সমস্ত রকমের আইন ও নিয়ম কানুন মেনে পুঁজি বিনিয়োগ করে এ রাজ্যে যে শিল্প গড়ে ওঠে না সেটা নতুন করে বলার প্রয়োজন হয় না। রাজ্যের মানুষ সেটা জানেন। নিয়ম মেনে শিল্প গড়ে উঠলে এবং আইন মেনে সেগুলি চললে অর্থনীতির উন্নতি হয় এবং কর্মসংস্থান তৈরি হয়। কিন্তু মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল জমানায় নতুন যে বাস্তুতন্ত্র তৈরি হয়েছে সেখানে শিল্প যেভাবেই গড়ে উঠুক বা যেভাবেই চলুক শাসক দলের নেতাদের নিয়মিত তোলা দিতে হয়। কর্মীনিয়োগের ক্ষেত্রেও নেতাদের সুপারিশ করা লোকদের নিয়োগ করতে হয় যোগ্যতা থাক বা না থাক। আবার শুধু মাসোয়ারা দিলেই চলে না। বারো মাসে তেরো পার্বনের মতো নানা অছিলায় টাকা দিতে হয়। না দিলে হুমকি, গোলমাল, ব্যবসা বন্ধ।
নিয়ম মেনে কারখানা হলে মালিককে এককালীন ও নিয়মিত নানা কর ও মাশুল দিতে হয়। ঋণ করে বিনিয়োগ হলে সুদ গুনতে হয়। এরপর যদি শাসক দলের নেতাদের নিয়মিত মোটা টাকা জোগান দিতে হয় তাহলে কারখানা চালিয়ে লাভ করা যায় না। তাই এরাজ্যে এখন কেউ বিনিয়োগ করতে আসে না। যারা আগে থেকে আছে বা না জেনে ভুল করে চলে এসেছে তাদের অনেকেই পাততাড়ি গোটাচ্ছে।
বছর বছর বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনের নামে মোচ্ছব আয়োজন করে শত শত কোটি টাকা খরচ করে মুখ্যমন্ত্রী যতই শত সহস্র কোটি টাকা লগ্নির ফর্দ আওড়ান না কেন তিনি নিজেও জানেন এর বেশির ভাগই কথার কথা থেকে যায়। বিগত ৮টি শিল্প সম্মেলনে সব মিলিয়ে যত লগ্নির গল্প শোনানো হয়েছিল তার সিকিভাগও যদি সত্যি সত্যি লগ্নি হতো তাহলে রাজ্যের চেহারা বদলে যেত।
ছোট হোক বা মাঝারি অথবা বড় সংগঠিত শিল্পে এরাজ্যে বিনিয়োগ হয় না বললেই চলে। বস্তুত বর্তমান জমানাই শিল্প বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় বাধা। শাসক দলকে নিত্য নজরানা দিয়ে শিল্পে লাভের মুখ দেখা কার্যত অসম্ভব। তাই তারা এই রাজ্যকে যথা সম্ভব এড়িয়ে যান। তবে সংগঠিত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ না হলেও সব ধরনের আইন কানুন, বিধিনিষেধ না মেনে নিষিদ্ধ ও বেআইনি শিল্প গড়ে উঠছে। এক্ষেত্রে নিয়ম মেনে সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয় না। নিয়মিত কর দিতে হয় না। শুধু শাসক দলের নেতাদের পকেট ভরিয়ে খুশি করলেই হয়। এধরনের দ্রুত বিকাশমান শিল্প অবৈধ বাজি শিল্প এবং বাজির আড়ালে বোমা ও অন্যান্য অস্ত্র তৈরি। গত দেড় দশকে এমন অবৈধ কারবার কলকাতার লাগোয়া দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদীয়া ও দুই মেদিনীপুরে ঘরে ঘরে কুটির শিল্পের চেহারা নিয়েছে। চরম ঝুঁকি নিয়ে বহু মানুষ এখানে কাজ করেন। প্রায়শই ঘটে দুর্ঘটনা-বিস্ফোরণ। এক একটি বিস্ফোরণে অনেকের মৃত্যু হয়। মুখ্যমন্ত্রী গল্প শোনান। কড়া পদক্ষেপ, বাজি ক্লাস্টার, ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি শোনা যায়। কিন্তু দু’দিন পর সব ভুলে যায়। আবার বিস্ফোরণ হলে সেই চর্বিতচর্বণ। দত্তপুকুরে দু’বছর আগে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ৯জন মারা যা. ক্ষতিপূরণ মেলেনি। যারা ধরা পড়েছিল তারা জামিনে। কারও সাজা হয়নি। কল্যাণীর ক্ষেত্রেও যে তাই হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঘটনা ঘটলেই পুলিশ, প্রশাসন, মন্ত্রী, বিধায়ক, কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সদস্য দায় এড়ান। তারা কেউই নাকি কিছু জানতেন না। অথচ এলাকায় সবাই সবটা জানেন। কাদের মদতে ও ছত্রছায়ায় এমন বেআইনি কারবার চলে কারও অজানা নয়। ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলা এরাজ্যের এটাই বারমস্যা, এটাই ভবিতব্য বলে ছেড়ে দেওয়া যায় না। জাগতে হবে, জাগাতে হবে। এই দুঃশাসনের অবসান ঘটাতেই হবে।
Firecrackers Bombs Factory
বাজি বোমা শিল্প
![](https://ganashakti-new-website.s3.ap-south-1.amazonaws.com/23986/67a8509a4b680_1000082654.jpg)
×
Comments :0