Alaida Guevara Kolkata

‘মনে হচ্ছে বেঁচে লক্ষ লক্ষ চে’ ........ বললেন ভালবাসায় আপ্লুত অ্যালেইদা

রাজ্য

 উষ্ণ আবেগে মিশে গেলেন বিপ্লবী চে গুয়েভারার কন্যা চিকিৎসক ও সমাজকর্মী অ্যালেইদা গুয়েভারা। শান্তি ও সংহতির আন্তর্জাতিকতাবোধ নিয়ে শুক্রবার কলকাতায় পা রেখেছেন তিনি। বাংলার মানুষ হৃদয় দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন। শনিবার সকালে উত্তরপাড়া গণভবনে অ্যালেইদা গুয়েভারাকে সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থার তরফে সংবর্ধনা জানানো হয়। সেখানকার উষ্ণতার ছোঁয়া নিয়ে কলেজ স্ট্রিটে এসএফআই’র উদ্যোগে বিভিন্ন সংগঠনের সংবর্ধনায় আপ্লুত হয়ে অ্যালেইদা গুয়েভারা বললেন, ‘‘বিপ্লবী চে-র মৃত্যু হয় না। এখানে এত মানুষের আবেগ আর ভালোবাসা দেখে মনে হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ চে বেঁচে আছেন।’’
এদিন বালিখাল থেকে জিটি রোড ধরে বর্ণাঢ্য পদযাত্রার মধ্য দিয়ে চে-কন্যা অ্যালেইদা গুয়েভারাকে উত্তরপাড়া গণভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। ধামসা-মাদলের তালের ঝঙ্কারের সঙ্গে মহিলা, ছাত্র-যুব, শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর ও গণনাট্য শিল্পী সহ বিভিন্ন গণ সংগঠনের কর্মী এবং সাধারণ মানুষের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অ্যালেইদা গুয়েভারা গণভবনে প্রবেশ করেন। এআইপিএসও ছাড়াও সিপিআই(এম) সহ বামপন্থী দল ও গণসংগঠনগুলির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় চে-কন্যাকে। গণভবনে সংবর্ধনা সভার শুরুতে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের রাজ্য সভাপতি হিরণ্ময় ঘোষালের নেতৃত্বে সংগঠনের শিল্পীরা পরিবেশন করেন সেই বিখ্যাত গান ‘গুয়ান্তানামেরা’। এই সময়ে আপ্লুত হয়ে সঙ্গীত শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের গানের সঙ্গে তাল মেলান অ্যালেইদা।
কলেজ স্ট্রিটের সংবর্ধনা সভায় অ্যালেইদা গুয়েভারা বলেছেন, ‘‘কিউবার জনগণ আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী, সংহতির ধারণায় বিশ্বাসী। বিশ্বের অন্য সমস্ত দেশের জনগণের সঙ্গে মিশে গিয়ে এক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান কিউবার জনগণ। বর্তমান বিশ্বে সংহতি গড়ে তোলা ভীষণ জরুরি। আমি কিউবার লোক বলে গর্ব বোধ করি। এক জন ভাল মানুষ হতে গেলে জনগণের সঙ্গে মেশা দরকার। নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে জনগণকে আপন করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আমি ২৪ বছর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম। ২৪ বছর আগের উষ্ণতা টের পাচ্ছি। আমাদের লড়াই করতে হবে এক নতুন পৃথিবীর জন্য। কোনও আপস করা যাবে না। আমাদের অনেক অনেক কাজ বাকি। আমাদের লড়াই জারি আছে। আমরা লড়াকু, আমরা সংগ্রামী। আমাদের এমন সমাজ গড়তে হবে, যে সমাজ সবার জন্য হবে।’’
