প্রবীর দাস
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে দিয়ে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন না করিয়ে আরএসএস প্রমাণ করলো বিজেপি আদানি, আম্বানি এবং সর্বপরি উঁচু বর্ণের হিন্দুদের হিসেব করে চলে। শুক্রবার কালিনগরের সভায় দাঁড়িয়ে নতুন সংসদভবন উদ্বোধন নিয়ে মোদীর এই সিদ্ধান্তে সমালোচনায় এ কথা বলেছেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা কনীনিকা বোস ঘোষ। লুটেরাদের হাত থেকে পঞ্চায়েত কেড়ে নেওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি।
নতুন সংসদভবন উদ্বোধন হতে চলেছে ২৮ মে। সংসদীয় রীতি অনুযায়ী উদ্বোধন করার কথা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর। সংসদের অধিবেশন ডাকেন তিনি, অধিবেশন শুরুও হয় তাঁর ভাষণ দিয়ে। মহিলা নেত্রীরা বলেছেন, অদ্ভূত হলেও সত্যি নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
কালিয়াগঞ্জ, হাঁসখালি সহ রাজ্যজুড়ে ঘটে চলা নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে, দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গড়ে তুলতে, স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে, সমস্ত মহিলাদের সমান কাজে সমান মজুরির দাবিতে, একশো দিনের কাজের দাবিতে, ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিতে সভা ও মিছিল হয় সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি সন্দেশখালি-১ নম্বর আঞ্চলিক কমিটির আহ্বানে। বেতনী নদীর পাড়ে কালিনগর সবজি বাজারের সভায় সভাপতিত্ব করেন ঊমা প্রামানিক। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদিকা কনীনিকা বোস ঘোষ ছাড়াও দাবিগুলির সমর্থনে এদিনের সভায় বক্তব্য রাখেন, অতসী চক্রবর্তী, আরতি দাস, রাধারানি সর্দার।
শুরুতে কালিনগরে সিপিআই(এম) সন্দেশখালি-১ নম্বর এরিয়া কমিটির দপ্তর সংলগ্ন এলাকায় সভা থেকে স্লোগান ওঠে- ‘চোর ধরো জেল ভরো’, ‘নারী নির্যাতনকারী সরকার আর নেই দরকার’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল দূর হটো, চাকরি চুরির সরকার আর নেই দরকার’, ‘শ্রমিক কৃষক খেতমজুরদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে মহিলা সমিতি লড়ছে’। কালিনগর বাজার সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কালিনগর সবজি বাজারের সভাস্থলে আসে মিছিল। সভায় আসা সন্দেশখালির যন্ত্রণাক্লিষ্ট মহিলাদের মেজাজ ও সাহসকে কুর্নিশ জানিয়ে কনীণিকা বোস ঘোষ বলেন, ‘‘কালিনগর পঞ্চায়েত আপনাদের ছিল। সমাজবিরোধীরা কেড়ে নিয়েছে। গ্রাম সংসদ সভা না করে লুটের টাকা পকেট ভর্তি করছে। গোটা রাজ্যের মানুষ দেখছে কোটি কোটি টাকা কী ভাবে লুট করেছে তৃণমূল। পূর্ব মেদিনীপুরের আরজুনা বিবি ঘর চাইতে গিয়ে পুলিশের ভারি বুটের আঘাত পেয়েছে। ১০০দিনের কাজ করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজ করে মেয়েদের হাতে পয়সা আসতো। তাঁরা সংসারের অভাব মেটাতেন। এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিতে সুদের কারবার চলছে।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘আচ্ছে দিন আসবে বলেছিলেন মোদী। কবে আসবে আচ্ছে দিন? আচ্ছে দিন তো এখন বিজেপি তৃণমূলের। মিলেমিশে লুট করে খাচ্ছে। করোনায় মানুষ মারা গেল। আমফানে ঘরের চাল উড়লো। অথচ বিজেপি তৃণমূল লুটে খেল। চুরি, ডাকাতি এখন বিজেপি, তৃণমূলের লক্ষ্য। আমাদের লক্ষ্য এই চোর ডাকাতগুলিকে গ্রাম ছাড়া করা। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সব হিসাব নিকেশ বুঝে নিতে হবে। ২০১৮পঞ্চায়েতে মহিলাদের উপর নির্যাতন নামিয়ে এনেছিল। ২০২৩পঞ্চায়েতে ঘরের ঝাঁটা, হাতা খুন্তি গুছিয়ে রাখুন। পঞ্চায়েত মানে আপনাদের সবার পঞ্চায়েত। সেই পঞ্চায়েত হবে মানুষের পঞ্চায়েত। শপথ নিন লুটেরাদের পঞ্চায়েত থেকে তাড়িয়ে খেটে খাওয়া শ্রমজীবীদের পঞ্চায়েত গড়ব।’’
অতশী চক্রবর্তী বলেন, বাংলার নারীসমাজ, বেকার যুবক, যুবতী সর্বোপরি মেহনতি মানুষ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মমতা ব্যানার্জির রাজত্বে। রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার হাল এমনই যে মৃত পাঁচ মাসের শিশুকে অসহায় পিতা ব্যাগের ভিতরে নিয়ে যেতে বাধ্য হন একটি অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায়। আরতি দাস বলেন, জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া। গ্যাসের দাম বাড়ছে। এই নিয়ে একটি কথাও খরচ করে না বিজেপি তৃণমূল। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তৃণমূল ভোট লুট করতে এলে রুখে দিতে হবে সন্দেশখালির মহিলাদের।
এদিন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিবস। এই দিনটিকে সম্প্রীতির দিবস হিসেবে পালন করে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি রাজ্যজুড়ে চলছে সদস্য সংগ্রহের কাজ।এদিন কালিনগরের জনসভা শুরুর আগে রাজ্য সম্পাদিকা কনীনিকা বোস ঘোষ,অতশী চক্রবর্তী, আরতি দাস, সুনীতা দাস,বেলা দাস,উমা প্রামানিক সহ অন্যান্য নেত্রীবৃন্দ বাড়ি বাড়ি সদস্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি রাজ্যে নারী নির্যাতন,দুর্নীতি সহ হাড়হিম করা সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
Comments :0