বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-কে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তার জন্য যৌথ কর্মসূচি নেওয়াও দরকার। কিন্তু আসন বোঝাপড়ার জন্য আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করা দরকার। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদ্য সমাপ্ত বর্ধিত অধিবেশনে এই বক্তব্যে সওয়াল করেছেন বিভিন্ন রাজ্যের নেতারা।
কংগ্রেসের সূত্র উল্লেখ করে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন মিটে যাওয়ার পর আসন বোঝাপড়ায় হাত দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন দলের এই নেতারা। একাধিক রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’-র অংশীদার দলগুলির সঙ্গে লড়াই হতে পারে কংগ্রেসের। সে সব রাজ্যের নেতারাই ধীরে এগনোর পক্ষে সওয়াল করেছেন।
হায়দরাবাদে হয়েছে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এই বৈঠক। লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে সবিস্তারে। মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানের নেতারা পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাসী বলে জানা গিয়েছে।
প্রত্যাশা মতোই কংগ্রেস নেত্রী এবং দলের সংসদীয় দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধী ‘ইন্ডিয়া’-র সমন্বয় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। রাহুল গান্ধী যদিও বলেছেন, বিরোধী মঞ্চকে শক্তিশালী করার শর্ত হলো কংগ্রেসের নিজের ভিত শক্ত করা। দুই দায়িত্বই পালন করতে হবে দলকে। সূত্রের বক্তব্য, দলেরই একাংশ কংগ্রেসেকে শক্তিশালী করার ওপর বেশি জোর দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, আসন বোঝাপড়া নিয়ে তাড়াহুড়োর ফলে কংগ্রেসে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিরোধী মঞ্চেরই সমস্যা হবে।
গত শনি এবং রবিবার হায়দরাবাদে বৈঠকে বিজেপি’র বিভাজনের রাজনীতিকে হারানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবিধান এবং ভারতচেতনা রক্ষার ওপর প্রচারে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের মেয়াদে গ্যাসের দাম থেকে ভোজ্য তেল বা ডালের দাম চড়া হারে বেড়ে যাওয়ার মতো বিষয়কে প্রচারে সামনে আনতে বলা হয়েছে। গুরুত্ব দেওয়া হবে কর্মহীনতার চড়া হারেও।
রবিবার বিভিন্ন রাজ্যে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রধানরা আলোচনা করেছেন। দিল্লি এবং পাঞ্জাবের নেতারা ‘আপ’-র গতিবিধি দেখার ওপর জোর দিয়েছেন। দুই রাজ্যেই কংগ্রেসকে হারিয়ে সরকারে আসীন আম আদমি পার্টি। এই দুই রাজ্যে যদিও এখনই ভোট নেই। তবে অজয় মাকেন, অলকা লাম্বার মতো নেতানেত্রীরা লোকসভায় ‘আপ’-র সঙ্গে সমঝোতার সময়ে কংগ্রেসের স্বার্থ বিবেচনায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
জানা গিয়েছে, জবাবী ভাষণে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আশ্বাস দিয়েছেন যে রাজ্যস্তরের নেতৃত্বের সঙ্গে পরামর্শ করেই জাতীয় স্তরে আসন সমঝোতার কাজ হবে।
মধ্য প্রদেশ বা ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্যে ‘আপ’ আলাদা প্রার্থী দেবে। মাকেন সেই দিকে নজর রেখে বলেছেন, এই রাজ্যগুলিতে কংগ্রেস সরকার গড়তে পারে। ‘আপ’ কিন্তু কংগ্রেসকে আক্রমণ করেই প্রচার করছে। বিধানসভা ভোট হলে তার ফলাফলের ভিত্তিতে আসন সমঝোতা বেশি কার্যকরী হবে। পাঞ্জাবে দলের নেতা প্রতাপ সিং বাজওয়াও একই মত জানিয়েছেন।
তবে ভিন্ন মতও এসেছে অধিবেশনে। আরেক অংশের নেতারা বলেছে যত দ্রুত সম্ভব আসন সমঝোতা সেরে নেওয়া দরকার। কারণ লোকসভা ভোট এগিয়ে আনার সম্ভাবনাও রয়েছে। আবার ‘এক দেশ এক ভোট’ কমিটি বৈঠক ডেকেছে ২৩ সেপ্টেম্বর। বিধানসভা ভোট সময়েই হবে, এখনই তা বলা যায় না। ফলে তার জন্য অপেক্ষা করাও কাজের হবে না। বরং সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ‘আপ’ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল বা সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদবের অবস্থান স্পষ্ট করে বুঝে নেওয়া ভালো।
বামপন্থীরা জানিয়েছে যে কেলারায় কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া যেমন সম্ভব নয়, তেমনই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি’র পাশাপাশি তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ার অবস্থান থেকে সরে আসা হবে না।
Comments :0