‘‘স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর এই সরকার। নির্বাচনী বন্ডের তথ্য তা স্পষ্ট করেছে। লাগামছাড়া গতিতে দেশের সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছে এই সরকার। এই প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে হবে।‘‘
বৃহস্পতিবার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে এ’কথা বলেছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ইশ্তেহারে দাবি, রাজনৈতিক দলগুলিকে কর্পোরেটের অনুদান বন্ধ করতে হবে এখনই। নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করতে হবে।
ইয়েচুরি জোর দিয়েছেন তারুণ্যের বিকাশ নিশ্চিত করার দাবিতেও। কাজের অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতির অবস্থানকে ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সিপিআই(এম) নির্বাচনী বন্ডে কোনও অর্থ নেয়নি। বরং, সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে। সেই মামলারই রায়ে দেশের জনতার সামনে এসেছে রাজনৈতিক দলে অস্বচ্ছ অনুদানের এই পদ্ধতি।
ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি পাঠিয়ে রাজনৈতিক তোলাবাজি হয়েছে। তহবিলে টাকা দিয়ে সরকারি কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। মুনাফার কয়েকগুন অর্থ বন্ড কিনতে খরচ করছে বিভিন্ন সংস্থা। টাকা এল কোথা থেকে? বিদেশ থেকে এলে অত্যন্ত উদ্বেগের। টাকা পাচার রোধ আইনে বিরোধীদের হেনস্তা করা হচ্ছে, অথচ এই লেনদেনের তদন্তে হচ্ছে না।’’
কর্মহীনতার প্রশ্নকে গুরুত্ব দিয়ে ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘স্নাতক যুবদের মধ্যে ৪২ শতাংশ কর্মহীন। তারুণ্যের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ শেষ করে দেওয়া হয়েছে। যারা দেশ গঠনে সম্পদ সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারতেন তাঁদেরই দিশাহীনতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার জন্যও জিডিপি’র ৬ শতাংশ বরাদ্দ হওয়া দরকার এই কারণেই।’’
তিনি বলেন, ‘‘কাজের অধিকারকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হবে। সরকারি কাজে শূন্যপদ পূরণ করতে হবে এখনই। গ্রামে একশো দিনের কাজের আওতা বাড়াতে হবে। কেবল তাই নয়, শহরে একশো দিনের কাজের নিশ্চয়তা আইনের ব্যবস্থা করতে হবে। সারা বিশ্বের মধ্যে ভারত সেই দেশগুলির অন্যতম, যেখানে যুবদের অংশ জনসংখ্যার মধ্যে বেশি। তারুণ্যের বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে।’’
ঘৃণা ভাষণের বিরুদ্ধে আইন করার দাবি তোলা হয়েছে ইশ্তেহারে। নাগরিকত্বের নামে বিভাজন হচ্ছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে। সিএএ বাতিলের দাবি তোলা হয়েছে ইশ্তেহারেও। ইউএপিএ এবং পিএমএলএ’র মতো আইন বাতিলেরও দাবি তুলেছে সিপিআই(এম)।
সরকারি কোষাগারে সম্পদ সংগ্রহে অতি ধনীদের ওপর কর বসানোর দাবি তোলা হয়েছে ইশ্তেহারে। বলা হয়েছে, সম্পদ কর বাসতে হবে।
শ্রম আইন বদলে চারটি শ্রম কোড পাশ করানো হয়েছিল। এই শ্রম কোড বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে ইশ্তেহারে। ন্যূতম মজুরি ২৬ হাজার টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে। কৃষকদের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তার দাবিও তুলেছে সিপিআই(এম)।
ইয়েচুরি বলেন, ‘‘রাজ্যগুলিকে দিতে হবে মোট করের অর্ধেক ভাগ। অর্থ কমিশন করের ৪২ শতাংশ অর্থ রাজ্যগুলিকে দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে পৌঁছায় অনেক কম।’’
সামাজিক ন্যায়ে গুরুত্ব দিয়েছে ইশ্তেহার। জাতিগত জনগণনা করার দাবি জানানো হয়েছে। ২০১১’র পর আর জাতিগত জনগণনা হয়নি। অন্য অনগ্রসর অংশের মানুষ কত, তার নতুন হিসেব নেই। সেই সঙ্গে বিধানসভা ও সংসদে মহিলাদের সংরক্ষণ অবিলম্বে চালু করার দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম)। দেশের মধ্যে প্রথম পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ চালু করেন বামপন্থীরাই, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে।
ইয়েচুরি বলেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীরে অবিলম্বে নির্বাচন করতে হবে। লোকসভা ভোট করাতে সুরক্ষা যদি বাধা না হয়, বোঝা দুষ্কর, কেন একসঙ্গে বিধানসভার ভোট করানো যাবে না। জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে।’’
CPIM MANIFESTO BOND
কর্পোরেটের টাকায় ভোট বন্ধ, তারুণ্যের বিকাশেও জোর ইশ্তেহারে
×
Comments :0