বিজেপি শাসিত মধ্য প্রদেশে আদিবাসী নিগ্রহের আরেক ন্যক্কারজনক ঘটনা সামনে এল। মধ্য প্রদেশের সিধি জেলায় এক বিজেপি নেতা মদ্যপ অবস্থায় মানসিক প্রতিবন্ধী এক আদিবাসী ব্যক্তির উপর প্রস্রাব করছে। গোটা ঘটনাটাই ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। আর সেই ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। ‘জঘন্য’ বললেও কিছুই বলা হয় না। অনগ্রসর ও দুর্বল মানুষ সম্পর্কে বিজেপি’র কী মনোভাব, তাই ফের এই ভাইরাল ভিডিও’তে ধরা পড়ল।
সিধির কুবড়ি বাজার এলাকার এই ঘটনায় অভিযুক্ত প্রবেশ শুক্লা কুবড়িরই বাসিন্দা। সেখানকার বিজেপি বিধায়ক কেদারনাথ শুক্লার ঘনিষ্ঠ ওই প্রবেশ ৯দিন আগে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ। সেই ভিডিও’তে দেখা যাচ্ছে, রাতের রাস্তায় একটি দোকানের সিঁড়িতে বসে রয়েছেন এক আদিবাসী যুবক। সামনে দাঁড়িয়ে প্যান্টের চেন খুলে তার মুখে প্রস্রাব করছে বিজেপি’র ওই নেতা!
সিধির পুলিশ সুপার রবীন্দ্র ভার্মা টুইট করে জানিয়েছেন, সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও’টি তদন্ত করে অভিযুক্ত প্রবেশ শুক্লার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ভিডিও’টি টুইটারে শেয়ার করেছেন কংগ্রেস নেতা বি ভি শ্রীনিবাস। কংগ্রেসের বক্তব্য, যে বিজেপি জনজাতিদের অধিকার নিয়ে বড় বড় বুলি আওড়ায়, আর তাদের প্রকৃত আচরণ ও মানসিকতা কী তা এই ছবিতেই পরিষ্কার।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কমল নাথ বলেছেন, গোটা রাজ্যের পক্ষে লজ্জার। তাঁর কথায়, ‘আদিবাসীদের উপর নৃশংসতায় মধ্য প্রদেশ ইতোমধ্যেই এক নম্বরে রয়েছে। এই ঘটনা গোটা মধ্য প্রদেশের কাছে লজ্জার বিষয়’। তিনি দোষী বিজেপি নেতার কঠোরতম শাস্তির পাশাপাশি মধ্য প্রদেশে আদিবাসীদের উপর এমন নৃশংসতা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
মধ্য প্রদেশ যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি ডঃ বিক্রান্ত ভুরিয়া বলেন, শিবরাজ সরকারের আমলে আদিবাসীদের উপর সবচেয়ে বেশি নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। বিজেপি নেতারা এর সঙ্গে জড়িত। এটিই আদিবাসীদের প্রতি বিজেপি’র মানসিকতাকে সামনে নিয়ে আসে।
মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে ট্যাগ করে কংগ্রেস নেতারা সোশাল মাধ্যমে লেখেন, এটাই কি আদিবাসীদের প্রতি ভালোবাসা? এই জঙ্গলরাজকে কী নামে ডাকা হবে, কেনই বা ওই বিজেপি নেতাকে এখনও গ্রেপ্তার হয়নি?
ভিডিও’টি ভাইরাল হওয়ার পর চাপে পড়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। তিনি বলেন, ‘সিধি জেলার একটা ভাইরাল ভিডিও আমার নজরে এসেছে। অভিযুক্তকে জাতীয় সুরক্ষা আইন (এনএসএ)-এ গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছি জেলা প্রশাসনকে’। রাত পর্যন্ত যদিও প্রবেশকে গ্রেপ্তারের কোনও খবর নেই।
দিল্লির আপ বিধায়ক নরেশ বালিয়ানও টুইটারে ভিডিও’টি শেয়র করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহানকে ট্যাগ করে তিনি লেখেন, ‘এই শয়তান লোকটি গরিব মানুষের মুখে প্রস্রাব করছে না, সমগ্র সিস্টেমের মুখেই প্রস্রাব করছে’।
বিধায়ক কেদারনাথ শুক্লাকে এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান যে প্রবেশকে তিনি চেনেন। তবে কীভাবে চেনেন, প্রশ্নের জবাবে কেদারনাথের সাফাই, আমি একজন বিধায়ক, তাই প্রবেশকে চিনি।
সোশাল মিডিয়াও এই ভিডিও নিয়ে তোলপাড়। অনেকেই ওই নেতার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। এই নিয়ে বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন নেটিজেনদের একাংশ। তাঁদের দাবি, শুধু হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিই নয়, বিজেপি ভারতে কার্যত জাতপাত, বর্ণবাদের রাজনীতিও ফিরিয়ে আনতে চলেছে। গেরুয়া শিবিরের উচ্চ নেতৃত্ব যতই মুখে দলিত, আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার কথা বলুন না কেন, বাস্তবে হচ্ছে যে ঠিক তার উলটো, তা দিনের আলোর মতোই এখন পরিষ্কার।
Comments :0