Delhi Pollution

দিল্লির আকাশে যেন মৃত্যুর মেঘ

জাতীয়

দীপাবলিতে শর্তসাপেক্ষ শুধুমাত্র সবুজ আতশবাজি পোড়ানোর ছাড়পত্র দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবুও রাত বাড়তেই ধোঁয়ায় ঢাকল দিল্লিপ আকাশ-বাতাস। বাতাসের গুণমানে ৩৮টি জায়গার মধ্যে রাজধানীর ৩৪টি জায়গায় রেড জোনে পড়ে যায়। দীপাবলির রাতে দিল্লি জুড়ে রাত ৮টা থেকে ১০ টা প্রর্যন্ত মানুষ আতশবাজি ফাটানোর পর মঙ্গলবার সকালে দিল্লিতে সামগ্রিক বায়ু দূষণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত সীমার প্রায় ১৫ গুণ বেশি ছিল, সরকারি তথ্য অনুসারে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই কার্যত ধোঁয়াশায় ঢাকল রাজধানী দিল্লি সহ পার্শ্বর্তী অঞ্চল। সরকারি তথ্য এবং এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, সোমবার দীপাবলিতে দিল্লির বাতাসের গুণমান ৩০০ পার করে গিয়েছিল। যা ছিল ৩৪৫-৩২৬ এর মধ্যে  
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের তথ্য অনুসারে, চারটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ইতিমধ্যেই 'গুরুতর' বিভাগে ছিল যেখানে একিউআই মাত্রা ৪০০’র উপরে ছিল। ৪১৭ দ্বারকায় , ৪০৪ অশোক বিহার , ৪২৩ উজিরপুর, ৪০৪ আনন্দ বিহারে। 
রবিবার সন্ধ্যাতেই বায়ু মানের দ্রুত অবনতির পর কার্যকর করা হয় প্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (গ্রেপ)’র দ্বিতীয় ধাপ। এর আগে অক্টোবরের ১৪ তারিখ থেকে চালু ছিল প্রথম ধাপ। রবিবার রাতেই দিল্লির ৩৮টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে ২৪টি ‘খুবই খারাপ’ শ্রেণিতে পৌঁছে যায়, জানিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, দিল্লির অধিকাংশ এলাকার একিউআই ৩০০-এর উপরে, দুপুরে শহরের গড় সূচক ছিল ৩৩৪। সবচেয়ে দূষিত অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে আনন্দ বিহার (৪০২), ওয়াজিরপুর (৪২৩) ও আশোক বিহার (৪১৪)।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী সোমবার বিকেলে ৩৮টি স্টেশনের মধ্যে ৩১টিতে 'অত্যন্ত খারাপ' বায়ুর মান রেকর্ড করা হয়। যেখানে তিনটি স্টেশন 'গুরুতর' জোনের আওতায় পড়ে। মঙ্গলবার এবং বুধবার বায়ুর মান আরও ব্যাপকভাবে 'গুরুতর' খারাপে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর  আগেই পূর্বাভাস দিয়েছে, দীপাবলির পরবর্তী দুই দিন, অর্থাৎ মঙ্গল ও বুধবার বায়ুর মান আরও খারাপ হয়ে পড়বে। শহরের স্থির বাতাস ও ধোঁয়ার মিশ্রণে বায়ুতে বিষাক্ত কণার ঘনত্ব দ্রুত বাড়ছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এবছর দিল্লিতে শুধুমাত্র ‘গ্রিন ফায়ারক্র্যাকার’ বা সবুজ বাজি পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, সেটিও সকাল ৬টা থেকে ৭টা এবং সন্ধ্যা ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে সীমিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, অনেক এলাকাতেই আতস বাজিও ফাটানো হয়েছে। ফলে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দূষণ সূচক হু হু করে বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজির ধোঁয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষিজমির পোড়া খড়ের ধোঁয়া, যা দিল্লির বায়ুমণ্ডলে আটকে গিয়ে দূষণ বাড়াচ্ছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণের তথ্য অনুসারে, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় দিল্লির ২৪ ঘণ্টার গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৬। বাওয়ান, বুরারি, জাহাঙ্গীরপুরী এবং উজিরপুর "গুরুতর" বায়ু দূষণের কবলে পড়ে। ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সিপিসিবি ০ থেকে ৫০ এর মধ্যে একিউআই কে 'ভালো', ৫১ থেকে ১০০কে 'সন্তোষজনক', ১০১ থেকে ২০০ কে 'মাঝারি', ২০১ থেকে ৩০০ কে 'খারাপ', ৩০১ থেকে ৪০০ কে 'খুব খারাপ' এবং ৪০১ থেকে ৫০০ কে 'গুরুতর' হিসেবে ধরা হয়। 
একদিকে দীপাবলির আলো, অন্যদিকে বিষাক্ত ধোঁয়ার ঘন চাদর—দিল্লির আকাশে যেন মৃত্যুর মেঘ। গত কয়েক বছর ধরেই দীপাবলির পর দিন রাজধানীর বায়ু মান ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি—আলোর উৎসব যেন বিষাক্ত বায়ুর অন্ধকারে ঢেকে গেছে পুরো দিল্লি।

Comments :0

Login to leave a comment