জ্যোতি ঘোষ
মাচ্চু পিচ্চু পাহাড়ের শিখর, সেখানে ১৯১১ সালে লাতিন আমেরিকার ইনকা সাম্রাজ্যের এক বিখ্যাত দুর্গের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের লাতিন আমেরিকান ইতিহাসের তরুণ অধ্যাপক হিরাম বিগহাম। কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে তিনি এই দুর্গের সন্ধানে বের হন। ইনকা জাতির শেষ সুরক্ষিত পরিত্যক্ত দুর্গের সন্ধান তিনি পান উরুবাম্বা উপত্যকার এক স্থানীয় কৃষকের কাছে। তাইরা ভিল্কা বাম্বার অনুসন্ধান করছিলেন। দুর্গম পথে পায়ে হেঁটে ও খচ্চরে চড়ে তাঁদের অভিযান চালান তাঁরা। প্রায় চল্লিশ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তাঁরা খুঁজে পান। সেগুলি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যান। প্রায় ১০০ বছর পরে পেরু সরকার অনেক তদবির করে সেই প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষগুলি আবার পেরুতে ফিরিয়ে এনে, পেরুর পুরানো রাজধানী কুজকোয় এক মিউজিয়ামে সেগুলি সংরক্ষিতকরে রেখেছেন পর্যটকদের কাছে প্রদর্শনের জন্য।
আবিষ্কারক বিগ হামের কথায় বলা যায় যে,স্প্যানিশ বিজয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন হচ্ছে এই মাচ্চু পিচ্চু দুর্গের অবশিষ্টাংশ। কুজকো শহরের ১৬০০ ফিট নিচে এর অবস্থান হচ্ছে ৯৭০০ ফিট পাহাড়ের উপরে।
দুর্গের গঠন প্রণালী খুবই আকর্ষণীয়। তখন ইনকা সভ্যতার মানুষরা চাকার আবিষ্কার করতে পারেনি। লোহাও তারা আবিষ্কার করেনি। তামা ও ব্রোঞ্জ তাদের আবিষ্কৃত ধাতু। এত বড় বড় পাথর কেটে কি করে এত উঁচুতে তাঁরা তুলেছিল চাকা না থাকা সত্ত্বেও, সেটি একটি বিস্ময়কর ইঞ্জিনিয়ারিং কৃতকৌশল, সেই দেড় হাজার বছর আগের যুগের। প্রত্যেকটি পাথর কোনও মশলা ছাড়াই পরস্পরের উপরে বসানো হয়েছে। তার মধ্যে যে একটা চাকুও দুই পাথরের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করানো যাবে না। পেরুর ইনকাদের তৈরি এই পিরামিডের মতো প্রাসাদ দুর্গ কত যুদ্ধবন্দি ও ক্রীতদাসের শ্রম ও প্রানের বিনিময়ে তৈরি হয়েছিল তা ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। কোন কোন বিশেষজ্ঞের মতে ইনকাদের লক্ষ্য ছিল সৌন্দর্যের চেয়ে উপযোগিতায় বেশি। এতদিন পরেও বহু ভূমিকম্প ঘটলেও এই দুর্গে কোনও ফাটল দেখা যায়নি। আসলে দেয়ালগুলি এত সুন্দর, যে ইনকারা সেখানে কোন অলঙ্করণও করেনি। নিষ্ঠুর অত্যাচারী স্প্যানিশ উপনিবেশবাদীদের আক্রমণে বহু প্রাসাদ ও দুর্গ ইনকা সাম্রাজ্যের আমলের ধ্বংস হয়ে গেলেও এই দুর্গটি এত উঁচুতে থাকায় রক্ষা পেয়ে গেছে কোনোমতে।
