জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত কলকাতার বি সি রায় শিশু হাসপাতালে ছয় শিশুর মৃত্যু। সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও অ্যাডিনো সঙ্কট কাটেনি শিশুদের। রাজ্য সরকারের ভরসা সেই সতর্কীকরণ এবং নির্দেশিকার ওপরেই। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে এখনো বহু শিশু লড়াই করছে মৃত্যুর সঙ্গে। বেশ কিছু শিশু রয়েছে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায়। তার মধ্যে মৃত্যুও ঘটছে দৈনিক অনেক শিশুর। বিভিন্ন বেসরকারি সূত্র অনুযায়ী সব মিলিয়ে গত জানুয়ারি মাস থেকে গোটা রাজ্যে জ্বর শ্বাসকষ্টে শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা ১৬০ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা গেছে। যদিও সরকারি মতে সেই সংখ্যা ১৯। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেহাল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকেই দায়ী করেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলি। জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বিসি রায় হাসপাতালে আরো ছয় শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রানাঘাটের বাসিন্দা ৯ মাসের শিশুপুত্র পাঁচদিন আইসিইউতে ছিল। মঙ্গলবার রাতে শিশুটির মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, শিশুটি অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত ছিল।
উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের ২১ মাসের এক শিশুকন্যা অ্যাডিনোভাইরাস উপসর্গ নিয়ে প্রথমে বারাসত হাসপাতালে গেলে তাকে সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হয়। গত ১৫ মার্চ থেকে বিসি রায় হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল। তারও মৃত্যু হয় বিসি রায় হাসপাতালে।
উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁর ১১ মাসের শিশু পুত্র জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি ছিল। একই উপসর্গ নিয়ে আইসিইউতে ছয় দিন ছিল শিশুটি। তারও মৃত্যু হয়েছে। বনগাঁ চাঁদপাড়ার সাড়ে চার মাসের শিশুকন্যা জ্বর, শ্বাসকষ্ট ছিল। এদিন সকালে তারও মৃত্যু হয়।
উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির দেড় বছরের শিশুপুত্রকে জ্বর, শ্বাসকষ্টের কারণে বিসি রায় হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে রাখা হয় শিশুটিকে। তারও মৃত্যু হয়েছে। বিসি রায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বড় জাগুলিয়ার বাসিন্দা তিন বছরের শিশুপুত্রের। শিশুটির পরিবারের দাবি এডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল।
অ্যাডিনোর দাপটে প্রতিদিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে শ’য়ে শ’য়ে শিশু। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলেছে মৃত্যু মিছিল। জ্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে এই মুহূর্তে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বহু শিশু। বেসরকারি মতে হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসাধীন শিশুর সংখ্যাও সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানের থেকে অনেকটাই বেশি বলে জানা যাচ্ছে।
গোটা রাজ্যের পাশাপাশি কোচবিহার জেলাতেও অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণের উপসর্গজনিত আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে হু হু করে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে কোচবিহার জেলাতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ সংক্রান্ত কোন তথ্যই নিয়মিত ভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে না সরকারি ভাবে। সরকার এবং প্রশাসনের এই ভূমিকায় ক্রমশ আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন এই জেলার সাধারণ মানুষেরা। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বুধবার ৮দফা দাবিকে সামনে রেখে কোচবিহার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ডেপুটেশন দিল কোচবিহার শহর রেড ভলান্টিয়ার্স।
অবিলম্বে কোচবিহার জেলায় কলকাতা ও শিলিগুড়ির মতো অ্যাডিনো ভাইরাস নির্ণয় কেন্দ্র চালু করা, অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের জন্য কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পৃথক ওয়ার্ড ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সহ উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা, হাসপাতালে ২৪ঘন্টা অক্সিজেন সরবরাহ ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ভেন্টিলেশন সিস্টেম সুনিশ্চিত করার দাবি এদিন উত্থাপন করা হয় কোচবিহার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে। এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব শুভব্রত সেনগুপ্ত সহ সাধন দেব, নীলোৎপল ভট্টাচার্য, সৌমি নন্দী, প্রাঞ্জল মিত্র, মিহির চন্দ প্রমূখ।
Comments :0