ঋদ্ধি রিত
মোগলরা খারাপ, যুদ্ধবাজ এবং নৃশংস অত্যাচারী, আর মারাঠারা ছিল বীর, পরাক্রমে ভরপুর। এমন একটা প্রচার তলে তলে ছিলই। সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তা প্রোপাগান্ডার মতো ছড়িয়ে দিতে সিনেমা থেকে নানা মাধ্যমকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। মারাঠা সহ কোনও জাতিরই মধ্যযুগের ইতিহাস খুলে তাদের গৌরবান্বিত অথবা অসম্মানিত করার কোনও অর্থ হয় না। কিন্তু প্রোপাগান্ডা করতে গিয়ে ইতিহাস বিকৃতি মেনে নেওয়া যায় কি! গৌরবান্বিত করতে গিয়ে মারাঠাদের ইতিহাসকে পালটে দিলে বাঙালিদের বহু কষ্টকেও ইতিহাস থেকে মুছে দিতে হবে। বিশেষত বাংলার মানুষের কাছে এক সময় যে ত্রাসের জন্ম দিয়েছিল এই মারাঠা বর্গীরা তার প্রামাণ্য বাংলার বহু লোকায়ত ছড়ার গভীরে লুকানো আছে।
‘‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো
বর্গী এল দেশে।
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে?
ধান ফুরুল, পান ফুরুল,
খাজনার উপায় কী?
আর ক’টা দিন সবুর কর
রসুন বুনেছি...’’
ছেলেবেলায় মা-ঠাকুরমার মুখে শোনা এই গান কারও অপরিচিত নয়। কিন্তু এই বর্গী আবার কারা? বর্গী শব্দটি ফারসি বারগীর শব্দের অপভ্রংশ। বারগীর অর্থাৎ অশ্বারোহী সৈন্য।
শিবাজীর সময় থেকে মারাঠা অশ্বারোহী সৈন্যদের দু’ভাগে ভাগ করা হতো-বর্গী ও শিলেদার। বর্গীদের অস্ত্রশস্ত্র ও ঘোড়া সরকার থেকে দেওয়া হতো, শিলেদারদের দেওয়া হইত না। তাঁরা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র ও ঘোড়া নিয়ে সৈন্যদলে যোগ দিতেন। সেনাবাহিনীতে শিলেদারদের স্থান ছিল বর্গীদের নিচে। এঁদের সংখ্যাও কম ছিল। শিবাজীর জীবনীলেখক কৃষ্ণাজি অনন্ত সভাসদের লেখা থেকে জানা যায়, ‘‘সেনাপতি নেতাজী গলকরের অধীনে দশ হাজার অশ্বারোহী ছিল। ইহাদের মধ্যে সাতহাজার বর্গী, বাকি তিনহাজার শিলেদার।’’
ভারতকোষের বর্ণনা অনুযায়ী, ২৫ জন অশ্বারোহী সৈন্যের উপর একজন হাবলদার থাকতেন। পাঁচজন হাবলদারের উপরে আবার একজন জুমলাদার, দশজন জুমলাদারের উপর একজন হাজারী, পাঁচজন হাজারীর উপরের কর্মচারীকে পাঁচহাজারী বলা হতো।
যাই হ’ক অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলার বুকে বর্গী হানার কালো অতীতের জলছাপ আজও দিব্যি রয়ে গিয়েছে এই ছেলে ভুলানো ছড়ার অন্দরেই। বাংলায় বর্গী আক্রমণের সাল ১৭৪১ থেকে ১৭৫১। নিছকই এক ঘুমপাড়ানি ছড়ার মধ্যে দিয়েই প্রতিফলিত হয়েছিল বর্গী আক্রমণের এক রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার কথা, তার আরও বর্ণনা পাওয়া যায় ‘মহারাষ্ট্র পুরাণ’এ। সেখানে বর্ণিত আছে, ‘‘সমস্ত গ্রামবাসী পালাইয়া গেল। ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতেরা তাঁহাদের পুঁথিপত্র লইয়া পালাইলেন, সুবর্ণবণিকেরা তাঁহাদের দাড়িপাল্লা নিয়ে। গন্ধবণিকেরা তাঁহাদের মালপত্র, ব্যাপারিরা তাঁহাদের পণ্য নিয়া পালাইলেন। কামার হাতুড়ি নিয়া পালাইল, কুমার তাহার চাক নিয়ে পালাইল। জেলেরা জাল নিয়া পালাইল। বানিয়ানা পলায়ন করিল। চারিদিকে কত লোক পালাইয়া গেল তাহার কোনও ইয়ত্তা নেই। গ্রামে গ্রামে যত কায়স্থ এবং বৈদ্য ছিল তাহারা বর্গীর নাম শুনিবামাত্র পলায়ন করিল। ভদ্র রমণীগণ যাঁহারা কদাপি ঘরের বাহিরে গমন করেন নাই তাঁহারাও মাথায় মালপত্র নিয়া পালাইলেন। যেসব রাজপুত্র কৃষিকাজ করিত, বর্গীর নামোল্লেখমাত্র তাহারা তরবারি ফেলিয়া রাখিয়া ছুটিয়া পালাইল। গোঁসাই মোহন্তগণ পাল্কি চড়িয়া পালাইলেন। কৈবর্ত, শেখ, সৈয়দ, মুঘল, পাঠান সকলে পালাইল। গর্ভবতী রমণীগণও ছুটিয়া পালাইলেন। দশ-বিশজন লোক হয়তো রাস্তার ধারে দাঁড়াইয়া আছে। যদি কেহ জিজ্ঞাসা করে তাহারা বর্গীদের দেখিয়াছে কিনা– তাহা হইলে সকলেই সমস্বরে উত্তর করিবে ‘না।’ সকলে পালাইতেছে তাই তাহারাও পালাইতেছে।’’
বাংলায় বর্গী আক্রমণ কতটা ভয়ঙ্কর ছিল তা বর্ণিত আছে ‘অন্নদামঙ্গল কাব্যে’ও। সেখানে ভারতচন্দ্র লিখেছেন, ‘‘কি কহিব বাঙ্গালার যে দশা হইল।।/ লুটিয়া ভুবনেশ্বর যবন পাতকী।/ সেই পাপে তিন সুবা হইল নারকী।।’’ এতে বোঝা যায় প্রবল নির্যাতন ও নিরীহ গ্রামবাসীকে লুট করাই কেবল নয়, একেবারে ধনেপ্রাণে মেরে ফেলা। আতঙ্কে মানুষের জীবন দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। এমনও বর্ণনা রয়েছে যে, গর্ভবতী মহিলারাও অসহায়ের মতো প্রাণ ও মান বাঁচাতে গ্রামের পথ দিয়ে ছুটছেন। কার্যতই বাড়ি থেকে কখনও না বেরনো মহিলারাও মাথায় মালপত্র নিয়ে পালাতে লাগলেন। গ্রামের পর গ্রাম কেবল পোড়া ঘরবাড়ি ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার বাকি চিহ্ন। বর্গী হানার অব্যবহিত পরে যে আর্ত চিৎকার ও মহিলাদের তীব্র কান্না তাও নেই। কেন না কেউই যে জীবিত নেই। পুরো গ্রামটাকে শ্মশান বানিয়ে পরের গ্রামে চলে গিয়েছে বর্গীরা। লক্ষ্মণীয়, এই বর্গী হামলা বা তার থেকে রেহাই কোনও নির্দিষ্ট ধর্ম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে ছিল না। বাংলার গ্রামবাসীরা কেউ রেহাই পাননি এর থেকে।
