শুভ্রজ্যোতি মজুমদার
জমি হাঙ্গররা ষড়যন্ত্র করে বামফ্রন্ট সরকারের সময় জমির পাট্টা পাওয়া ১৭৭জন আদিবাসী বর্গাদারকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে হুগলী জেলার দাদপুর ব্লকের মূলগ্রামে। এই চেষ্টার বিরুদ্ধে কৃষকরা তীব্র প্রতিরোধে নামলেন সারা ভারত কৃষক সভা ও সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের নেতৃত্বে।
হুগলী জেলার পোলবা-দাদপুর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা কৃষিপ্রধান। চুঁচুড়া থেকে বাসে ব্যাতার মোড় নেমে আঁকাবাঁকা সর্পিল রাস্তা তিন কিলোমিটার এগোলেই মূলগ্রাম। এই গ্রামের বেশিরভাগ জমি তিন ফসলি। ধান, আলু এবং তিল, এই তিন শস্য চাষ হয় জমিতে। মূলগ্রামের জলাপাড়া বর্গাদার মান্য রায়, শম্ভু রায়, মদন ভূমিজ, বাদলি ভূমিজ, উর্মিলা ভূমিজ, অনু রায় এদিন একযোগে জানান, ১৯৯৪সালের ১৩এপ্রিল আমরা সবাই পাট্টা পেয়েছি বামফ্রন্ট সরকারের পক্ষ থেকে। আমরা পাট্টা যারা পেয়েছি, সবাই কায়িক শ্রম করে এই জমিতে চাষ করে ফসল ফলাই। আমাদের ১৭৭জন বর্গাদারকে উচ্ছেদ করার জন্য জমি হাঙ্গররা মামলা করেছে হাইকোর্টে। আমরা এই মামলার কিছু জানতাম না। পরে জানতে পেরেছি। বৈধ পাট্টা সত্ত্বেও এখন জমির দখল নেবে বলছে। অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০২০ সালে মামলা হয়েছিল, কিন্তু আমরা পাট্টাদার-বর্গাদারদের কেউ কিছু জানায়নি। পরে জানতে পারি, জমি থেকে উচ্ছেদের রায় হয়েছে। পুলিশ এসে উচ্ছেদ করবে শুনছি, তাই বুক দিয়ে জমি আগলানোর জন্য আমরা পথে নামতে বাধ্য হয়েছি। দখলদারদের চাপে এই অন্যায় হচ্ছে। সরকার তো ওদেরই।
এদিন বর্গাদারদের জমি উচ্ছেদ রুখে দিতে মূলগ্রামে সারা ভারত কৃষকসভা ও খেতমজুর ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সকাল থেকে গ্রামের অগণিত পাট্টাদার-বর্গাদাররা সমবেত হয়েছিলেন। বিক্ষোভ সভা থেকে স্লোগান ওঠে আদিবাসীদের পাট্টাপ্রাপ্ত জমি থেকে উচ্ছেদের তৃণমূলী চক্রান্তের বিরুদ্ধে সমস্ত মানুষ এক হও। পরে অগণিত বর্গাদার পাট্টাপ্রাপ্তরা বিশাল করেন মিছিল বাবনান এলাকা পরিক্রমা করে।
এদিন বিক্ষোভসভায় সারা ভারত কৃষকসভার হুগলী জেলা সম্পাদক স্নেহাশিস রায় ও খেতমজুর ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক রামকৃষ্ণ রায়চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। তাঁরা বলেন, সেই সামন্ত যুগ থেকেই গোটা দেশের জমির খাজনা ও ফসলের অধিকার ছিলো জমিদারদের হাতে। ব্রিটিশরা চলে গেলেও দক্ষিণপন্থী দলগুলোর ছত্রছায়ায় জমির ওপর বেআইনি আধিপত্য বিস্তারকারীদের রমরমা ছিল। সেই বিষবৃক্ষের গোড়ায় আঘাত করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। যুক্তফ্রন্ট সরকার ও দীর্ঘ বামপন্থী আন্দোলনের শিক্ষায় বেআইনি উবৃত্ত জমি ভূমিহীন ভাগচাষী ও বর্গাদরদের হাতে তুলে দিয়েছিল। জমিদারদের সিলিং-বহির্ভূত বেআইনি জমি রেকর্ড করে সেই জমি খাস হিসেবে ঘোষণা করে ভূমিহীন কৃষক, বর্গাদার, দরিদ্র কৃষক, খেতমজুরদের হাতে তুলে দিয়েছিল বামফ্রন্ট। ঐতিহাসিক বর্গা রেকর্ড যা এখনো সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতির বিষয়ে একটি গবেষণার বিষয়। গরিব মানুষ পাট্টা পেয়ে পশ্চিমবাংলাকে কৃষি সম্পদে স্বনির্ভর করেছিলেন। গ্রামীণ মানুষ পেয়েছিলেন বাঁচার অধিকার। নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১১ সালে পালাবদলের পর থেকে তৃণমূলের ছত্রছায়ায় নতুন করে আবার জমি মাফিয়া ও জমির দখলের নীতির সূত্রপাত হয়েছে। আইনি মারপ্যাঁচে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে গরিবের অধিকার। কোথাও ভেড়ি, কোথাও মাটি বিক্রি করে বা গোডাউন ওয়্যারহাউস গড়ে দখল করা হচ্ছে গ্রামীণ কৃষি জমি।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পাণ্ডুয়ার প্রাক্তন বিধায়ক খেতমজুর ইউনিয়নের নেতৃত্ব আমজাদ হোসেন, মিন্টু বেরা, বন্যা টুডু। তাঁরা বলেন, তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত জেলা পরিষদ ভূমি রাজস্ব দপ্তর সব জানে মামলা যখন হয়েছে সেখানে সুচতুরভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বর্গাদার পাট্টাদার দের উপস্থিতির কথা আইনের মার প্যাচে গরিব মানুষকে পাট্টা প্রাপ্ত জমি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এটা একটা বড় ষড়যন্ত্র। উপস্থিত ছিলেন জেলা গণআন্দোলনের নেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জি, ফারুক আহমেদ লস্কর, মাজেদ মন্ডল, সৌমেন্দ্র নাথ ঘোষ প্রমুখ।
Comments :0