রাতের অন্ধকারে ইউক্রেনে ভেঙে গেল আস্ত জলাধার। ইউক্রেন এবং রাশিয়া- দুই পক্ষই একে অপরকে দায়ী করেছে বাঁধ ভাঙার জন্য। যদিও নদী বাঁধ ভাঙার ফলে দক্ষিণ পূর্ব ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ অংশে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন কয়েক লক্ষ মানুষ।
মঙ্গলবার রাত থেকেই খবর রটে যায়, দক্ষিণ পূর্ব ইউক্রেনের খারসন প্রদেশের নোভা কাকোভকা জলাধারের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। এবং তারফলে প্রবল বেগে ড্নিপার নদীর জল দুই কূল প্লাবিত করছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙা বাঁধের ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম জুড়ে। এবং তারপরেই বিপর্যয়ের আশঙ্কা তীব্র হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নোভা কাকোভকা জলাধারের জল ব্যবহার করেই জাপোরোঝিয়া পরমাণু চুল্লির পরমাণু জ্বালানী ঠান্ডা করা হয়। বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে সেই জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। এর পাশাপাশি হঠাৎ জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ ইউক্রেনে অবস্থিত খারসন শহরের প্রায় গোটাটাই প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে এই জলাধারের জল প্রকল্প থেকেই দক্ষিণ পূর্ব ইউক্রেনের কয়েক লক্ষ মানুষের কাছে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়। বাঁধ ভাঙার ফলে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। একইসঙ্গে রয়েছে প্রাণহানীর আশঙ্কাও।
খারসন প্রদেশে ড্নিপার নদীর পশ্চিম তটের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রাশিয়ার হাতে। পূর্ব তট নিয়ন্ত্রণ করে ইউক্রেন। পূর্ব তটেই রয়েছে খারসন সহ একাধিক জনবহুল শহর। ইতিমধ্যেই খারসনের বহু বাসিন্দাকে অন্যত্র সরানোর কাজ শুরু করেছে ইউক্রেন। ইতিমধ্যেই ১৬ হাজার পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে খবর। খারসনের পাশাপাশি নোভা কাকোভকা শহরও পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে ড্নিপারের জলে।
অপরদিকে পশ্চিম তটে বড় শহর না থাকলেও রয়েছে বেশ কিছু ছোট গ্রাম। সেই গ্রামগুলি থেকে আগেই সাধারণ মানুষকে সরিয়ে সামরিক রক্ষণ ব্যূহ তৈরি করে রেখেছিল রাশিয়া। কাটা হয়েছিল বহু ট্রেঞ্চ বা আত্মরক্ষার জন্য তৈরি সুরঙ্গ। হঠাৎ জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় সেই ট্রেঞ্চগুলিও প্লাবিত হয়েছে। যদিও রাশিয়ার দাবি, কোনও ট্রেঞ্চ থেকেই পালায়নি রুশ সেনা।
ইউক্রেনের দাবি, তাঁদের প্রতি আক্রমণ ঠেকাতেই বাঁধ ভেঙে দিয়ে বিপুল এলাকা প্লাবিত করেছে রাশিয়া। অপরদিকে ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইম্স সহ একাধিক পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে রুশপন্থী ব্লগারদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই নোভা কাকোভকা জলাধার ধ্বংসের চেষ্টা চালাচ্ছিল ইউক্রেন। স্বাভাবিক ভাবে মঙ্গলবারের কীর্তির দাবিদার তাঁরাই।
প্রসঙ্গত, নোভা কাকোভকা জলাধারের জলে প্লাবিত হয়ে খেরসন শহরে আটকে পড়ার আশঙ্কা থেকেই ২০২২ সালের নভেম্বরে খেরসন শহর থেকে পিছু হঠে রাশিয়া। সেই ঘটনাকে নিজেদের সামরিক শক্তির জয় হিসেবেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল ইউক্রেন। অপরদিকে রুশ জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিনের দাবি ছিল, সেনাবাহিনীকে অনর্থক ঝুঁকি পূর্ণ পরিস্থিতিতে আটকে রাখার কোনও মানে হয় না। রুশ ব্লগাররা বলছেন, এদিনের ঘটনা থেকেই সুরোভিকিনের দূরদর্শিতা প্রমাণিত হয়েছে।
Comments :0