Army officer Brijesh Thapa

কাশ্মীরে মৃত্যু দার্জিলিঙয়ের ব্রিজেশ থাপার, ছেলের মৃত্যুতে আক্ষেপ নেই বাবার

রাজ্য

অনিন্দিতা দত্ত- দার্জিলিঙ
উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নিহত হয়েছেন দার্জিলিঙের লেবংয়ের বড়াগিঙ্গের বাসিন্দা ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপা। মঙ্গলবার ব্রিজেশের মৃত্যুর খবর তার বাড়িতে এসে পৌঁছাতেই গোটা পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। মাত্র ২৭ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুতে শোকের আবহ তৈরি হয় শৈলশহরে। দার্জিলিঙের লেবং এলাকার পাশাপাশি শিলিগুড়ি ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের শাস্ত্রীনগর এলাকার বাড়িতেও শোকের আবহ। ভারতীয় সেনা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে জম্বু কাশ্মীরের ডোডা থেকে চার ঘন্টা দূরত্বে থাকা পাহাড়ি জঙ্গলের ভেতরে উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় উগ্রপন্থীরা হামলা চালায়। হামলার জবাব দেন ভারতীয় সেনা জওয়ানরাও। দুই পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াইয়ে ব্রিজেশ সহ আরো চার সেনা জওয়ানের ঘটনাস্থলেই মৃত্যূ হয়। 
জানা গেছে, ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপার জন্ম লেবং’এ। লেবংয়েই তাঁর প্রাথমিক পড়াশুনা। বাবা কর্নেল ভুবনেশ থাপার কর্মসূত্রে নানা জায়গায় পোস্টিংয়ের কারণে রাজ্যের বাইরেই বাকি পড়াশুনা করেন তিনি। মুম্বাই থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে সেখানকার কলেজ থেকে বি’টেক শেষ করে কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন। ২০১৮সালে ব্রিজেশ থাপা ওই ডিফেন্স সার্ভিসের শর্ট সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় পাশ করার পরে ২০১৯ সালে ভারতীয় সেনাতে যোগদান করেন। দুই বছর ১০ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের মোতায়েন ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁকে এক্সট্রা রেজিমেন্টাল ডিউটির জন্য ভারতীয় সেনার বিশেষ বিগাভ ১৪৫ আর্মি এয়ার ডিফেন্সের অধীন জম্বু কাশ্মীরের ডোডা ছাউনিতে বদলি করা হয়। সেখানে তিনি ‘এ’ কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন। নিজের ট্রুপ নিয়ে ডোডা থেকে চার ঘন্টার দূরত্বে বিশেষ একটি অভিযানে যাবার সময় তাদের ওপর উগ্রপন্থী হামলা হয়। আর সেই জঙ্গি হামলাতে পাল্টা জবাব দিতে গিয়েই নিহত হন ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপা। 
পাঁচ বছর ধরে সেনাতে কর্মরত ছিলেন। গত সেপ্টেম্বরেই ডোডাতে বদলি হয়েছিলেন তিনি। কাজের চাপে বাড়ি আসতে পারেননি। চলতি মাসেই বাড়িতে আসার কথা ছিলো ক্যাপ্টেন ব্রিজেশের। পরিবারের সাথে মনিপুর, মেঘালয় বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা ছিলো। 
গত রবিবার মোবাইল ফোনে পরিবারের সাথে শেষবারের মতো কথা বলেছিলেন ব্রিজেশ। বাড়িতে ফেরা আর হলো না। শোকের আবহ গোটা পাহাড় জুড়ে।  
ইতোমধ্যেই ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপার শহীদ হবার খবর সেনা আধিকারিকদের তরফে তাঁর পরিবারকে জানানো হয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৭জুলাই অর্থাৎ বুধবার বিশেষ বিমানে করে  ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপার দেহ বাগডোগরা বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হবে। বাগডোগরা সেনা ছাউনিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা জানানোর পরে তাঁর দেহ সড়কপথে লেবং’র জন্মভূমির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। পরিবারের বাবা, মা ও দিদি রয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে দিদি নিকিতা থাপা সঙ্গীত নিয়ে পড়াশুনা করছেন। ভাইয়ের মৃত্যুর  খবর পাওয়া মাত্রই দিদি দার্জিলিঙের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
ছেলের মৃত্যুতে কষ্ট হলেও, আক্ষেপ নেই। এমনটাই জানিয়েছেন নিহত সেনা জওয়ান ব্রিজেশের বাবা কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) ভুবনেশ থাপা। তিনি বলেন, ‘‘খুব ছোটবেলা থেকেই ব্রিজেশের সেনার প্রতি খুব ভালোবাসা ছিলো। নিজেকে সেই মতো করেই তৈরী করেছিলো। ওকে মিস করব, তবে দেশের জন্য নিজের জীবন দেওয়ায় আমি খুশি। কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আক্ষেপ নেই।’’

Comments :0

Login to leave a comment