তখন ১৭৪০ সালে সুবা বাংলার (সমগ্র বাংলা, বিহার ও ওডিশা মিলিয়ে) নবাব হন তুর্কি কর্মকর্তা আলীবর্দী খাঁ। মুর্শিদকুলি খাঁর নাতি সরফরাজ খাঁকে হত্যা করে তিনি মসনদে বসেন। এসময় ওডিশা প্রদেশের শাসনকর্তা ছিলেন দ্বিতীয় মুর্শিদকুলি। তিনি আবার সরফরাজ খাঁর জামাই। তিনি আলীবর্দীর কর্তৃত্ব মেনে নিতে পারছিলেন না। যদিও, ১৭৪১ সালের মার্চে আলীবর্দীর কাছে যুদ্ধে পরাজিত হন দ্বিতীয় মুর্শিদকুলি। এদিকে আলীবর্দীও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলেন যে কোনও মুকুটই আসলে কাঁটার হয়। যুদ্ধবিগ্রহ, বিদ্রোহ দমন করতে করতেই কেটে গেল দুটো বছর। এই সময়ে দিল্লির মসনদে মির্জা নাসিরুদ্দিন মহম্মদ শাহ। তাঁকে কর দেওয়ার কথা থাকলেও বাংলার নবাব হয়ে আলীবর্দী কিছুই দেননি। এই করের এক-চতুর্থাংশ আবার যেত মারাঠাদের কোষাগারে। ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে তেমনই চুক্তি ছিল তাদের। একে বলা হতো ‘চৌথ’। স্বাভাবিক ভাবেই আলীবর্দীর কাছ থেকে কোনও অর্থ না পাওয়ায় মারাঠাদের ঝুলিও রইল শূন্য। তারা মুঘল সম্রাটের দ্বারস্থ হলে মির্জা নাসিরুদ্দিন জানিয়ে দেন, তারাই যেন আলীবর্দীর কাছ থেকে নিজেদের হিসসা বুঝে নেয়। এদিকে আলীবর্দীর কাছে পরাজিত দ্বিতীয় মুর্শিদকুলি মারাঠা সাম্রাজ্যের নাগপুর রাজ্যের শাসনকর্তা প্রথম রঘুজী ভোঁসলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনিও বাংলা আক্রমণে উৎসাহিত করতে শুরু করেছেন নাগপুর শাসনকর্তাকে। এই সুযোগে রঘুজীও কটক, পাটনা ও মুর্শিদাবাদ হস্তগত করার পরিকল্পনা করেন। এই পরিস্থিতিতেই বর্গী হানার সূত্রপাত।
১৭৪১ থেকে ১৭৫১ সালের মধ্যে রঘুজী বাংলায় মোট ছ’বার অভিযান চালিয়েছিলেন। এই অভিযানগুলিই বাংলার কাছে ‘বর্গী হানা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রথম অভিযানটি তিনি চালান ১৭৪১ সালে। আলীবর্দীর তখন ওডিশার বিদ্রোহ দমন করে ‘বাড়ি’ ফিরছিলেন। সেই সময়ই খবর আসে নতুন বিপদের। সেটা এপ্রিল মাস। অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল। তিনহাজার ঘোড়সওয়ার ও একহাজার পদাতিক সেনা নিয়ে বাংলার পশ্চিমাঞ্চলে ‘চৌথ’ আদায় করতে আসছেন রঘুজির সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত। শুরু হলো লুঠতরাজ। এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া। সেসব চলার সময়ই দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলো নবাবের সেনা। সেই যুদ্ধে অবশ্য আলীবর্দী পরাস্তই হলেন। মারাঠা সৈন্যরা ১৭৪১ সালের আগস্টে সহজেই রাজধানী কটক সহ ওডিশা দখল করে নেয়। এই সময় বর্গীরা কাটোয়ার কাছে দাঁইহাটায় দুর্গাপূজা করে। কিন্তু একই বছরের ডিসেম্বরে নবাব আলীবর্দী খান ওডিশা পুনর্দখল করে নেন এবং মারাঠাদের বিতাড়িত করলে মারাঠারা চিল্কা হ্রদের দক্ষিণে পালিয়ে যায়।
