Post Editorial

কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন বাতিল কেন?

উত্তর সম্পাদকীয়​

বি ভেঙ্কট
 

১২৫ দিনের বিভ্রম, ৬০ দিনের নিষেধাজ্ঞা – জি রাম (জি) -এর নামে দরিদ্রদের ওপর বিজেপি’র সরাসরি আঘাত। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন, ২০০৫ বাতিল করেছে এবং তার পরিবর্তে সংসদে একটি নতুন বিল পাস করেছে, যার শিরোনাম ‘বিকশিত ভারত – গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ)’ সংক্ষেপে ভিবি-জি রাম (জি)। সরকার দাবি করছে যে এই নতুন আইনটি তাদের ‘বিকশিত ভারত–২০৪৭’ ভিশনের অংশ।
এই বিলের উদ্দেশ্য এবং কারণগুলো তফসিলের ৯ নম্বর পয়েন্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মজুরদের জন্য বর্তমানে ১০০ দিনের যে কর্মসংস্থান দেওয়া হয়, যেটা বাড়িয়ে ১২৫ দিন করা হবে, তবে কৃষি মরশুমের সময়ে এই প্রকল্প ৬০ দিনের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে করা হবে, যাতে কৃষকদের জন্য কৃষি শ্রমিক সহজলভ্য থাকে; কর্মসংস্থান ব্যয়ে কেন্দ্রের শেয়ার ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬০ শতাংশ করা; রাজ্যগুলোর শেয়ার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা; এবং প্রযুক্তির ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরতাকে কার্যকর করা।
এই বিলে ৮টি অধ্যায়, ৩৭টি ধারা, একাধিক সেকশন ও সাব-সেকশন এবং দুটি তফসিল রয়েছে। এর প্রভাবগুলো বোঝার জন্য প্রথমে বর্তমান এমজিএন রেগা, ২০০৫-এর মৌলিক ভিত্তিগুলো স্মরণ করা প্রয়োজন।
এমজিএন রেগা–২০০৫-এর মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ
বামপন্থীদের দীর্ঘ লড়াইয়ের ফসল এমজিএন রেগা–২০০৫ কিছু মৌলিক নীতির ওপর নির্মিত। এগুলোই এর মেরুদণ্ড। এটি গ্রামীণ এলাকার প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ককে আইনি অধিকার হিসাবে বছরে অন্তত ১০০ দিনের কর্মসংস্থানের গ্যারান্টি দেয়। যে কোনও ব্যক্তি কাজ দাবি করলে তাকে কোনও বাজেটের ঊর্ধ্বসীমা ছাড়াই কর্মসংস্থান প্রদান করতে হবে। এই প্রকল্পটি চাহিদা-চালিত (ডিমান্ড-ড্রাইভেন), বাজেট-চালিত নয়। বাজেটের বরাদ্দ অনুযায়ী কাজের দিনের সংখ্যা সীমিত করা যাবে না। এটি দেশের একমাত্র আইন যাতে কোনও বাজেট সংক্রান্ত শর্ত নেই। এই আইনের অধীনে ব্যয়ের ৯০ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকার এবং ১০ শতাংশ রাজ্যগুলো বহন করে। যদি কাজ চাওয়ার জানানোর ১৫ দিনের মধ্যে কর্মসংস্থান প্রদান না করা হয়, তবে বেকার ভাতা প্রদান করতে হবে। এই আইনের অধীনে গৃহীত কাজগুলোতে কৃষি জমিতে যাওয়ার গ্রামীণ রাস্তা, পুকুর বা ট্যাঙ্কের পলি অপসারণ, তফসিলি জাতি (এসসি), তফসিলি উপজাতি (এসটি) এবং অনগ্রসর (বিসি) সম্প্রদায়ের জন্য জমি উন্নয়ন, কলোনি উন্নয়ন এবং আবাসন নির্মাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল।
কেন্দ্রের প্রবর্তিত যে কোনও নতুন আইনকে কেবল তখনই ‘উন্নয়নমূলক’ বলা যেতে পারে যদি এটি পূর্ববর্তী আইনের ভিত্তিগুলোর উন্নতি ঘটায়।
দুটি আইনের তুলনামূলক আলোচনা
১) চাহিদা-ভিত্তিক গ্যারান্টি থেকে বাজেট-নিয়ন্ত্রিত প্রকল্পে রূপান্তর - এমজিএন রেগা– ২০০৫-এর অধীনে বাজেটের কোনও সীমা নেই। খরচ নির্বিশেষে কাজ চাওয়া প্রত্যেককে কর্মসংস্থান দিতেই হবে। তবে নতুন বিলের ৪(৫) ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রতিটি রাজ্যের জন্য অগ্রিম বাজেট বরাদ্দ নির্ধারণ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এটি আসলে চাহিদা-চালিত ব্যবস্থাকে পালটে দিয়ে এমন একটি ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যেখানে কর্মসংস্থানের দিবস সংখ্যা কেন্দ্রীয় বরাদ্দের উপর নির্ভরশীল থাকবে। এছাড়া, ৪(৬) ধারায় বলা হয়েছে, যদি ব্যয় কেন্দ্রের বরাদ্দের চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান দিবসে কাজ করানো হয়, তবে পুরো অতিরিক্ত বোঝা রাজ্য সরকারকেই বহন করতে হবে। এটি স্পষ্ট যে কর্মসংস্থান এখন মানুষের অধিকারের দ্বারা নয়, বরং কেন্দ্রের বরাদ্দকৃত অর্থের দ্বারা নির্ধারিত হবে। ইতিমধ্যে রাজ্যগুলো কেন্দ্রের অর্থ না দেওয়া এবং বহু দেরি করে দেওয়ায় গরিব শ্রমজীবীরা অনেক দেরিতে মজুরি পাচ্ছেন। 
২) কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস
এমজিএন রেগা – ২০০৫-এর অধীনে মানুষের যখনই প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ দাবি করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু নতুন বিলের ৬(২) ধারার বলা আছে, তথাকথিত কৃষি মৌসুমের সময় কর্মসংস্থানের ওপর ৬০ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
বাস্তবে এটি কি কৃষকদের জন্য উপকারী? কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যই দেখায় যে এমজিএন রেগা-র অধীনে কর্মরতদের মধ্যে ১৮.৬৩ শতাংশ দলিত এবং ১৭.৩২ শতাংশ আদিবাসী, মোট ৩৬ শতাংশ। বাকি ৬৪ শতাংশ অনগ্রসর (বিসি), সাধারণ (ওসি) এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। দলিত এবং আদিবাসীরা মূলত ভূমিহীন পরিবার, যারা মজুরি শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। অনগ্রসর ও সাধারণ শ্রেণির শ্রমিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো ক্ষুদ্র কৃষক যারা তাদের নিজস্ব কৃষি যখন লাভজনক থাকে না তখন এমজিএন রেগা-র কাজের আশ্রয় নেয়।
সরকারি তথ্যে অনুযায়ী, বেশিরভাগ কর্মসংস্থানের দিন তৈরি হয় ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে, যখন কৃষিকাজ কম থাকে। গত আর্থিক বছরে ২৮৬ কোটি কর্মদিবস তৈরি হয়েছিল এবং তার আগের বছর ৩০৮ কোটি। চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬৮ কোটি কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু রাজ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কর্মদিবস মার্চ থেকে জুলাই মাসের মধ্যে তৈরি হয়েছে।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে,  শ্রমিকরা এমজিএন রেগা-তে তখনই ফিরে আসে যখন কৃষিতে কর্মসংস্থান তৈরি হয় না। কৃষি মৌসুমের নামে ৬০ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দরিদ্রদের পায়ে দড়ি বাঁধার মতো। কৃষি কাজ যখন মৌসুমে থাকে, তখন কৃষি শ্রমিক প্রাকৃতিকভাবেই পাওয়া যায়। সরকারের দাবি একটি ডাহা মিথ্যা। কোনও কৃষক কখনও এমজিএন রেগা কাজ নিষিদ্ধ করার দাবি জানাননি। কৃষকরা যা দাবি করেছেন তা হলো এমএসপি (এমএসপি) এবং চাষের উপকরণের ক্রমবর্ধমান খরচের জন্য সহায়তা মূল্যের বৃদ্ধি, যা মোদী সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে।
৩) রাজ্যগুলোর ওপর আর্থিক বোঝা চাপানো– যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আক্রমণ
গত আর্থিক বছরে এমজিএন রেগা-তে  ৯৩,৮৫০ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্র দিয়েছিল ৮৫,৩৩৩ কোটি টাকা (৯০ শতাংশ), আর রাজ্যগুলো দিয়েছিল প্রায় ৮,৫০০ কোটি টাকা (১০ শতাংশ)।
নতুন বিলের অধীনে কেন্দ্রের দেয় ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬০ শতাংশ করা হচ্ছে, আর রাজ্যের অংশ ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশ হবে। এর মানে রাজ্য সরকারগুলোর ওপর ২৯,০০০ কোটি টাকারও বেশি অতিরিক্ত বোঝা চাপানো হবে।
রাজ্য বর্তমান কেন্দ্রীয় তহবিল (কোটি টাকা) নতুন নিয়মে ৬০ শতাংশ কেন্দ্রীয় তহবিল (কোটি টাকা) হ্রাস/ঘাটতি (কোটি টাকা)
তামিলনাড়ু ৯,৮৪৩ ৬,৫৬২ -৩,২৮১
উত্তর প্রদেশ ৯,১৪ ৬,০৯৮ -৩,০৪৯
অন্ধ্র প্রদেশ ৭,৩১৫ ৪,৮৭৭ -২,৪৩৮
রাজস্থান ৬,৭৬৩ ৪,৫২৯ -২,২৫৪
বিহার ৬,২২ ৪,১৪৭ -২,০৭৪
কর্নাটক ৫,৬৩৮ ৩,৭৫৯ -১,৮৭৯
কেরালা ৩,৪৯১ ২,৩২৭ -১,১৬৪
চন্দ্রবাবু নায়ডু, পবন কল্যাণ এবং জগন মোহন রেড্ডির মতো নেতারা তাদের রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করার পরিবর্তে সংসদে এই বিলের পক্ষে উৎসাহের সাথে ভোট দিয়েছেন। রাজ্যগুলোর ওপর ভয়ঙ্কর আর্থিক বোঝা চাপানো কি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ? রাজ্যগুলোর সাথে পরামর্শ না করে এবং তাদের সম্মতি ছাড়া আইন পাশ করা কি সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রতিফলন? এটিই হলো মোদী অ্যান্ড কোম্পানির প্রচারিত ‘নয়া গণতন্ত্র’-এর নয়া সংস্করণ!
৪) ১০০ থেকে ১২৫ দিন– একটি নিছক বিভ্রম
সরকার উচ্চস্বরে দাবি করছে যে কর্মসংস্থান ১০০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২৫ দিন করা হয়েছে। কিন্তু ২০০৫ সালের আইনেও ১০০ দিন ছিল কেবল একটি ন্যূনতম সীমা, সর্বোচ্চ নয়।
সরকারি তথ্য দেখায় যে গত আর্থিক বছরে ৫.৭৮ কোটি পরিবার এমজিএন রেগা-র অধীনে কাজ করেছে, কিন্তু মাত্র ৪০.৭ লক্ষ পরিবার ১০০ দিনের কাজ সম্পন্ন করেছে। অর্থাৎ মাত্র ৮ শতাংশ-এরও কম।
আসল বাধা আইন নয়, বরং বাজেট বরাদ্দের পদ্ধতিগত হ্রাস। যখন এমজিএন রেগা চালু হয়েছিল, তখন বরাদ্দ ছিল কেন্দ্রীয় বাজেটের প্রায় ৪ শতাংশ। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এটি ক্রমাগত কমানো হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে ১.৪ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ছাঁটাই করার পর বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে মাত্র ১.৩৭ শতাংশ বা ৮০,০০০ কোটি টাকা।
এই পরিস্থিতিতে প্রতিটি পরিবারকে ৫০ দিনের কাজ দেওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই মৌলিক সীমাবদ্ধতাগুলোর সমাধান না করে ১২৫ দিনের কথা বলা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
৫) ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং গ্রামসভার দুর্বলতা
এমজিএন রেগা-র অধীনে কাজের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন গ্রামসভার মাধ্যমে করা হয়। নতুন বিলে একটি ‘ন্যাশনাল রুরাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার স্ট্যাক’ চালু করা হয়েছে, যার অধীনে কেন্দ্র ঠিক করবে কী কী কাজ করা হবে এবং কোথায় করা হবে।
গ্রামগুলোকে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করা হবে এবং কেন্দ্র কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করবে। আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণকে নতুন আইনে শক্তিশালী করা হয়েছে, আর গ্রামসভার ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। ৫(১) ধারার অধীনে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক বিজ্ঞাপিত এলাকায় কর্মসংস্থান বাস্তবায়িত হবে, যা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনকে ক্ষুণ্ণ করে।
৬) মজুরি নির্ধারণ
২০০৫ সালের আইনের অধীনে এই প্রকল্পের মজুরি, নূন্যতম মজুরি আইন, ১৯৪৮-এর সাথে যুক্ত ছিল এবং মুদ্রাস্ফীতির ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধিত হতো। যদি রাজ্য সরকারগুলো উচ্চতর মজুরি নির্ধারণ করত, তবে তা স্বীকৃত হতো।
নতুন বিলের অধীনে কেন্দ্র নির্ধারিত মজুরিই চূড়ান্ত হবে। মুদ্রাস্ফীতির সাথে এর কোনও যোগসূত্র থাকবে না এবং রাজ্য নির্ধারিত উচ্চতর মজুরি স্বীকৃত হবে না।
৭) প্রযুক্তির মাধ্যমে শ্রমিকদের বর্জন
২০০৫ সালের আইনের চেতনার পরিপন্থী হিসাবে আধার সংযোগের ফলে ইতিমধ্যে ১ কোটি জব কার্ড বাতিল হয়েছে এবং ৭ কোটি সুবিধাভোগীর নাম মুছে ফেলা হয়েছে। কেওয়াইসি (কেওয়াইসি) নিয়মের অধীনে আরও ২৭ লক্ষ শ্রমিককে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
এখন দিনে দু’বার বায়োমেট্রিক হাজিরা, কাজের সাইটের জিও-ট্যাগ করা ছবি এবং বাধ্যতামূলক ডিজিটাল আপলোডকে আইনবদ্ধ করা হয়েছে। প্রযুক্তির অজুহাতে কর্মসংস্থান থেকে বর্জনকে আইনি রূপ দেওয়া হয়েছে।
৮) কাজের সময়ের নিয়ম লঙ্ঘন
যখন মজুরি দমন করা হচ্ছে, তখন কাজের সময় বাড়ানো হচ্ছে। আদর্শ কর্মদিবস ৭ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ৮ ঘণ্টা করা হয়েছে এবং ১৯(খ) ধারার অধীনে কাজের সময় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। এটি দশকের পর দশক ধরে চলা শ্রমিকের অধিকারকে পদদলিত করে এবং শোষণকে বৈধতা দেবে।
৯) শুধুমাত্র কেন্দ্রীয়ভাবে বিজ্ঞাপিত এলাকায় কর্মসংস্থান
আগে এমজিএন রেগা সমস্ত গ্রামীণ এলাকায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রযোজ্য ছিল। নতুন বিলের অধীনে কর্মসংস্থান শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক বিজ্ঞাপিত গ্রামগুলোতেই পাওয়া যাবে। রাজ্যের সুপারিশগুলো নির্বিচারে প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে।
১০) সংবিধিবদ্ধ অধিকার থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে স্পনসর করা প্রকল্পে রূপান্তর
এমজিএন রেগা–২০০৫ -এর অধীনে যে কোনও পরিবর্তনের জন্য সংসদীয় অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। নতুন বিল কর্মসংস্থান গ্যারান্টিকে একটি কেন্দ্রীয় স্পনসর করা প্রকল্পে রূপান্তরিত করেছে, যা সরকারকে প্রশাসনিক আদেশের (এক্সজিকিউটিভ ‌অ্যা ডভাইসরিস) মাধ্যমে পরিবর্তন করার সুযোগ দেয়। আগে কর্মসংস্থান বা বেকার ভাতা না পেলে শ্রমিকরা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারতেন, সেই আইনি প্রতিকার এখন কার্যত সরিয়ে দেওয়া হয়েছে
