সারের কালোবাজারি বন্ধ হয়নি। সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেনি বহু কৃষক। ফড়িয়াদের অনেক কম দামেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে তারা। কৃষি দপ্তর থেকে দেওয়া হয়নি বীজ, সার বা পোকামাকড় মারার ঔষধ। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কৃষকরা অসহায় অবস্থায় আছে। সরকারের হুঁশ নেই। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দরবার করেও সুরাহা মেলেনি। কৃষকদের দুর্দশায় ক্ষোভে ফুঁসছে গ্রামের মানুষ। প্রসঙ্গত দক্ষিণ দিনাজপুর শিল্পবিহীন কৃষি প্রধান জেলা। এখানকার সত্তর শতাংশ বাসিন্দা কৃষির উপর নির্ভরশীল। আবার কৃষি কাজে যুক্ত থাকে ক্ষেত মজুর সহ অন্যান্য শ্রমিকরাও।
বর্তমান পরিস্থিতিতে চাষ আবাদ করে জীবীকা নির্বাহ করা কৃষকদের ভীষণ কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। ফলে অনেকেই চাষ আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। জমি পড়ে থাকলেও চাষ করছে না বহু কৃষক। বালুরঘাট ব্লকের অমৃত খন্ড পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সনাতন মন্ডল বলেন, বর্ষালি আবাদের পর খরা মাসের বোরো ধান চাষ আর করার ইচ্ছে নেই। তিনি বলেন, বোরো ধান চাষ করতে পর্যাপ্ত জলের প্রয়োজন হয়। সরকারি জলের ব্যাবস্থা নেই। জল কিনতে হবে বেসরকারি সাব মার্সিবল থেকে। সার আসল দাম থেকে প্রায় দেড় বা দ্বিগুণ দামে কিনতে হবে। এছাড়াও পোকামাকড় থেকে বাঁচাতে ঔষধের দামও বহুগুন বেড়েছে। তিনি বলেন তেলের দাম বেড়ে যাওয়াতে বিঘা প্রতি চাষের খরচ বেড়েছে। ধান আবাদ করে বিক্রি করার সময় চাল কল মালিকরা অনেক কম দাম দেয়। সে সময় সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।
বালুরঘাট ব্লকের মাহিনগরের কৃষক সাহাজান সর্দার বলেন, বাম আমলে প্রতিটি মরসুমে চাষের জন্য বিনামূল্যে কৃষকদের বীজ, সার, অনুখাদ্য, পোকামাকড় মারার ঔষধ ইত্যাদি দেওয়া হত কিন্তু বর্তমান সরকার এসব কিছুই দেয় না। ফলে চাষ আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অনেক অসহায় কৃষক। তারা ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে কাজের খোঁজে। তিনি বলেন, অনেক কৃষক আলু আবাদ করেছে কিন্তু পর্যাপ্ত হিমঘর নেই জেলায় ফলে জমি থেকে চার-পাঁচ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক।
কৃষকদের অসহায় ও দুর্দশা প্রসঙ্গে সারা ভারত কৃষক সভার জেলা সম্পাদক সকুরদ্দিন আহমেদ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বর্তমান কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কৃষকদের বাস্তব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেই রাজি নয়। এই দুই সরকারের জনবিরোধী নীতির ফলেই কৃষক অসহায় অবস্থায় পড়েছেন এবং বহু জায়গায় কৃষকরা আত্মহত্যা করেছেন।
তিনি বলেন, বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলি ইতিমধ্যে বহুবার ব্লক ও জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে কিন্তু তারা কর্নপাত করেনি। বরং প্রশাসনের সঙ্গে নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলে তারা কৃষক নেতৃত্বকে হেনস্থা করেছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের নেতা, জনপ্রতিনিধি ও আধিকারিকরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। তাই সারের দোকানে লোক দেখানো পরিদর্শন করে কিন্তু সারের কালোবাজারি বন্ধ হয়নি। মান্ডিতে ফড়িয়াদের দাপটে বহু কৃষক ধান দিতেই পারেনি। কৃষক নেতা বলেন, কৃষকদের নির্দিষ্ট অভিযোগ ও দাবি সহ আমরা কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে অতিদ্রুত জেলা শাসকের দপ্তর ঘেরাও করবো।
Comments :0