প্রচার চালাচ্ছেন মোদী। রবিবার রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ার সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কংগ্রেস সহ বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে হিন্দুদের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হবে। হিন্দু মহিলাদের মঙ্গলসূত্র সহ অন্যান্য অলঙ্কার কেড়ে মুসলমানদের দিয়ে দেওয়া হবে। এই সমস্ত ভিত্তিহীন ও বেআইনি কথা বলে সমাজে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী।
অভিযোগ পত্রে সিপিআই(এম) বলছে, জনমানসে মুসলিমদের সম্পর্কে ঘৃণা তৈরির জন্য তাঁদের নিয়মকরে ‘ঘুসপেটিয়ো’ বা অনুপ্রবেশকারী বলে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মোদী বলছেন, হিন্দুদের সম্পত্তি মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে দেওয়া হবে, যাদের বেশি সন্তান রয়েছে।
সিপিআই(এম) অভিযোগ পত্রে বলছে, প্রধানমন্ত্রীর এই জাতীয় ভাষণ রাষ্ট্রীয় ঐক্যের পক্ষে বিপজ্জনক।
এরই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের নির্দিষ্ট অংশটুকু হিন্দিতে তর্জমা করে অভিযোগ পত্রের সঙ্গে সেঁটে দিয়েছে সিপিআই(এম)। বলা হয়েছে, যেহেতু অভিযোগ গুরুতর, তাই অবিলম্বে এফআইআর দায়ের করতে হবে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, যেহেতু মোদীর এই বক্তব্য গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তাই অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে ভয়ঙ্কর খেসারৎ দিতে হতে পারে গোটা দেশকে।
ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কপি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। কংগ্রেসের তরফেও তীব্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ইস্যু থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। প্রথম দফার ভোটের হতাশার পর নরেন্দ্র মোদীর মিথ্যাচারের মাত্রা এতটাই নিচে নেমে গিয়েছে যে ভয় পেয়ে তিনি এখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের মত বিষয়গুলি থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছেন’’।
এর আগে বিহারের নওয়াদার সভা থেকে শুরু করে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের মত রাজ্যগুলির মাটিতে দাঁড়িয়ে বিরোধী রাজনৈতিক বিন্যাস ইন্ডিয়ার দলগুলিকে কদর্য আক্রমণ করেছেন মোদী। রাম নবমীর আগে একের পর এক সভা থেকে বিরোধীদের ‘রাম বিরোধী’, ‘রাম মন্দির বিরোধী’, ‘রামের অপমানকারী’ বলে চলেছেন মোদী। নির্বাচন কমিশনই ধর্ম বা জাতের মতো বিষয়কে প্রচারে টেনে আনার বিরুদ্ধে নির্দেশিকা জারি করেছে।
Comments :0