Mahua Maitra controversy

মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজে জোরালো প্রতিবাদ বিরোধীদের

জাতীয়

২০০৫-এ একাধিক সাংসদকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সুপারিশ করেছিল বিশেষ কমিটি। অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত প্রত্যেককে জেরা করেছিল কমিটি। সেবার টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল সাংসদদের। মহুয়া মৈত্রের বেলায় সেরকম স্বচ্ছ পদ্ধতি নিল না লোকসভা। 
প্রায় ৫০০ পাতার রিপোর্ট পেশ করারর পর মাত্র আধঘন্টার আলোচনার সুযোগ দিয়ে বহিষ্কার করা হলো তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। তৃণমূলের চেয়েও বেশি, শুক্রবারও, ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ দৃঢ়ভাবে দাঁড়ালো মহুয়া মৈত্রের পাশে। 
বামপন্থীরা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং আদানিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলেই তাঁকে বের করে দেওয়া হলো।
সুদীপ বন্দোপাধ্যায় যখন দাবি করছিলেন মহুয়াকে বলতে দেওয়ার জন্য তখন একাধিকবার উঠে দাঁড়িয়ে মহুয়াকে বলতে দেখা যায়। কল্যাণ ব্যানার্জি যখন বলছেন তখন মহুয়া বার বার পাশ থেকে তাকে বলতে থাকেন।  
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি বলেন, ‘‘অভিযুক্তের কথা না শুনলে কোন ভাবে ন্যায় বিচার করা যায় না। যিনি অভিযোগ করেছেন সেই ব্যাবসায়ী হীরানন্দানির সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। তার একটি হলফনামার ভিত্তিতে মহুয়া মৈত্রের বিচার করা হচ্ছে।’’ 
বিজেপি সাংসদ হেনা গাভিত সহ বিজেপির অন্যান্য সাংসদরা বলেন, ‘‘মহুয়া মৈত্র তার পাসওয়ার্ড এবং লগ ইন আইডি হীরানন্দানিকে দিয়েছে, সেই কথা তিনি নিজে এথিক্স কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন।’’ তাদের আরও অভিযোগ একইদিনে চার আলাদা আলাদা শহর থেকে মহুয়ার মেইল আইডি লগইন করা হয়েছে। 
কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তেওয়ারি বলতে উঠে বলেন, ‘‘এথিক্স কমিটি শুধুমাত্র বলতে পারেন একজন সাংসদ দোষী নাকি নির্দোষ। কোন ভাবেই এথিক্স কমিটি বলতে পারেন না তার সাজা কি হবে। সংসদ ঠিক করবে তার সাজা কি হবে।’’


তবে মহুয়াকে যাতে বলতে দেওয়া না হয় তার দাবি জানান সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী। ২০০৫ সালের দশজন সাংসদের বহিষ্কারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় সেই সময় দশজন সাংসকে বলতে দেননি নিজেদের কথা। আজও মহুয়া মৈত্রকে বলতে দেওয়া যাতে না হয় তার আবেদন জানাচ্ছি।’’
অধ্যক্ষও মন্ত্রী সুরে সুর মেলান। অধ্যক্ষ ওম বিড়লা টেনে আনেন ২০০৫ সালের ঘটনা। তিনি বলেন, ‘‘প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চ্যাটার্জি কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দশজন সাংসদের সাংসদ পদ খারিজ করেন। অভিযুক্তদের বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। যেদিন রিপোর্ট পেশ করা হয়, সেদিনই তাদের শাস্তি দেওয়া হয়।’’ 
অধ্যক্ষের এই মন্তব্যের পাল্টা কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরি বলেন, ‘‘কোবরা পোস্টের স্টিং অপারেশনে স্পষ্ট দেখা যায় যে সাংসদরা টাকা নিচ্ছেন। যেই সাংবাদিকরা এই কাজটি করেন তাদের কমিটি ডেকে সাক্ষ্য নিয়ে রিপোর্ট পেশ করেন। এখানে হিরনন্দানি বা অভিযোগ জানানো আইনজীবীকে কমিটি জেরাই করল না। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও প্রমাণিত হলো না। তাঁকে বলতে দেওয়া উচিত।’’ 
উল্লেখ্য অধ্যক্ষ সোমনাথ চ্যাটার্জি সে সময়ে বিশেষ কমিটি গঠন করেছিলেন। তার রিপোর্ট নিয়ে বিশদে চর্চা হয় লোকসভায়। এথিক্স কমিটির মাধ্যমে তা হয়নি। 
উল্লেখ্য ২০১৬ সালে একাধিক তৃণমূল সাংসদকে টাকা নিতে দেখা যায়। নারদা স্টিং অপারেশনের পরিপ্রেক্ষিতে লালকৃষ্ণ আডবানির নেতৃত্বে এথিক্স কমিটি গঠন করা হলেও তার একটিও বৈঠক হয়নি। 
মহুয়া মৈত্র সাংসদ পদ খারিজের পর বলেছেন, ‘‘অভিযোগ জানিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী আরেক আইনজীবী। দু’জন পুরো উলটো কথা বলেছে। কিন্তু কেউ কমিটিতে এসে বলেনি। তাদের জেরা করার সুযোগ দেওয়া হলো না। টাকা নেওয়ার অভিযোগ পুরো মিথ্যা। তবে ভোট পর্যন্ত সিবিআই হেনস্তা করবে জানি।’’ 
লোকসভায় গান্ধী মূর্তির সামনে ‘ইন্ডিয়া’ সাংসদরা ধরনা দেন। ছিলেন কংগ্রেসের সংসদীয় কমিটির প্রধান সোনিয়া গান্ধীও। অধীর চৌধুরী বলেন, বদলার মনোভাব নিয়ে করা হলো।

Comments :0

Login to leave a comment