পরের বছর ফের ভাস্কর পণ্ডিতের নেতৃত্বে আক্রমণ সানায় বর্গীরা। আবারও তারা সমগ্র বাংলা জুড়ে ভয়াবহ লুটপাট চালায়। ১৭৪৩ সালের তৃতীয় অভিযানের নেতৃত্ব দেন রঘুজী নিজে। এই সময় মুঘল সম্রাটের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এক চুক্তি অনুযায়ী রঘুজীর প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক মারাঠা নেতা পেশোয়া বালাজী বাজীরাও বাংলাকে রক্ষার জন্য অগ্রসর হন। নবাব আলীবর্দীর অনুমতিক্রমে তিনি রঘুজীর বাহিনীকে আক্রমণ করে পরাজিত করেন এবং বাংলা থেকে বিতাড়িত করেন। ১৭৪৩ সালের জুন থেকে ১৭৪৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলায় শান্তি বিরাজ ছিল। কিন্তু ১৭৪৪ সালের মার্চে মারাঠারা আবার বাংলা আক্রমণ করে। তার নেতৃত্ব দেন ভাস্কর পণ্ডিত। এই সময় মারাঠারা একটি অভিনব পন্থা অবলম্বন করে। তারা সুকৌশলে আলীবর্দীর সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখসমর এড়িয়ে চলে। ফলে যুদ্ধে তারা একপ্রকার অপরাজেয়ই থেকে যায়। উপায়ন্তর না দেখে অবশেষে নবাব ছলনার আশ্রয় নেন। তিনি সন্ধি স্বাক্ষরের জন্য ভাস্কর পণ্ডিত সহ ২২ জন মারাঠা নেতাকে আমন্ত্রণ করে এনে তাঁদেরকে হত্যা করেন। এর ফলে বাংলায় মারাঠাদের আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
১৭৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলার ইতিহাস অন্যদিকে মোড় নেয়। নবাব আলীবর্দী খানের আফগান সৈন্যরা বিদ্রোহ শুরু করলে নবাবের নিজের বাহিনীর মধ্যেই অন্তর্কলহ লেগে যায় আর এই অবস্থার সম্পূর্ণ সুযোগ নেয় মারাঠা বর্গীরা। এবার ফের রঘুজী নেতৃত্ব দেন। এই অভিযানে মারাঠারা একে একে ওডিশা, মেদিনীপুর, বর্ধমান ও বীরভূম দখল করে নিয়ে ক্রমশ বিহারের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। নবাব আলীবর্দী তাদের বিহার থেকে বিতাড়িত করেন। বিহার থেকে বিতাড়িত বর্গীরা এরপর মুর্শিদাবাদ আক্রমণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ১৭৪৫ সালের ডিসেম্বরে কাটোয়ায় আলীবর্দী তাদের পরাজিত করেন এবং ১৭৪৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে তাদের আরও পিছু হটতে বাধ্য করেন। মারাঠারা মেদিনীপুরে আশ্রয় নেয়। ১৭৪৬ সালের অক্টোবরে নবাবের সেনাপতি মীরজাফর মেদিনীপুর পুনরুদ্ধার করেন কিন্তু পরের মাসেই মারাঠারা আবার মেদিনীপুর দখল করে নেয়। ১৭৪৭ সালের মার্চে বর্ধমানের যুদ্ধে মারাঠারা পরাজিত হয়ে মেদিনীপুরে পালিয়ে আসে। এদিকে নবাবের আফগান বিদ্রোহীরা বিহার দখল করে নিলে আলীবর্দীকে তাদের বিরুদ্ধেও অগ্রসর হতে হয়। ১৭৪৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে নবাব বিদ্রোহীদের দমন করেন এবং এরপর বাংলা থেকে মারাঠাদের বিতাড়িত করেন। ১৭৪৯ সালের মে মাসে নবাব কটক পুনরুদ্ধার করেন। পরাজিত হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ পরেই জুনে মারাঠারা আবার ওডিশা আক্রমণ করে তা দখল করে নেয় এবং বাংলায় হানা দিতে থাকে। তীব্র সংঘর্ষের পর নবাব আলীবর্দী মারাঠাদেরকে বাংলা থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হলেও ওডিশা মারাঠাদের দখলেই থেকে যায়। যদিও, অনুর্বর ওডিশা মারাঠাদের জন্য লাভজনক ছিল না, আবার বাংলায় তাদের সব আক্রমণই সবসময়ই আলীবর্দীর ক্ষিপ্রতার দরুন ব্যর্থ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১৭৫১ সালে রঘুজী সন্ধির প্রস্তাব করেন। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যার মুখোমুখি হয়ে আলীবর্দীও সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ১৭৫১ সালের মে মাসে মারাঠাদের সঙ্গে সন্ধি স্বাক্ষর করেন।
বাংলায় এই বর্গীদের আক্রমণের চিহ্ন আজও কিন্তু বর্তমান। বর্গী হানা থেকে বাঁচতে শহর ঘিরে খাল কাটার দৃষ্টান্ত রয়েছে এই কলকাতাতেই। যখন বাংলা জুড়ে বর্গী আক্রমণ চলছিল, কলকাতা তখন ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসার মূল কেন্দ্র। তাই বর্গী আক্রমণে কলকাতার মানুষের মতই কোম্পানির লোকও ভীত সন্ত্রস্ত। তারা মনে করতে থাকে বর্গীরা যদি মুর্শিদাবাদ আক্রমণের সাহস দেখাতে পারে পারে তাহলে কলকাতা আসতে আর কতক্ষণ। বর্গীরা নিশ্চয়ই পরেরবার কলকাতাতেই পা রাখবে। এদিকে কলকাতার মানুষজনও আতঙ্কিত, বর্গীদের হাত থেকে বাঁচতে একজোট হওয়ার মনস্থির করেছেন। তাঁরা স্থির করে, নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করবে। স্থির হলো পরিখার মতো করে কলকাতাকে ঘিরে কাটা হবে গভীর খাদ, যেই খাদে বর্গীরা হামলা করতে এলে তাদের ঘোড়া নিয়ে তলিয়ে যাবে। অনুমোদন মেলে আলীবর্দীর। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগাম ২৫ হাজার টাকা ধার নেওয়া হলো কোম্পানির থেকে, প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো, পরে আবার সাধারণ মানুষই সেই টাকা ফিরিয়ে দেবে। ৬ মাস ধরে অবিরাম খনন করে তৈরি হলো ৬ মাইল জুড়ে খাদ। ইতিমধ্যেই খবর আসে নবাব নাকি মারাঠাদের সঙ্গে সন্ধি করেছেন, তিনি ওডিশা ছেড়ে দিয়েছেন মারাঠাদের জন্য। যার ফলে বাংলায় বর্গী আক্রমণ পর্বের ইতি ঘটে। বর্গীও আর কলকাতায় আসেনি, খাল কাটার কাজও আর এগোয়নি। কিন্তু কলকাতার লোক সেই উত্তর থেকে দক্ষিণে কাটা খালের জন্য সারা পৃথিবীর কাছে তকমা পেল ‘ডিচার’ হিসাবে। তারপর বহু বছর পর সেই খাদের একাংশ নিজে থেকেই বুজে গেছে। বাকিটা বুজিয়ে তৈরি হয় সার্কুলার রোড। তবে ইতিহাসের চিহ্ন বহন করে বাগবাজারে এখনও এক চিলতে রাস্তার নাম রয়ে গেছে ‘মারাঠা ডিচ লেন।’
Comments :0