১১) ঠিকাদারদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া
কাজগুলোকে চার প্রকারে ভাগ করে এবং যান্ত্রিকীকরণের অনুমতি দিয়ে এই বিলটি পরোক্ষভাবে ঠিকাদারদের প্রবেশের সুবিধা করে দেবে, যা গ্রামীণ কর্মসংস্থানের শ্রম-নিবিড় চরিত্রকেই নষ্ট করে দেবে।
১২) জাতীয় পর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটি– আমলাতান্ত্রিক দখল
এই বিলটি শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি জাতীয় পর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটি প্রবর্তন করেছে, যা নির্বাচিত প্রতিনিধি, সামাজিক কর্মী এবং বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত অংশগ্রহণমূলক কাউন্সিলগুলোর পরিবর্তে কাজ করবে। এই কমিটি ফান্ডের বরাদ্দের নিয়ম, কাজের অগ্রাধিকার এবং শর্তাবলি নির্ধারণ করবে, যা রাজনৈতিক অপব্যবহার এবং স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ তৈরি করবে।
১৩ রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা হিসাবে নামকরণ
মহাত্মা গান্ধীর উত্তরাধিকারকে সম্মান জানাতে এমজিএন রেগা-র নামকরণ করা হয়েছিল তাঁর নামে। ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে মোদী সরকার গান্ধীর নাম সরিয়ে দিয়ে তাদের হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডার অংশ হিসাবে এই বিলটি আনে। জি-রাম (জি) সংক্ষেপটি একটি রাজনৈতিকভাবে তৈরি নাম, যা মতাদর্শগত উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ইংরেজি এবং হিন্দি শব্দের সংমিশ্রণ।
এমজিএন রেগা কী অর্জন করেছিল
এমজিএন রেগা হ্রাসমান গ্রামীণ কর্মসংস্থানকে আংশিকভাবে পূরণ করে, কৃষি মজুরি শক্তিশালী করেছিল, গ্রামীণ শ্রমিকদের দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়িয়েছিল, মজুরিতে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করেছিল এবং কোভিড সঙ্কটের সময় জীবনরেখা হিসাবে কাজ করেছিল। এটি কাজকে অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে মর্যাদা প্রদান করেছিল।
বিজেপি’র নতুন আইনের আসল উদ্দেশ্য
আরএসএস, হিন্দু মহাসভা এবং জনসঙ্ঘের আদর্শে অনুপ্রাণিত বিজেপি শুরু থেকেই এমজিএন রেগা-র বিরোধিতা করে আসছে। যে অংশগুলো কর্মসংস্থান গ্যারান্টি থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে— কৃষি শ্রমিক, দলিত, আদিবাসী, প্রান্তিক কৃষক। বিজেপি এই আদর্শের বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে।
এই নতুন আইনের আসল উদ্দেশ্য হলো ভূস্বামী এবং ধনী শ্রেণিকে তুষ্ট করা, গ্রামীণ সম্মিলিত শক্তিকে দুর্বল করা, দরিদ্রদের বিচ্ছিন্ন করা এবং তাদের আবার দাসত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া।
এটি কেবল আইনের পরিবর্তন নয়। এটি জীবিকার ওপর সরাসরি আক্রমণ। যদি এই ‘অধিকার হরণকারী বিল’-কে প্রতিহত করা না যায়, তবে গ্রামীণ ভারত ক্ষুধা ও দুর্দশার দিকে ধাবিত হবে। এটি সংস্কার নয়— এটি দরিদ্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
কাজ আমাদের অধিকার। কর্মসংস্থান আমাদের জীবন।

লেখক, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, সারা ভারত কৃষি শ্রমিক ইউনিয়ন
 

Comments :0

Login to leave a comment