ইনকা রাজাদের রাজত্বকালে ১২ জন ইনকা রাজা, ১১৫০ থেকে ১৫৩৩ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। প্রথম রাজা মালাকো আপাকা। কলম্বাসের ১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কারের পরও ৪০ বছর এই রাজত্ব টিকে ছিল। শেষ রাজার নাম আতা হুয়ালপা, যিনি মাত্র ১৫৩২ থেকে ৩৩ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। এবং স্প্যানিশ বিজে— তাদের বিশ্বাসঘাতকতায় নিহত হন। ইনকাদের সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল পেরুর থেকে উত্তরে ইকুয়েডর পর্যন্ত, এমনকি তারও উত্তরে কলম্বিয়া রাজ্যের আলগাসমাইও নদীর সীমানা পর্যন্ত এই সাম্রাজ্যের সীমানা বিস্তৃত ছিল। দক্ষিণ দিকে তা বিস্তৃত ছিল বলিভিয়ার একটা বড় অংশ, আর্জেন্টিনার কিছু অংশ এবং চিলির রাজধানী শান্তিআগো ছাড়িয়ে। দৈর্ঘ্যে তা ছিল চার হাজার কিলোমিটার লম্বা। পূর্বে দুর্গম আন্দিজ পর্বত এবং পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর, এই ছিল এই সাম্রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিম দু’দিকের সীমানা।
পাবলো নেরুদার মাচচুপিচচুর শিখরে আরোহণের সময়ের রাজনৈতিক ও পারিবারিক ঘটনাবলীর পটভূমি বিচারের দরকার। ১৯৩৬ সালে স্পেনের ফ্রাঙ্কোর স্প্যানিশ বাহিনী ও প্রজাতন্ত্রী বাহিনীর মধ্যে গৃহযুদ্ধের সময় তিনি চিলির কনসাল ছিলেন। তখন সেখান থেকেই তিনি ফ্রাঙ্কো পন্থী সরকারের বিরোধী ও প্রজাতান্ত্রিক সরকারের ও কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক হয়ে পড়েন। ফ্রাঙ্কোর ফ্যাসিস্ত বাহিনী যখন তাঁর প্রিয় বন্ধু স্পেনের শ্রেষ্ঠ কবি, গার্সিয়া লোরকাকে খুন করল তখন তিনি প্রবলভাবে এই ফ্যাসিস্ত ফ্রাঙ্কো সরকারের বিরোধী হয়ে গেলেন। ১৯৩৭ সালে স্পেনের প্রজাতন্ত্রের সমর্থনে ভ্যালেন্সিয়া, বার্সিলোনা ও মাদ্রিদে প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সমর্থনে যে আন্তর্জাতিক লেখক বুদ্ধিজীবীর সমাবেশ হয় সেগুলিতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। চিলির তৎকালীন সরকার তাঁকে কনসাল পদ থেকে বরখাস্ত করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি স্পেনের প্রজাতন্ত্রের সমর্থনে ‘আমার হৃদয়ের স্পেন’ কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন। ১৯৪০ সালে চিলির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তাঁকে মেক্সিকো সিটির কনসাল জেনারেল নিয়োগ করে মেক্সিকো দেশে দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩৭ সাল থেকে তাঁর জীবনে পরপর কিছু বিয়োগাত্মক ঘটনা ঘটে যায়। তাতে তাঁর মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে যায় এবং কন্যা ও বাবা এবং সৎ মা পরপর মৃত্যুর মুখে পতিত হন। ১৯৪৩ সালে তিনি মাচ্চু পিচ্চুর শিখর দেশে আরোহন করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি চিনির সিনেটে কমিউনিস্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৪৫ সালে আমেরিকার হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ নিয়ে বিরাট বিতর্কে ঝড় ওঠে বিশ্বজুড়ে।
১৯৪৬ সালে একটি স্প্যানিশ পত্রিকায় তাঁর ‘মাচ্চু পিচচুর শিখরে’ কবিতাটি প্রথম তাঁর মাতৃভাষা স্প্যানিসে প্রকাশিত হয়। ১৯৫০ সালে তাঁর ‘কান্ত জেনারেল’ কাব্যগ্রন্থে এই কবিতাটিও অন্তর্ভুক্ত হয়। মোট ১২টি পর্বে এই কবিতাটি লেখা হয়েছে। এই কবিতায় তাঁর আত্মজীবনী এবং ইনকা সভ্যতার হারানো ইতিহাস সব পারস্পরিকভাবে সম্পৃক্ত হয়ে আছে। প্রাচীন ইনকা জাতির পরিচিতি সত্তার এবং সেই বিষয়ে তাঁর আবেগ, অনুভব ও বাস্তব জড়িত উপলব্ধির কথা ধরা পড়েছে। কমিউনিস্ট মতাদর্শে প্রত্যয়িত থেকেও কবি নেরুদা স্বজাতীয় পূর্বপুরুষদের গৌরবের কথা এক মর্মস্পর্শী ভাষায় প্রকাশ করেছেন। মাচ্চু পিচ্চু র শিখরে তার ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়েই তিনি আবিষ্কার করলেন তাঁর নিজের সত্তা এবং ইনকা সভ্যতার হারিয়ে যাওয়া সত্তাকে। স্বীকারোক্তির আদলে লেখা এই কবিতায় ‘পাষানী মাতৃকার’ কথা লেখা আছে! এই পাষানী মাতৃকা আসলেই ইনকার সভ্যতার অন্তর সত্তা। আর সেই বিধ্বস্ত সভ্যতার অতীত রূপকারদের উত্তরসূরি হচ্ছেন কবি পাবলো নেরুদা নিজে, অন্তর দিয়ে তাকে গভীরভাবে অনুভব করলেন। মাচ্চু পিচ্চু অভিযানের মাধ্যমে সেই হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার পুনর্জন্ম লাভও চাইলেন তিনি। সমালোচক রবার্ট গ্রিং মিল এই অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, এই কবিতায় পাবলো নেরুদা নির্জনতা থেকে যাত্রা শুরু করে সংহতিতে পৌঁছে গেছেন।
‘মাচ্চু পিচ্চুর শিখরে’ কবিতার প্রথম পর্বে কবি অনামা পর্যটক হিসেবে মাচচু পিচচু শিখরে পরিভ্রমণ আরম্ভ করলেন। শুধু ধ্বংসাবশেষ নয় আরো কিছু পাওয়া যায় কিনা তার খোঁজ করতে লাগলেন। সেখানে যারা বাস করতেন তাদের স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে ফিরতে লাগলেন তিনি। হতাশ হয়ে ফিরতে হলো তাঁকে কিছুই পেলেন না। তিনি লিখেছেন,‘উল্কার প্রতি জড়ানো তরবারির মত/আমি আমার সুকুমার দামালো হাত/ নিমজ্জিত করেছিলাম মাটির মনোমুগ্ধকর জননে-ন্দ্রিয়ের মধ্যে।/আমি আমার কপাল রেখেছিলাম/নিচে তরঙ্গমমালায়,/জলের মতো একটি ফোঁটায় আমি গড়িয়ে গিয়েছিলাম গন্ধকময় শান্তিতে,/আর আমি ফিরে এলাম/ক্ষয়িত মানবিক বসন্তকালের জুঁই ফুলের কাছে।
এই কবিতার দ্বাদশ তথা চূড়ান্ত পর্বে এসে নেরুদা তাঁর ইনকা সভ্যতার পূর্বপুরুষদের উঠে দাঁড়াতে এবং আবার পুনর্জন্ম নিয়ে বসবাস করতে আহ্বান জানালেন, ‘আমার শব্দগুচ্ছের মধ্যে দিয়ে ও আমার মধ্যে দিয়ে তোমরা কথা কও’! এই দ্বাদশ পর্বটি ইনকা জাতিসত্তার ইতিহাস, পুরান, ও বিপ্লবের জন্য আহ্বান হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। নেরুদার মনে হলো ‘নিঃশব্দের প্রাসাদ, পবিত্র পিতৃভূমি’। তিনি অনুভব করলেন,‘বিস্মৃত কারো প্রাচীন হৃদয়'/‘তাঁর করতলে বন্দিত হচ্ছে হাজার বছর ধরে বন্দি পাখির মতো’!