এসএফআই, ডিওয়াইএফআই ছাড়াও শনিবার কলেজ স্ট্রিটে চে-কন্যা অ্যালেইদা গুয়েভারাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় সিআইটিইউ, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ, পশ্চিমবঙ্গ লেখক শিল্পী সঙ্ঘ, জনবাদী লেখক সঙ্ঘ, সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা, পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী ও লোকশিল্পী সঙ্ঘ, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন, অল ইন্ডিয়া ল’ইয়ার্স ইউনিয়ন-এর পক্ষ থেকে। তাঁকে সংবর্ধনা জানায় এবিটিএ, এবিপিটিএ, বিমা কর্মচারী ইউনিয়ন, ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ফেডারেশন, পশ্চিমবঙ্গ কলেজ শিক্ষা কর্মচারী ইউনিয়ন, ক্যালকাটা ইউনিভারসিটি এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন, পিএসইউ, প্রেসিডেন্সি কলেজ ছাত্র সংসদ ও এসএফআই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও।
কলেজ ষ্ট্রিটে সংবর্ধনা চলাকালীন শিল্পীদের তুলির টানে চে গুয়েভারা ও কিউবার বিপ্লবের কথা তুলে ধরেন দীপালি ভট্টাচার্য, মনীষ দেব, কমল আইচ, সুব্রত বসু, দীপাঞ্জন বসু, রত্না বসু, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনিরুদ্ধ মুখার্জি। এই সংবর্ধনা সভা সঞ্চালনা করেন তপারতি গঙ্গোপাধ্যায়। কলেজ স্ট্রিটের অনুষ্ঠানে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ, ক্যালকাটা ইউথ কয়্যার-এর পাশাপাশি সঙ্গীত পরিবেশন করেন কামাল নাসের, কল্যান সেন বরাট সহ একাধিক শিল্পী।
কলেজ স্ট্রিটের সংবর্ধনা সভায় ছাত্র-যুব-মহিলা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা রবীন দেব, অধ্যাপক অঞ্জন বেরা, এসএফআই’র সাধারণ সম্পাদক ময়ুখ বিশ্বাস, রাজ্য সভাপতি প্রতীক-উর রহমান, রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা কনীনিকা ঘোষ সহ বিভিন্ন গণ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সেখান থেকে অ্যালেইদা পৌঁছে যান হেদুয়ার আচার্য সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায়। সেখানেও তাঁকে সংবর্ধিত করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সিপিআই(এম) নেতা কল্লোল মজুমদার, সুখেন্দু পানিগ্রাহী সহ নেতৃবৃন্দ। ব্যস্ততার মধ্যেও এই বিজ্ঞান মেলায় আসার জন্য তাঁরা অভিনন্দন জানিয়েছেন চে-কন্যাকে। 
উত্তরপাড়া গণভবনে অ্যালেইদা গুয়েভারাকে সংবর্ধনা দেন বিশ্ব শান্তি সংসদের সভাপতি পল্লব সেনগুপ্ত, এআইপিএসও’র রাজ্য সম্পাদক অঞ্জন বেরা, রাজ্যের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা শমীক লাহিড়ী, দেবব্রত ঘোষ, কনীনিকা ঘোষ, জাহানারা বেগম, জ্যোতিকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, দেবব্রত ঘোষ প্রমুখ। সংবর্ধনা দেওয়া হয় সিপিআই(এম), সিআইটিইউ, এআইটিউসি, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন, কৃষকসভা, ডিওয়াইএফআই, পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী ও লোকশিল্পী সঙ্ঘ, এসএফআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই প্রভৃতির পক্ষ থেকেও। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী ও লোকশিল্পী সঙ্ঘের তারকেশ্বরের শিল্পীরা টুসু ও ভাদু গান পরিবেশন করেন। এই সংবর্ধনা সভা পরিচালনা করেন শ্রুতিনাথ প্রহরাজ। 
এদিন উত্তরপাড়ায় সংবর্ধনা সভার পর ক্ষণিক বিশ্রামের ফাঁকে শিশুদের সঙ্গে আলাপচারিতা করেন ডাঃ অ্যালেইদা গুয়েভারা। পেশায় শিশু চিকিৎসক ডাঃ গুয়েভারা তাদের কয়েক জনকে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শও দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যেখানেই থাকি না কেন, আদতে তো আমি একজন চিকিৎসক।’’ তাঁর এই কথার মধ্যে অনেকেই বাবা ডাঃ আর্নেস্তো চে গুয়েভারার প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেয়েছেন।

Comments :0

Login to leave a comment