লোকসভা নির্বাচনে ফলাফলে হতাশা নয়, মানুষের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে থাকবে সিপিআই(এম)। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদে সিপিআই(এম)’র জেলা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা করেছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
তিনি জানিয়েছেন, তিন স্তরে নির্বাচন পর্যালোচনা করবে সিপিআই(এম)। পার্টি সংগঠনের সব স্তরে আলোচনার পাশাপাশি সমর্থকদের মত শোনা হবে। বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের কথাও শোনা হবে। এমনকি, অন্য রাজনীতি করেন, কিন্তু সহায়তা করেছেন, শোনা হবে এমন অংশের মতও।
লোকসভা নির্বাচনে সিপিআই(এম) কোনও আসন এরাজ্য থেকে পায়নি। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে ভালো লড়াই হলেও পরাজিত হন সিপিআই(এম) প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। এই প্রসঙ্গেই এদিন সেলিম জানান, বহু মানুষ তাঁদের সমস্যার কথা বলেছেন। সেই দাবিগুলি আদায়ের জন্য মানুষকে নিয়েই আন্দোলন চলবে। যাঁরা সমর্থন করেননি, তাঁদেরও সমর্থন পাওয়ার যোগ্য হয়ে উঠবে পার্টি।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন পার্টির মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা।
লোকসভা নির্বাচন এবং ফলাফল পর্যালোচনায় বৈঠক করেছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী দু’বার বসেছে। রাজ্য কমিটির বৈঠক রয়েছে ১৯-২০ জুন। ২৮-৩০ জুন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা কমিটি ও সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক হচ্ছে। পর্যালোচনার পাশাপাশি আগামী কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা চালাচ্ছে সিপিআই(এম)।
এদিন সেলিম বলেন, ‘‘ আমাদের কাজ, নির্বাচনে আমাদের ভূমিকার সঙ্গে ফলাফলের পর্যালোচনা হবে তিন পর্যায়ে। এক, যাঁরা আমাদের পার্টি সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে যুক্ত তাঁদের মতামত নেওয়া চলবে। দুই, সিপিআই(এম) করেন না, অন্য দলের কর্মী বা বামফ্রন্টের কর্মী তাঁদের মতামত নেওয়া হবে। কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গেও আমরা কথা বলব। মতামত নেব। তিন, যাঁরা কোনও রাজনীতি করেন না, কিন্তু যাঁরা আমাদের সহযোগিতা করেছেন, খবর নিয়েছেন বা খবর দিয়েছেন, বা অন্য রাজনীতি করেন, শোনা হবে তাঁদের মতামতও। নেওয়া হবে পরামর্শও।’’
সেলিম জানান, ‘‘ কেবল লোকসভা নির্বাচন প্রক্রিয়ার পর্যালোচনা করা হবে তা নয়, পরবর্তী লড়াই-আন্দোলনের কর্মসূচিও ঠিক হবে পরামর্শ এবং মতামতের ভিত্তিতে।’’ তিনি বলেছেন, “ যে সমস্ত বিষয় মানুষের কাছে আমরা নিয়ে গিয়েছিলাম, মানুষ যে সমস্ত বিষয় জানিয়েছেন, সেগুলি নিয়ে আগামী দিনে লড়াই আন্দোলন হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষের জীবনধারণ কঠিন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে” ।
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের সমর্থনে বামফ্রন্টের সিপিআই (এম) প্রার্থী ছিলেন মহম্মদ সেলিম। এই কেন্দ্র প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘ বিশাল অংশের মানুষ আমাদের সমর্থন করেছেন। আমরা জয়ী হতে পারিনি, কিন্তু বহু মানুষ প্রবল পরিশ্রম করেছেন জয়ের জন্য। আমাদের পার্টির কর্মীরা, কংগ্রেস কর্মী, বামফ্রন্টের কর্মীরা, বা রাজনীতি করেন না, যাঁরা আগে রাজনীতি করতেন কিন্তু পরে যুক্ত নেই, এমন বহু মানুষ যুক্ত হয়েছেন।’’
সেলিম বলেন, ‘‘ অনেকেই আশা করেছিলেন যে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে আমরা জয়ী হবো। আমরা জয়ী হতে পারিনি, কিন্তু আশাহত হওয়ার কারণ নেই। লড়াইয়ে জয়-পরাজয় থাকে। মানুষ আমাদের বহু সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। সেগুলো নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই দাবিগুলি আদায়ের চেষ্টা করব। ফলে লড়াই জারি থাকবে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘ আমাদের দুর্বলতা আমরাই কাটাবো। যাঁরা আমাদের সমর্থন করলেন না ভবিষ্যতে তাঁদের সমর্থন পাওয়ার মতো নিজেদের যোগ্য করে তোলার চেষ্টা চালাবো।’’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এদিন সেলিম বলেন, ‘‘ নির্বাচন কমিশন থাকা সত্ত্বেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একতরফা ভোট লুট করেছে, চুরি করেছে। বিজেপি প্রার্থী দেওয়া থেকেই টালবাহানা করেছে। বিজেপি নেতারা ওখানে যায়নি। শুভেন্দুর বোঝা উচিত ছিল, বিজেপি অভিষেককে ‘বিজেপি’ হিসাবেই দেখছে।”
এদিন সেলিম বলেন, ‘‘যেভাবে বিজেপি অর্জুন সিং, জীতেন্দ্র তেওয়ারি, মুকুল রায়কে দেখেছিল, সেভাবেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বিজেপি’ হিসাবেই দেখছে।’’ সেলিম আরও বলেন, “সেজন্যই এখন বিদেশে যেতে অসুবিধা হবে না। যখন বলা হচ্ছে চার্জশিট দাও, তখন ওরা ভিসা দেবে”।
নিট পরীক্ষার ফলাফলে গরমিল নিয়েও এদিন সরব হন মহম্মদ সেলিম।
Comments :0