Editorial

ট্রাম্পকে খুশি করতে মরিয়া মোদী

সম্পাদকীয় বিভাগ

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরম বন্ধু বলে উল্লেখ করে সেই বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলে বার্তা দিয়ে আমেরিকার উদ্দেশে পাড়ি দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বহু চেষ্টা চরিত্র ও তদ্বির করে ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর বৈঠকের আয়োজন করেছেন বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আসলে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ মেলেনি। এরপর ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ যদি অতি বিলম্বে মেলে তাহলে ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু হয়ে যাবে। যাকে পরম বন্ধু বলে বার বার জাহির করেন, যাকে ভোটে জেতাবার জন্য আমেরিকায় গিয়ে প্রচার পর্যন্ত করেছিলেন সেই ট্রাম্পের কাছ থেকে গুরুত্ব না পেলে সম্মানহানির আশঙ্কা থেকে যায়। তাই ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে যাবার আগে নিজেকে দারুণ উৎফুল্ল ও চনমনে দেখাতে চাইছেন। মোদী চাইলেও ট্রাম্পের কিন্তু আদিখ্যেতা নেই। বন্ধুপ্রীতি দেখানোর চেয়ে তিনি নিজের কাজ হাসিল করতেই বেশি ব্যস্ত। তাই মোদী যখন বন্ধুত্ব করতে যাবার জন্য রওনা দিয়েছেন তখন ট্রাম্প আমেরিকায় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে বর্তমান চালু আমদানি শুল্কের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করে মোদীকে আগাম অভ্যর্থনা জানিয়ে দিয়েছেন।
ভোট পর্ব থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক দেশের সঙ্গে ভারত ট্রাম্পের অন্যতম টার্গেট। ভারতের নাম করে শুল্ক মাস্টার বলে খোঁচা দিয়েছেন। ভারত মার্কিন পণ্যে অন্যায়ভাবে বেশি শুল্ক চাপায় এটাও বলেছেন। বিশ্ববাণিজ্যে ডলারের বদলে অন্য মুদ্রা ব্যবহার করলে ভারতের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে প্রতিবাদ তো দূরের কথা টুঁ শব্দটিও করেননি ৫৬ ইঞ্চির বিশ্বগুরু। বরং তলে তলে ট্রাম্পের মন পেতে, তাঁকে খুশি করতে নৈবেদ্য সাজিয়েছেন।
ট্রাম্পের প্রথম পর্বেও বন্ধু বন্ধু বলে কোলাকুলি-ঢলাঢলি করে অনেক আদিখ্যেতা দেখিয়েছেন মোদী। অথচ সেই ট্রাম্পই ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ভারত থেকে যাওয়া ইস্পাতে ও অ্যালুমিনিয়ামের চড়া হারে শুল্ক চাপিয়েছিলেন। তখন বীরত্ব দেখিয়ে পালটা ৩০টি মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়ে দাপট দেখানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। তারপর থেকেই ধাপে ধাপে ৫৬ ইঞ্চি চুপসে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রার্থী হবার পর প্রচারে আগ্রাসী হুমকি দেওয়া শুরু করার পর মোদী মৌনব্রত অবলম্বন করেন।
অবশেষে ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হয়ে যাবার পর মোদীদের বেহাল অবস্থা। ট্রাম্পকে খুশি করাই মোদী সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। ট্রাম্প কিন্তু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে নিজের জায়গায় অবিচল। তিনি চান মার্কিন শ্রেষ্ঠত্ব, মার্কিন দুনিয়াদারি। মার্কিন হুমকির কাছে যেন সবদেশে থরহরি কম্প শুরু হয়। তিনি চান বাণিজ্যে কোনও দেশের সঙ্গেই যেন ঘাটতি না থাকে। তাই সর্বত্র মার্কিন পণ্য সহজে যাতে বিকোয় তাই শুল্ক কমাবার চাপ দিচ্ছেন। তেমনি মার্কিন বাজারে অন্য দে‍শের পণ্য নিয়ন্ত্রণ করতে নানা অজুহাতে চড়া শুল্ক চাপাচ্ছে। ট্রাম্পের রোষের মুখে পড়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী সহযোগী হবার সুযোগ যদি হাতছাড়া হয়ে যায় সেই ভয়ে মোদীরা তটস্থ হয়ে পড়েন। তাই আমেরিকায় যাবার আগেই সব মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। অস্ত্র আমদানিতে আমেরিকা থেকে বাড়ানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। আমেরিকা থেকে তেল আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমেরিকা যাতে পরমাণু বিদ্যুতে ভারতে বিরাট বিনিয়োগ করতে পারে তারজন্য পরমাণু দায়বদ্ধতা আইন লাগু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তেমনি আমেরিকা থেকে অবৈধ ভারতীয়দের ফেরানোয় পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাই হাতে কড়া, পায়ে শেকল পরিয়ে ভারতীয়দের দাগী অপরাধীর মতো চরম অমানবিকভাবে ফেরত পাঠানো হয় তখন মোদীরা অবনত মস্তকে সেটা হজম করেন। আসলে আমেরিকার অনুগামী হবার উদগ্র কামনায় দে‍‌শের সম্মান-মর্যাদা বিসর্জন দিতেও দ্বিধা করছে না। আমেরিকা পাত্তা দিচ্ছে না এটা ভাবতেই শিউরে উঠছেন মোদীরা। তাই ট্রাম্পের ঔদ্ধত্য নীরবে মেনে নিয়ে ট্রাম্পকে খুশি করতে দেশের স্বার্থহানিকর নৈবেদ্য সাজিয়েছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment