বিরোধী দলের সমর্থকদের এতদিন মিথ্যা মামলা, গাঁজার মামলা দিতে অভ্যস্ত বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতাকে ইডি’র জেরা থেকে রেহাই দিতে তাঁর বিরুদ্ধেই মামলা সাজাতে হলো মমতা ব্যানার্জির পুলিশ প্রশাসনকে!
কিন্তু কোন টোপে অনুব্রতর বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা মামলায় পরিত্রাতা হয়ে উঠলেন শিবঠাকুর? কোন ‘টোপে’ অনুব্রতর ঢাল হলেন শিবঠাকুর? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুধু মেজে কিংবা বালিজুড়ি নয়, গোটা রাজনৈতিক মহলের চলছে জোর চর্চা।
বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের মেজে গ্রামের বাসিন্দা শিবঠাকুর মণ্ডল। আচমকাই সংবাদমাধ্যমের গন্তব্যে পরিণত হয়েছে তাঁর গ্রাম। কারণ অনুব্রত মণ্ডলের দিল্লি যাত্রা ঠেকাতে তাঁরই অভিযোগকে হাতিয়ার করেছে শাসকদল। ঢাল করেছে পুলিশ। তবে সেই সঙ্গে জোর আলোচনা, আদৌ কি শিবঠাকুরের এটা স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ, নাকি তাকে দিয়ে করানো হয়েছে গোটাটা?
দিনভর নানা নাটকীয় ঘটনাবলীতে দ্বিতীয় সম্ভাবনার দিকেই পাল্লা ভারী। কিন্তু এমন একসময়, যখন ইডি-সিবিআই’র হাত থেকে বাঁচতে যেকোনও বিতর্ক থেকে নিজেদের ঢের দূরে রাখছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা তখন এই শিবঠাকুরকে এত ‘সাহস’ জোগালো কে?
বালিজুড়ে গ্রাম ঘুরে মিলেছে নানা মন্তব্যের সাক্ষ্য। তবে প্রকাশ্যে নয়, একান্তে নানা কথা বলেছেন গ্রামবাসীরা। জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর তৃণমূল এই শিবঠাকুরকে করেছিল পঞ্চায়েত প্রধান। নিতান্তই সাদামাটা এক পরিবারের সদস্য শিবঠাকুরের এরপরই চমকপ্রদ গতিতে হতে থাকে উত্থান। শিবঠাকুরকে খুব ভালো করে চেনা বালিজুড়ির এক যুবকের কথায়, ‘কিছুই ছিল না শিবঠাকুরের। এমনও দিন গেছে মায়ের চিকিৎসার জন্য ওকে এর ওর কাছে হাত পাততে হয়েছে। তারই এখন বাড়ি, গাড়ি, জমি জায়গা। বাড়ি আবার সিসিটিভি-তে মোড়া।’ গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, প্রধান হওয়ার পর থেকেই আর পাঁচ জায়গার মতো এখানেও দেদার লুট চলতে থাকে। পঞ্চায়েতের প্রধান হওয়ার সুবাদে সেই লুটের টাকার বড় অংশই যেতে থাকে শিবঠাকুরের পকেটে। তাতেই বাড়তে থাকে তাঁর সম্পত্তি। না হলে, কীর্তন গেয়ে দিন গুজরান করা এক যুবকের এই উত্থান হতে পারে না। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের উপরতলার নেতাদের সঙ্গে সখ্যের জেরে শিবঠাকুর জুটিয়েছে তার স্ত্রীর প্রাথমিকের চাকরি, পরিবারের অন্য সদস্যদেরও নানা রোজগারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলেই জোরালো অভিযোগ রয়েছে গ্রামে।
তবে তাল কেটেছিল মাঝে। ২০১৫ সালে পঞ্চায়েতের দেদার দুর্নীতির জন্য গ্রামবাসীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে তৃণমূল তাঁকে সরিয়েছিল প্রধানের পদ থেকে। তবে এক বছর যেতে না যেতেই সেই পদ ফের ফিরে পেয়েছিলেন শিবঠাকুর। সেই শিবঠাকুরই আচমকা অভিযোগ দায়ের করে বসেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে!
এ নিয়ে শিবঠাকুর মণ্ডলের মন্তব্য, ‘২০১৮ সালের পঞ্চায়েতে বালিজুড়ির প্রধানের পদটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যায়। আমি পাঁচটা টিকিট চেয়েছিলাম। কারণ যেভাবে আমি সংগঠন সাজিয়েছিলাম, তাতে পাঁচটা টিকিট পেলে মানুষের উন্নয়ন আরও ভালো করতে পারতাম। কিন্তু দল দেয়নি সেই টিকিট। তাই আমি খানিকটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলাম। ২০২১-র বিধাসনভার ভোটের সময় অনুব্রত মণ্ডল ডেকে পাঠিয়ে দল করার কথা বললে আমি বলে দিই, দল করে কী পেলাম? অসম্মান জুটল। তারপরই অনুব্রত মণ্ডল আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল।’’
প্রায় দেড় বছর আগের সেই ঘটনার অভিযোগই আচমকা দু’দিন আগে করেছেন এই শিবঠাকুর। শিবঠাকুর নিজেই জানিয়েছেন, ‘কোনও তথ্য প্রমাণ নেই তাঁর কাছে।। মুখের কথাতেই করেছি অভিযোগ।’ সেই ঠুনকো অভিযোগেই অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করেছে তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে চলা বীরভূমের পুলিশ। গোটা ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, শিবঠাকুর হয়েছেন অনুব্রতর ঢাল। সেই ঢালে ভর করেই অনুব্রত মণ্ডলের দিল্লিযাত্রা আটকাতে মরিয়া হয়েছে শাসকদল।
কিন্তু শিবঠাকুর ‘ঢাল’ হলেন কেন? বালিজুড়ির বেশ কয়েকজন যুবক জানিয়েছেন, ‘‘লোভই কারণ। পদ না থাকায় সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনুব্রতকে ‘সাহায্য’ করার জন্য এগিয়ে আসার বিনিময়ে নিশ্চিতভাবেই কোনও না কোনও রফা তিনি করেছেন। কারণ সামনেই পঞ্চায়েত ভোট।’’ যদিও সব ব্যাখ্যা উড়িয়ে তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখার্জি বলেছেন, ‘যে দলের সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তার কখনই দলে থাকার যৌক্তিকতা নেই। দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেবে’।
Anubrata bypassed ed summon
ঢাল করা হলো শিবঠাকুরকে
×
Comments :0