responsibility of majority

সংখ্যাগুরুর দায়িত্ব

সম্পাদকীয় বিভাগ

দেশের নাম যাই হোক না কেন শাসক গোষ্ঠী যদি ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়ে বিভাজনকে প্রধান অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চায় তাহলে সেদে‍‌শে শান্তি বা সম্প্রীতি কখনোই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। যে কোনও দেশেই নানা ধর্মের, নানা বর্ণের জনগোষ্ঠীর মানুষ থাকতে পারেন। নাগরিক হিসাবে রাষ্ট্রের কাছে তারা সকলেই সমান গুরুত্বপূর্ণ কেউ বড় বা কেউ ছোট হতে পারে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধর্ম-জাত-বর্ণের কোনও ভেদাভেদ থাকে না। প্রত্যেক নাগরিকই নিজের মতো করে নিজের ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা, পরিচয় বহন করে। রাষ্ট্র বা সরকার ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক চৌহদ্দির মধ্যে নিজেদের আটকে রাখে না। তেমনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতিও কোনও ধর্মকে আশ্রয় করে চলে না। গণতন্ত্রে সংখ্যাগুরুবাদ বা সংখ্যালঘুবাদ বলেও কোনও কিছুর অস্তিত্ব থাকতে পারে না। গণতন্ত্রের মৌলিক শর্তই হলো ধর্মনিরপেক্ষ থাকা, ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে না মেশানো, ধর্মীয় আধিপত্যবাদী মনোভাব ত্যাগ করা। ধর্ম, সম্প্রদায়, জাত-পাত, বর্ণকে ভিত্তি করে যে রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতা দখল করতে চায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাদের কোনও ঠাঁই থাকার কথা নয়। যারা বা যে সব রাজনৈতিক দল ধর্মকে আশ্রয় করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে, অন্য ধর্ম ও ধর্মাবলম্বী সম্পর্কে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ায়  বিধর্মীদের ওপর হামলা চালায় তারা আর যাই হোক গণতান্ত্রিক দল নয় এবং গণতন্ত্রের পতাকা বহন করে না। যদি তেমন দল কোনও দে‍‌শের শাসক হয় তবে সেই দে‍‌শের গণতান্ত্রিক চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যেসব উদ্বেগজনক ঘটনাপ্রবাহ ঘটে চলেছে তাতে সেদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি বলে  তারা গণতান্ত্রিকভাবেই সরকার চালাচ্ছে ধর্মীয় বিদ্বেষ বা ঘৃণার কোনও ঘটনা নেই তাহলে সেটা যেমন হাস্যকর হবে তেমনি ভিন দেশের যারা বাংলাদেশের সমালোচনা করবে তারা নিজেদের দেশে যদি একই কাজ করে থাকে তাহলেও সেটা হাস্যকর এবং অবশ্যই দ্বিচারিতা।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধদের ওপর যেভাবে ঘৃণার আস্ফালন চলছে, যেভাবে সংখ্যালঘুদের জীবন, সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে তাতে যে কোনও মানবদরদি মর্মাহত হবেন। ভারতের জনগণও হচ্ছেন। কিন্তু এই উদ্বেগ হিন্দুদের ওপর হামলা হচ্ছে বলে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। ভারতের বুকেও যখন সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলা হয়, উসকানি দেওয়া হয়, বিদ্বেষ ছড়ানো হয় তখনও মানুষ হিসাবে সকলের বিবেক দংশন হওয়া উচিত।
মনে রাখা দরকার গণতন্ত্রকে যদি প্রতিষ্ঠা করতে হয় তাহলে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু আধিপত্যবাদকে ত্যাগ করে ধর্মনিরপেক্ষতা গ্রহণ করতে হবে। ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের পরিমণ্ডলে সংখ্যালঘুরা সর্বদাই ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় থাকে। তাদের বুকে বল ভরসা দিয়ে আপন করে নেবার প্রধান দায় সংখ্যাগুরুদের। তা না হলে কোনও দিনই সম্প্রতির সমাজ গড়ে উঠবে না। হিংসাদীর্ণ এক অস্থিতিশীল দেশ হয়ে উঠবে। সেখানে কেউই শান্তির ঠিকানা খুঁজে পাবে না।

Comments :0

Login to leave a comment