DUTTAPUKUR BLAST BENGAL

বারুদের স্তূপে বাংলা , পুলিশ-তৃণমূলের মদতে অবাধে বিস্ফোরকের কারবার

রাজ্য

একের পর এক বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। পশ্চিমবঙ্গ কি বারুদের স্তূপের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে? চলতি বছরেই মজুত বোমা বারুদে বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে গেছে রাজ্যে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বোমা মজুত বোমা মিলছে তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কোনও ঘটনায় নীরব থেকেছেন, কোনও ঘটনাকে নিছক বাজি কারখানার দুর্ঘটনা বলে ধামাচাপা দিয়েছেন। এত বেআইনি বাজি কারখানা চলছে কী করে রাজ্যে? কেন পুলিশ বন্ধ করতে পারছে না? বিস্ফোরণ স্থলগুলির বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন, বেআইনি বাজি কারখানাগুলিতেই তৃণমূলের মদতে বোমা তৈরি হয়। পুলিশ সব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয় না, কেবল বিস্ফোরণ ঘটে গেলে তখন হইচই হয়। 
গত ১৬ মে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার খাদিকুল গ্রামের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটেছিল। মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ১১ জনের। সেই ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায়, ২১ মে কলকাতার অদূরে বজবজের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে ৩জনের প্রাণহানি ঘটে। পরদিন ২৩ মে মালদহের ইংরেজবাজারে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ২জনের। এর আগে ২০ মার্চ মহেশতলায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় মা ও শিশু সহ ৩ জনের। আর এবার দত্তপুকুরের ঘটনায় মৃত্যু হলো অন্তত ৭জনের। 
এগরায় যার কারখানায় বিস্ফোরণ সেই তৃণমূল নেতা ভানু বাগ ৮০ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে একজনের মোটরসাইকেলের পিছনে চেপে পালিয়ে গিয়েছিলেন বালেশ্বরে। পরে কটক হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। নিছক বেআইনি বাজি কারখানা হলে দগ্ধ শরীর নিয়েও এমন ঝুঁকি নিয়ে তিনি পালিয়েছিলেন কেন? পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সেই বাজি কারখানায় বোমা তৈরি হচ্ছিল বলেই কি? স্থানীয় বাসিন্দাদের বয়ানেই জানা গিয়েছিল, বাজি কারখানায় বোমা বানাতে বাধ্য করানো হতো স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে।
এগরার সেই গ্রামে দশদিন পরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কী বলেছিলেন তিনি? মৃতদের পরিবারকে তিনি ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা আপনার হাতেও ছিল না, আমার হাতেও ছিল না। যিনি বেআইনিভাবে বাজি তৈরি করেছেন, তার জীবনও চলে গিয়েছে। স্থানীয়দের লক্ষ্য রাখার জন্য বলছি। বেআইনি বাজি তৈরি হলে, সঙ্গে সঙ্গে থানার ওসির কাছে অভিযোগ করবেন। যদি ওসি কোনও ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমার উপর ছেড়ে দেবেন। আমি ওসিকে বদলে দেব। এখানকার ওসিকে বদলে দেওয়া হয়েছে। কারণ তাঁকে বলা সত্ত্বেও তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি। পুলিশের ইন্টেলিজেন্স যদি সঠিক সময় কাজ করত, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে নজর রাখতে হবে।’ 
এগরার ঘটনার পরে বজবজে ও ইংরেজবাজারে বিস্ফোরণে প্রাণহানি ঘটেছে। ইংরেজবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ গত ২২ মে বীরভূমের দুবরাজপুরে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে মজুত ৫০টির বেশি বোমায় আকস্মিক বিস্ফোরণ ঘটে। বাড়ির ছাদ উড়ে গেছে, তবে প্রাণহানি ঘটেনি। তৃণমূলের সেই নেতা পালিয়ে যান, পুলিশও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। বোঝাই যাচ্ছে, এগরায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে যে আশ্বাস দিয়েছিলেন তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।


কেন হয়নি এবং হওয়া সম্ভবও নয় সেটাই এবার স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে দত্তপুকুরের ঘটনার পরে। এবার দত্তপুকুরের স্থানীয় বাসিন্দারা সোজাসুজি জানিয়ে দিচ্ছেন, আমরা পুলিশকে এবং স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের মন্ত্রী রথীন ঘোষকে বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কিন্তু সেই অভিযোগে কেউ কান দেয়নি। কারণ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ওখানেই বোমা তৈরি করা হতো। কারখানার মূল মাথা শামসূল আলি ওরফে খুদে তৃণমূলেরই কর্মী। বিস্মিত ভঙ্গিতে মন্ত্রী রথীন ঘোষ অবশ্য বলছেন,‘ওখানে বেআইনি বাজি কারখানা চলতো আমি জানতামই না।’ পরক্ষণেই তিনি বলেছেন, ‘মুর্শিদাবাদের থেকে আসা আইএসএফ কর্মীরা এখানে বেআইনি বাজি বানাতো।’ কিন্তু পুলিশ প্রশাসন তাহলে কী করছিল সেই ব্যাখ্যা তিনি অথবা জেলা পুলিশের কোনও অফিসারই দিতে পারছেন না। দত্তপুকুরের এই বাজি কারখানার সঙ্গেই যুক্ত তৃণমূল নেতা কেরামত যাকে পুলিশ আগে গ্রেপ্তার করেছিল, কেন তাকে ছেড়ে দিয়েছিল? অবাধে সে এখানেই বিস্ফোরকের কারবার চালাচ্ছিল কী করে? এই সব প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই। 
ঘটনার পরে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেছেন, ‘দুঃখজনক ঘটনা। এরকম ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য প্রশাসনকে সক্রিয় করতে অবশ্যই উদ্যোগ নেবো।’ কিন্তু কবে নেবেন? আর কত প্রাণহানির পরে? এরও কোনও উত্তর নেই। 
সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী তাই বলেছেন, ‘তৃণমূল এবং পুলিশের যৌথ প্রকল্প হিসাবে চলছে বাজি বোমার বেআইনি কারবার। পুলিশ প্রশাসন এবং মন্ত্রীদের জানিয়েও সাধারণ মানুষ কোনও সুরাহা পাচ্ছেন না, বারে বারে বিস্ফোরণ ঘটছে এবং বহু মানুষের মৃত্যু ঘটছে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কোনও মূল্য আছে? ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন বাংলার মানুষ।’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি বলেছেন, ‘যে পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া গেছে তাতে এটা স্পষ্ট যে বাংলার সরকার যেখানে খুশি বিস্ফোরক  ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এর ফলেই ধারাবাহিকভাবে বিস্ফোরণ হচ্ছে আর মারা যাচ্ছেন মানুষ। তারপর আবার সবাই চুপচাপ হয়ে যাচ্ছেন এবং অবৈধ কারবার চলেই যাচ্ছে। রাজ্য সরকার নীরব থাকতে পছন্দ করছে আর সাধারণ মানুষকে তার মূল্য দিতে হচ্ছে।’

Comments :0

Login to leave a comment