সরকারি কোষাগার থেকে জনগণের দেওয়া করের টাকায় দীঘায় জগন্নাথ মন্দির বানিয়ে, নিউ টাউনে দুর্গা মন্দিরের শিলান্যাস করে এবং আগামী মাসে শিলিগুড়িতে মহাকাল মন্দিরের শিলান্যাসের কথা ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়ে দিয়েছেন তিনিই আসল ধর্মনিরপেক্ষ। কেন তিনি আসল ধর্মনিরপেক্ষ বা ইংরেজিতে সেকুলার নিজের মতো করে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি সব ধর্মকে সমান চোখে দেখেন, সব ধর্মের অনুষ্ঠানে অংশ নেন, সর্বোপরি স্কুল-হাসপাতাল-রাস্তাঘাটের উন্নয়নে এবং মানুষের রুজি রোজগার বৃদ্ধির জন্য বরাদ্দ অর্থ একের পর এক মন্দির নির্মাণে খরচ করছেন। অর্থাৎ রাজ্যে উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান অপেক্ষা মন্দির নির্মাণে তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। ধর্মের প্রতি বিশেষ করে হিন্দু ধর্মের প্রতি তাঁর এই অনুরাগের ফলে ধর্মান্ধ সাধুসন্তরা নিঃসন্দেহে মাথায় তুলে রাখবেন।
তিনি সব ধর্মকে সমান চোখে দেখেন, সব ধর্মের আচারে অংশ নেন এবং সব ধর্মের জন্য তাঁর সরকার অঢেল অর্থ ব্যয় করে। মমতা ব্যানার্জির এমন দাবি পূর্ণাতা পেতে তাঁর এখনও অনেক কাজ বাকি। আপাতত তাঁর সরকার তিনটে হিন্দু মন্দির বানানোর ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এখনও কোনও বড় আকারে মসজিদ বানানোর প্রকল্প হাতে নেননি। সেই সুযোগে তাঁরই একদা একান্ত অনুগত হুমায়ুন কবীর মুর্শিদাবাদে সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। অবশ্য মমতা ব্যানার্জির এই মসজিদ নির্মাণের ঘোরতর বিরোধী। কিন্তু কেন বিরোধী তার অকাঠ্য কোনও যুক্তি শোনা যায়নি। হয়তো তিনি নিজেই বাবরি মহজিদ বানাবার কথা ভেবেছিলেন কিন্তু হুমায়ুন সেটা ছোঁ মেরে নিয়ে নিয়েছে তাই তিনি প্রবল ক্ষুব্ধ। এই অবস্থায় হুমায়ুনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার চেয়েও বড় মসজিদ নির্মাণে ঝাঁপাবেন কিনা এখনও স্পষ্ট নয়। তেমনি খ্রিস্টানদের জন্য কোনও গির্জাও তাঁর সরকার এখনও বানায়নি। তৃণমূল সরকার মন্দির, মসজিদ, গির্জা বানালে বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পারসিরাই বা বাদ যাবেন কেন। মমতা নিশ্চয়ই তাদের জন্যও উপাসনাস্থল বানিয়ে দেবেন।
মমতা বলেছেন সব ধর্মের আচার-সংস্কার-রীতি মেনে তিনি তাতে অংশ নেন। তাই তিনি আসল ধর্মনিরপেক্ষ। অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতার পিণ্ডি চটকিয়ে তার নতুন ব্যাখ্যা হাজির করেছেন। দুনিয়া জানে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্ম প্রতেক মানুষের নিজস্ব বিশ্বাস এবং একান্তই ব্যক্তিগত। মানুষ তাদের নিজেদের মতো করে নিজেদের ধর্মাচারণ করবেন। রাষ্ট্র বা সরকার নিজে যেমন ধর্মের সঙ্গে জড়াবে না তেমনি ধর্মও রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বহিত থাকবে। আবার রাজনীতিও থাকবে ধর্ম থেকে দূরে। মমতা ব্যানার্জি সম্পূর্ণ উলটো পথে হেটে ধর্ম, রাজনীতি, সরকার ও রাষ্ট্রকে একাকার করে দিয়েছেন। ধর্মের আবেগকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি করছেন, ভোটে সুবিধা পেতে চাইছেন। ভোটের রাজনীতির এই স্বার্থ সঙ্কীর্ণতা ধর্মীয় বিভাজনের জমি তৈরি করছে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সামাজিক সমন্বয়-সংহতি নষ্ট করে বৈরিতা তৈরি করে আদতে আরএসএস’র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকেই পুষ্ট করছে।
Editorial
ধর্মের আশ্রয়ে মমতা
×
Comments :0