বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে সবে। জনতার একের পর এক স্রোত ঢুকছে। সব বয়সের নাগরিকরাই রয়েছেন তাতে। উঠছে স্লোগান, বিচারের দাবিতে। মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। আবেগের উত্তাপে ম্লান হয়ে যাচ্ছে সরকারি ঔদাসিন্য।
সরকার উদাসীন। কোনরকমে একদফা আলোচনা হয়েছে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে ফয়সালা হওয়ার কোনও ইঙ্গিতই দেননি রাজ্যের মুখ্যসচিব। ফলে অনশন চলছে। অনশনরতদের একজন হাসপাতালে। তবু সরকারি তৎপরতা নজরে নেই। বরং, প্রতিবাদীদের পোরা হচ্ছে জেলে।
শুক্রবারই কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে জামিন পেয়েছেন ৯ প্রতিবাদী। অনশন মঞ্চ থেকেই ঘোষণা হয়েছে এই খবর। কলকাতা হাইকোর্টে পুলিশ আর প্রশাসন ফের খেয়েছে থাপ্পর। ঘোষণা হতেই হাততালিতে ফেটে পড়েছে গোটা চত্বর।
সিনিবর চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস আন্দোলনের পাশেই রয়েছে আগাগোড়া। আন্দোলন যে দীর্ঘমেয়াদী হবে তা জানিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের শরীরের দিকে নজর রাখার আবেদনও জানিয়েছে। আবেগ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে শঙ্কা। কী হবে অনশনে বসা চিকিৎসকদের। মোট সাতজন রয়েছেন অনশনে, আপাতত। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের দুই জুনিয়র চিকিৎসকও বসেছেন অনশনে। ধর্মতলার মঞ্চে সেই সঙ্গীদের লড়াই ঘোষণা করা হচ্ছে বারবার।
এই শুক্রবার মানে দুর্গাপুজোর অষ্টমী। এদিনই মহাসমাবেশের ডাক দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সমর্থন জানায় বামফ্রন্ট। এবারের পুজো মানে প্রতিবাদের উৎসব। প্রচুর দর্শনার্থী হয় এমন বহু জায়গায় সারিতে দাঁড়ানো জনতা স্লোগান তুলছেন বিচার চাই। দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারায় স্লোগান তোলার জন্য কেবল ৯ জনকে আটকে রাখা হয়েছে জেলে। তাঁদেরই জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে এদিন।
অনশন মঞ্চে চিকিৎসকরা বলছেন, প্রশ্ন তুলছেন সরকার আর পুলিশের ভূমিকায়। যে পুলিশ সেমিনার রুমের পাশের দেওয়ালটি ভেঙে দেওয়া আটকাতে পারে না, আর জি কর হাসপাতালেই প্রতিবাদীদের ওপর ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে ভয়াবহ হামলা আটকাতে পারে না, যে প্রশাসন এতদিন হাসপাতালে হাসপাতালে দুর্নীতি মেডিক্যাল কলেজে থ্রেট কালচার আটকাতে পারেনি, তারাই প্রতিবাদীদের আটকাতে এত মরিয়া কেন, উঠছে সে প্রশ্ন বারবার।
দশ দফা দাবি তুলেছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। মেডিক্যাল কলেজে গণতান্ত্রিক পরিবেশের দাবি জানিয়েছেন। দাবি তুলেছেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের। দাবি তুলেছেন কেন্দ্রীয় রেফারাল ব্যবস্থার। আর প্রতিবাদ করছেন সরকারি মিথ্যাচারের। স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগ দাবি করছেন জুনিবর ডাক্তাররা। আর সুপ্রিম কোর্টে সরকার কর্মবিরতিকে দায়ী করছে রোগী মৃত্যুর জন্য। চিকিৎসকরা বলছেন, বেড দেওয়ার কথা সরকারের, রেফার করে পাঠানোর একটি সুসংহত ব্যবস্থা থাকতে হবে, তা না হলে রোগী পরিষেবা বারবার ব্যাহত হবে। সেসব করার কথা সরকারের। তা না করে উলটে রোগীমৃত্যুর জন্য আন্দোলনকে দায়ী করছে। সুপ্রিম কোর্টে মিথ্যাচার করতে আটকাচ্ছে না।
DHARMATALA HUNGER STRIKE
পাশে থাকার বার্তায় জনস্রোত অনশন মঞ্চে
×
Comments :0