CPIM Birbhum District Conference

বীরভূম জেলা সম্মেলন: বিভাজন রুখতে জোর জীবিকার সংগ্রামে

জেলা

সিপিআই(এম) বীরভূম জেলা সম্মেলনের শুরুতে মিছিল সিউড়িতে। রয়েছেন পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম সহ নেতৃবৃন্দ। ছবি: রণদীপ মিত্র

প্রসূন ভট্টাচার্য: সিউড়ি

গরিব মানুষের দাবির কথা তুলে ধরেই মানুষের সঙ্গে সংযোগ জোরালো করতে হবে ফের। শনিবার সিউড়িতে সিপিআই(এম) বীরভূম জেলা ২৪তম সম্মেলনের উদ্বোধন করে একথা বলেছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য দেবব্রত ঘোষ। পার্টি সংগঠনের ‘গণলাইন’কে এরাজ্যের একেবারে স্থানীয় স্তর পর্যন্ত বাস্তবায়িত করতে স্থানীয় স্তরে মানুষের সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হতে বলেছেন তিনি। 
এদিন সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে দেবব্রত ঘোষ বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিজেপি ও তৃণমূলের বিভাজনের রাজনীতিকে। মেরুকরণের এই রাজনীতিকে বিপদ হিসাবে চিহ্নিত করে তিনি বলেছেন, এর মোকাবিলাই এরাজ্যে বামপন্থীদের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। তার জন্য রুটি রুজির দাবিতে সংগ্রামে জোর দিতে হবে। আর জি করের নৃশংস ঘটনার মতো প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদই বামপন্থী পরিমণ্ডলকে শক্তিশালী করে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাতে শামিলও হতে পারেন। কিন্তু তাতে রাজনৈতিক ভারসাম্যের পরিবর্তন কিংবা নির্বাচনী প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে। এর জন্যই গরিব শ্রমজীবী মানুষের রুটিরুজি সহ জীবনের সমস্যা নিয়ে সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে যোগ্য সংগঠন ও সঠিক মতাদর্শ জরুরি। আমাদের পার্টি সাংগঠনিক প্লেনাম থেকে গণলাইন অনুসরণ করতে বলেছে মানুষের সঙ্গে নিবিড় সংযোগ স্থাপনের জন্য। আমাদের শক্তি শ্রমিক কৃষক খেতমজুরের জীবনের সমস্যা নিয়ে সরব হয়ে তাঁদের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে তুলতে হবে। স্থানীয়ভাবে তাঁদের সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হতে হবে।
তবেই পার্টির সঙ্গে জনতার সংযোগ দৃঢ় হবে।
সম্মেলনে খসড়া রাজনৈতিক সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করে জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষও বলেছেন, জেলায় আন্দোলন সংগ্রামের পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে যেখানে আমরা মানুষের স্বার্থে পঞ্চায়েতের ওপরে চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছি কিংবা স্থানীয় কোনো ইস্যুতে মানুষের স্বার্থের কথা তুলে ধরতে পেরেছি, সেখানেই মানুষের প্রত্যাশাও তৈরি করতে পেরেছি। মানুষের সঙ্কটে পাশে থেকে হস্তক্ষেপ করতে পারাই নিবিড় জনসংযোগের উপায়।
সিপিআই(এম)’র দুই দিনব্যাপী বীরভূম জেলা সম্মেলন এদিনই শুরু হয়েছে সিউড়ির ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। সম্মেলনস্থলের নামকরণ হয়েছে কমরেড ব্রজমোহন মুখার্জি ও কমরেড দিলীপ গাঙ্গুলি নগর। সম্মেলন মঞ্চের নামকরণ হয়েছে কমরেড সেখ ইসলাম, কমরেড মতিউর রহমান ও কমরেড অরুণ মিত্র মঞ্চ। এদিন সকালে প্রথমে শহরের বেণীমাধব মোড় থেকে সম্মেলন উপলক্ষে মিছিল বের করা হয়। পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম সহ নেতৃবৃন্দ মিছিলে অংশ নেন। সম্মেলনের বার্তা ছড়িয়ে মিছিল ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এসে পৌঁছলে সেখানে পার্টির পতাকা উত্তোলন ও শহীদ বেদীতে মাল্যদানের পরে সম্মেলনের অধিবেশনের কাজ শুরু হয়। পতাকা উত্তোলন করেন প্রবীণ পার্টি নেতা গোকুল ঘোষ। সংক্ষিপ্ত ভাষণ শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে বামপন্থার আন্দোলনকে তীব্র করার আহবান জানান সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জিয়াউল আলম। 
এদিন সম্মেলনে প্রতিনিধিদের পার্টির সংগঠনকে মজবুত করে তুলে রাজনৈতিক আন্দোলনকে তীব্র করে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে এসেছে। তাঁরা একথাও বলেছেন, আবাস যোজনা সহ গ্রামীন উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধা প্রাপ্য হওয়া সত্ত্বেও বঞ্চিত হয়ে গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ, কোথাও কোথাও তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। আমরা বামপন্থীরা যদি তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে দাবি‌ আদায় করাতে পারি তাহলে মানুষ আমাদের ওপরেই আস্থাজ্ঞাপন করবেন। 
জেলা সম্মেলন পরিচালনা করছেন শ্যামলী প্রধান, দীপঙ্কর চক্রবর্তী, জটাই মুর্মূ ও আকবর আলিকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী। 
অধিবেশনের শুরুতে শহীদ স্মরণে প্রস্তাব, শোকপ্রস্তাব এবং আয়ব্যয়ের হিসাব পেশ করেছেন জেলা কমিটির পক্ষে দীপঙ্কর চক্রবর্তী।  উপস্থিত রয়েছেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম, রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জিয়াউল আলম, রাজ্য কমিটির সদস্য গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি এবং জামির মোল্লা।

Comments :0

Login to leave a comment