অন্যকথা | মুক্তধারা
বাংলায় চড়কপুজোর ইতিকথা
তপন কুমার বৈরাগ্য
বাংলায় চড়কপুজার প্রচলন করেন ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে
সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামে এক রাজা।যতোটুকু জানা যায়
তিনি হুগলীজেলার কোনো একটা ছোট্ট অঞ্চলের রাজা
ছিলেন। তিনি নিজের কীর্তি অক্ষয় করে রাখতে এই পুজোর
প্রচলন করেন।কেবল রাজপরিবারেই এই চড়কপুজো
সীমাবদ্ধ ছিলো না ।সকল মানুষের মধ্যে এই পুজো ছড়িয়ে পড়ে।
রাজা এই পুজোর বিভিন্ন নামকরণ করেন।যেমন পাচমারা মেলা,
নীল পুজা, হাজরাপুজা ইত্যাদি।
এর আগে এই পুজো পাশুপত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত ছিল।
তখন এর নাম ছিল শিবের গাজন। রাজা সুন্দরানন্দ রায় এই
পুজো প্রচলন করলে আস্তে আস্তে এই পুজো দৈহিক
যন্ত্রণায় পরিণত হয়।চড়ককাঠে দোলা,বঁড়শি পিঠে নিয়ে
ঘুরপাক খাওয়া , শরীরে বাণ-বঁড়শি বিঁধানো ,আগুনে ঝাঁপ দেওয়া। এগুলো ছিলো মানুষের অন্ধবিশ্বাসের ফল।মানষের তখন দৃঢ় বিশ্বাস নিজেকে যদি নানাভাবে আত্মাহুতি দেওয়া যায় স্বয়ং মহাদেব সন্তুষ্ট হন।অনেকের এই নিষ্ঠুর খেলা দেখাতে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। দৈহিক যন্ত্রণা ও মৃত্যুর জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৮৮৫খ্রিস্টাব্দে এই নিষ্ঠুর প্রথা আইন করে বন্ধ করে দেন।তবে এখনো গ্রামে- গঞ্জে এই নিষ্ঠুর প্রথা প্রচলিত আছে। ১৪৮৫খ্রিস্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর চড়ক পুজার প্রচলন করার একবছর পর ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে শ্রীচৈতন্যদেব নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। গাজন একএক জায়গায়একএক নামে প্রচলিত।মালদহে গাজনের নাম গম্ভীরা।
জলপাইগুড়িতে গমীরা নামে প্রসিদ্ধ।বাংলার বিভিন্ন গ্রামেও
ধর্মঠাকুরের গাজন বসে। সেই গাজনমেলা সাধারণতঃ বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে বসে ।সেখানে তিন থেকে সাতদিন বিরাট
মেলাও বসে।ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেও চৈত্রমাসের শেষে শিবের আরাধনা এবং নাচগানের উল্লেখ আছে।পূর্ববর্ধমান জেলার কুড়মুনগ্রামে প্রায় পাঁচশতাব্দী প্রাচীন চৈত্রের শেষে গাজন অনুষ্ঠিত হয়।এই উপলক্ষে বিরাট মেলাও বসে।
Comments :0