Nandakumar Somobay

আনন্দবাজারের খবরের কড়া বিরোধিতা ‘সমবায় বাঁচাও মঞ্চের’

রাজ্য

‘রাম বাম জোট’ অসত্য প্রচার

নন্দকুমারের সমবায়ে তৃণমূল পর্যুদস্ত হতেই মিথ্যা প্রচারের কারিগররা মাঠে নেমে পড়েছে। বাম-বিজেপি জোট তৃণমূলকে হারিয়েছে, এই মর্মে প্রচারের তীব্র বিরোধিতা করে মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়েছে ‘সমবায় বাঁচাও মঞ্চ’। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত সংবাদকে কষ্টকল্পিত ও ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়েছে মঞ্চ।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আনন্দবাজার পত্রিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমবায় বাঁচাও মঞ্চের বিরুদ্ধে যে  কষ্টকল্পিত, ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করেছেন আমরা তার তীব্র বিরোধিতা করছি’’। 

পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার ব্লকের বহরমপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচনে সবকটি আসনেই জয়ী হয়েছেন বাম ও প্রগতিশীল জোটের প্রার্থীরা। মোট ৬৩টি আসনের মধ্যে সবকটিতেই জয়লাভ করেছেন তাঁরা। রবিবার এই সমবায়ে নির্বাচন হয়। রাতে ফল প্রকাশ হয়। 
কিন্তু এই সমবায় সমিতির নির্বাচন নিয়ে অসত্য ও ঘৃণ্য প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি, তৃণমূল ও একাংশের সংবাদমাধ্যম। বিজেপি ঘোলা জলে মাছ ধরার মতো জয়ী কয়েকজন প্রার্থীকে নিজেদের বলে প্রচার করছে। সমবায় বাঁচাও মঞ্চ বামপন্থী সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও বিজেপি তাকে নিজেদের সংগঠন বলে প্রচার করছে। এদিন পশ্চিমবঙ্গ সমবায় বাঁচাও মঞ্চের পক্ষ থেকে বিজেপি, তৃণমূল ও একাংশের সংবাদমাধ্যমের এই অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা করে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সমবায় বাঁচাও মঞ্চ, রাজ্যের বাম, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক মনোভাব পোষণ করেন এমন সমবায়ীদের একটি সংগঠন। রাজ্যের সমবায় সমিতিগুলোকে দখল, লুটপাট ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে এই মঞ্চ গড়ে তোলা হয়েছে। 
এদিন সিপিআই(এম)র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, ততই মিডিয়াকে দিয়ে রাম-বাম একসঙ্গেবলে মিথ্যা প্রচার করা হবে। আসলে যারা তৃণমূলের যে নেতারা বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাঁরা তৃণমূলে ফিরলেও সাধারণ মানুষ ভুল ভেঙে লালে ফিরছেন। সমবায় নির্বাচন কোনও দলভিত্তিক নির্বাচন নয়। নন্দকুমারে সমবায়ে তিনশো ভোটারের কাছে সমবায়কে দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলীদের হাত থেকে বাঁচানোই মূল কথা ছিল, তাঁরা চোরেদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লুটেরাদের হারিয়েছেন। তৃণমূল তো সর্বত্র সমবায়কে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এই সমবায় সমিতিতে বিগত বহু বছর ধরেই বামপন্থী ও প্রগতিশীলরা পরিচালনা করছে। গত নির্বাচনেও তারাই জয়ী হয়। এবার সেই বোর্ড দখল করার জন্য তৃণমূল ও বিজেপি যৌথভাবে চেষ্টা করে। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রতিরোধে তাদের অপচেষ্টা বিফল হয়। এবারের নির্বাচনে ৬৩টি আসনেই প্রার্থী দেয় বাম ও প্রগতিশীল জোট। ৪৬টি আসনে তৃণমূল প্রার্থী দিলেও পরে ৩৫জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। ফলে আগেই ৫২টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় বাম ও প্রগতিশীল জোটের প্রার্থীরা। রবিবার বাকি ১১টি আসনে নির্বাচন হয়। এই ১১টি আসনেও জয়ী হয় এই জোটের প্রার্থীরা। বামপন্থীদের এই বিপুল জয়কে ছোট করে দেখাতে বিজেপি বাম প্রগতিশীল জোটের কয়েকজন প্রার্থীকে নিজেদের বলে প্রচার চালিয়েছে। বিজেপির এই ঘৃণ্য প্রচারের প্রতিবাদ করেছেন এলাকার মানুষজন। 
পশ্চিমবঙ্গ সমবায় বাঁচাও মঞ্চের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নেতা হিমাংশু দাস এই অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা করে এদিন বলেন, সাধারণ গ্রামের মানুষের কাছে অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়ার পর বামপন্থীদের সংগঠনকে নিজেদের বলে প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। আর বিজেপিকে সহযোগিতা করছে তৃণমূল। যাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বামপন্থী মনোভাবের মানুষদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করা যায়।
সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, বামপন্থীদের স্লোগান চুরি করার পর বামপন্থীদের সংগঠন, এমনকি জয়ী প্রার্থীদেরও চুরি করতে চাইছে বিজেপি। বিজেপি ও তৃণমূলের এই অপচেষ্টা সফল হবে না। আবার বামপন্থীরাই এই সমবায় সমিতির পরিচালক কমিটি পরিচালনা করবে। 
এদিন পশ্চিমবঙ্গ সমবায় মঞ্চের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সচেতন নাগরিকরা এটা জানেন সমবায় ব্যবস্থাকে লাটে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কেউ কম দায়ী নয়। এরা সমবায়ের নির্বাচিত পরিচালন কমিটির পরিবর্তে পশ্চিমবঙ্গে বা বিজেপি শাসিত রাজ্যে দলীয় লোকজনদের দিয়ে মনোনীত পরিচালন বোর্ড তৈরি করেছেন। কেউ কি দেখেছেন বিজেপি বা তৃণমূল দলের কেউ সমবায়ে নির্বাচন চাই এই দাবি তুলেছেন। আইনি লড়াই করে সমবায়ে নির্বাচন করার উদ্যোগ আমরাই গ্রহণ করেছি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সমবায়ের নির্বাচনে কোনও দলীয় প্রতীক ব্যবহৃত হয় না। সমবায়ের সাধারণ সদস্য যদি খেলাপি না হন তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। সেভাবেই নির্বাচন হয়ে আসছে। সমবায় বাঁচাও মঞ্চ দলীয় পরিচিতির ভিত্তিতে বা তৃণমূল, বিজেপির দলগুলোর সঙ্গে জোট গড়ে নির্বাচন করে না। সমবায়ে যারা প্রার্থী হবেন তারা কি কেউ বিজেপির সমর্থক এই অনুসন্ধান করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় না। বিজেপি, তৃণমূলের লুট ও দখলদারির বিরুদ্ধে লড়তে আগ্রহী কিনা সেটাই বিবেচ্য। কিছু সংবাদমাধ্যম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমবায় বাঁচাও মঞ্চের বিরুদ্ধে যে কষ্টকল্পিত সংবাদ পরিবেশন করেছেন তার তীব্র বিরোধিতা করেছে মঞ্চ।     
 

Comments :0

Login to leave a comment