নেরুদার যেন মনে হলো তাঁর মধ্য দিয়েই মাচ্চু পিচ্চুর ধ্বংসাবশেষের তলে চাপা পড়া এইসব ক্রীতদাসদের পুনরুত্থান ঘটছে। মৃত মানুষদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে চাওয়া কবি সমষ্টিগত যন্ত্রণার মুখপাত্র হয়ে যান। নেরুদা একটি ভাষণে বলেছেন,‘আমরা বহু শতাব্দীর শাস্তির বোঝা বহন করে চলেছি, সাধারণ মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত জীবনের বোঝাকে বহন করে চলেছি।’
নেরুদার অনুভবে, চেতনায় ওরা সব থেকে পবিত্র। ওরাই পাথর আর ধাতু দিয়ে চমৎকার সব মিনার চোখ ঝলসানো ও জলের মণি মানিক্য বানিয়েছে। ভয়াবহ ঔপনিবেশিক যুগে হঠাৎই ওদের সবকিছু লুটপাট হয়ে যায়। ওদের নিঃশব্দ করে দেয়া হয়। স্প্যানিশ উপনিবেশবাদের অভিশাপ থেকে আজও আমরা মুক্ত নই। স্বভাবতই ‘মাচ্চু পিচ্চুর শিখরে’ কবিতায় তাঁর ভাব- জগৎ জুড়ে থাকে শ্রমজীবী অনাদৃত জনগোষ্ঠী যারা মেনে নিয়েছে নিঃশব্দে ঔপনিবেশিক শাসনের সব দুর্ভাগ্যকে। অতলে হারিয়ে যাওয়া সেই জীবন আর নেই: ক্রীতদাসদের জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানান কবি অত্যাচারিত জাতিরই পুনরুত্থান প্রার্থনা করে বললেন:'আমি এসেছি তোমাদের মৃত মুখের মধ্যে দিয়ে মাটির এ মুড়ো ও মুড়ো পর্যন্ত থেকে ওষ্ঠাধর জোড়া দাও আর আমাকে বলো সারাটা রাত ধরে যেন আমি তোমাদের নগরে বাঁধা রয়েছি/আমাকে সবকিছু বলো। একটার পর একটা শেকল ধরে ধরে/শেকলের খাঁজগুলো ধরে ধরে ধাপের পর ধাপ/ তোমাদের রাখা ছুরি গুলোতে ধার দাও।/ আমার বুকে আমার হাতে স্থাপন করে দাও,/যেন হলুদ আলোর একটি নদী/ বহু পুমার মাটিচাপা পড়া এক নদী,/আর আমাকে কেঁদে ভাসা- তে দাও, ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, বছরের পর বছর,/শতাব্দীর পর শতাব্দী।/দাও আমাকে নিস্তব্ধতা জল আশা, দাও আমাকে সংগ্রামে লৌহ আগ্নেয়গিরি।/দেহগুলো আমাকে আঁকড়ে থাকো চুম্বকের মতো/ আশ্রয় নাও আমার ধমনীতে আর আমার মুখগহবরে।/কথা বল আমার সব যা বলি আমার রক্তের ভিতর দিয়ে’।
এইভাবে কবিতার উপসংহারে তিনি ইনকা সভ্যতার প্রাচীন শোষিত গরিব ক্রীতদাসদের পুনর্জাগরণ, পুনরুজ্জীবন লাভ আশা করলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ইনকা জাতিসত্তার ও পুনরুত্থানও আশা করলেন। নিজের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা থেকে নতুন আশায় ফেরাতেও তাঁর আকাঙ্ক্ষা অন্তর্নিহিত রাখলেন। ১৯৭১ সালে বৃদ্ধ কবি নোবেল প্রাইজ প্রাপ্তি উপলক্ষে ভাষণে বলেছেন,‘আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং ফিরে আসছি আমার কাজে, সেই সব কাগজের পাতায় যারা প্রতিদিন অপেক্ষা করে থাকতো যে সেই পাতাগুলি আমরা আমাদের রক্ত এবং অন্ধকার দিয়ে ভরিয়ে দেব বলে, কারণ রক্ত ও অন্ধকার দিয়ে কবিতা লেখা হয় এবং কবিতা লেখা হওয়া উচিত।’
‘‘The poetry of Pablo Neruda” শীর্ষক সমালোচনা গ্রন্থে সমালোচক রেনেদা কোস্তা বলেছেন,‘একদা তাঁকে ‘কবিতার পাবলো পিকাসো’ বলা হয়, তার কারণ হচ্ছে এই, যে তিনি কবিতায় তাঁর নিজের তৈরি করা ঐতিহ্যের সঙ্গে সংগ্রাম করতেন, যাতে প্রতিটি কাব্যগ্রন্থেই নতুন ধারার শৈলী সৃষ্টি করা যায়'।
পাবলো নেরুদার প্রথম স্মরণীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কুড়িটি প্রেমের কবিতা ও একটি হতাশার গান’ আজও যুবকদের কাছে উচ্ছল উজ্জ্বল প্রেমের কাব্য চয়নের উদাহরণ হিসেবে দারুন আকর্ষণীয় হয়ে আছে। তার তার স্ত্রী মারিয়া উচিলতেকে স্মরণ করে লেখা ‘একশোটি প্রেমের সনেট’ গুচ্ছ দাম্পত্য প্রেমের অবিস্মরণীয় কাব্যগ্রন্থ। ইংরেজ কবি রবার্ট ব্রাউনিং এর কবিনী স্ত্রী এলিজাবেথ ব্যারেট ব্রাউনিংয়ের ‘সনেটস ফ্রম দি পর্তুগিজ’ এর সঙ্গে অবশ্যই তুলনা করে যেতে পারে ,এই দাম্পত্য প্রেমের সনেটের সংকলনটিকে। তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘মর্তে বসত’ একটি জাগতিক অভিজ্ঞতা ও অনুভবের স্মরণীয় কাব্যগ্রন্থ হিসাবে আজও বিবেচিত হয়। ‘কান্ত জেনারেল’ সম্ভবত তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। তুচ্ছ ঘটনা ও তুচ্ছাতিতুচ্ছ জিনিসপত্রের ওপরে লেখা, ‘এলিমেন্টাল ওডস’ একটি বিশেষ ধরনের কাব্যগ্রন্থ: যে যে তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় তিনি কবিতা লিখেছেন, তা নিয়ে যে কবিতা লেখা সম্ভব সেটার স্বাক্ষর তিনি রেখে গেছেন। রাজনীতি ও কবিতার মেলবন্ধনে ‘পলিটিক্যাল পোয়েমস’ তাঁর একটি স্মরণীয় রাজনৈতিক কাব্যগ্রন্থ।
‘নোট বুক অব আইলা নেগ্রে’ তাঁর আত্মজীবনীমূলক কবিতার সম্ভার, যার মধ্যে দিয়ে তাঁর কবিতার অনন্য কাব্যশৈলী এবং তার আত্মজীবনীর বহু খণ্ড খণ্ড উপস্থাপনা আমাদের মুগ্ধ করবে। পাবলো নেরুদা লাতিন আমেরিকার অতীত থেকে বর্তমান, আধুনিক পৃথিবীর সঙ্কট ও বিজয় অর্জন গুলিকে নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে হাত বাড়িয়েছেন। দৃষ্টি প্রসারিত করেছেন সেই ভবিষ্যৎ পৃথিবীর আগামী ভবিষ্যতের দিকে— সমাজতন্ত্রের ও সাম্যবাদের অভিমুখে!
Comments :0