STUDENT DEATH BISHAKHAPATTANAM

অন্ধ্রে পড়তে গিয়ে কেন মৃত্যু রিতির? মামলা পরিবারের,
বাড়িতে সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ

কলকাতা

মৃত ছাত্রীর বাড়িতে রবিবার সুজন চক্রবর্তী, কল্লোল মজুমদার।

ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য তৈরি হতে ১৬ বছরের রিতি সাহা গিয়েছিল অন্ধ্র প্রদেশের ভাইজ্যাগে। প্রস্তুতি সহায়তার জন্য পরিচিত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয় রীতি। ১৪ জুলাই কলকাতার নেতাজীনগরে রিতির বাড়িতে খবর এসেছিল ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছে কন্যা। ১৬ জুলাই স্থানীয় হাসপাতালে মৃত্যু হয়। 

মেয়ের মৃত্যু ঘিরে একগুচ্ছ অভিযোগ পরিবারের। বাবা সুখদেব সাহা মামলা দায়ের করেছেন অন্ধ্র প্রদেশ হাইকোর্টে। রবিবার টালিগঞ্জের নেতাজীনগরে রীতির পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। পরিবারের লড়াইয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দেন তাঁরা।

পরিবারের অভিযোগ  পুলিশ, হাসপাতাল এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার সব রকম চেষ্টা করে। প্রমাণ লোপাট করতে তৎপর ছিল। নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হয়। 

সুখদেব সাহা জানিয়েছেন, ডাক্তারি প্রবেশিকা ‘নিট’-এর প্রস্তুতি নিতে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে যায় রীতি। গত বছর, ২০২২-এ, ‘আকাশ বাইজুস’-এর নিয়ম অনুযায়ী দ্বাদশের পরীক্ষার জন্য ভর্তি হয় স্থানীয় কলেজে। থাকা খাওয়ার জন্য বিশাখাপত্তনমের আক্কাপালম এলাকার একটি লেডিজ হস্টলে ব্যবস্থা করা হয়।

মৃত ছাত্রীর বাবা বলছেন, ‘‘১৪ জুলাই রাত প্রায় বারোটা নাগাদ আমার কাছে ‘আকাশ বাইজুস’-এর প্রধান রবি কান্তের ফোন আসে। বলা হয় রাত সাড়ে দশটা নাগাদ রিতি ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। স্থানীয় একটি হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। আমাদের দ্রুত বিশাখাপত্তনমে পৌঁছাতে বলা হয়।’’ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘ওই একই ফোনে কনফারেন্স কলে হস্টেলের ওয়ার্ডেন ভিন্ন কথা বলেন। তিনি জানান যে ছাদ থেকে নয়, রিতি সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। দুজনের ভিন্ন কথায় আমরা একটু অবাক হই। সপরিবারে বিশাখাপত্তনমে রওনা দিই।’’

১৫ জুলাই দুপুর দুটো নাগাদ বেঙ্কটরামা হাসপাতালে পৌঁছে পরিবার জানতে পারে যে রিতির অবস্থার অবনতি হয়েছে, ভেন্টিলেশন-এ দেওয়া হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, ভর্তির সময় থেকে রিতির কোনো চিকিৎসাই হয়নি, শুধু কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা ছাড়া। জানা যায় রিতির মাথায় রক্ত জমে আছে। অথচ ওই হাসপাতালে নিউরোর কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থাই নেই। রিতির বাবা জানিয়েছেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে রিতিকে স্থানীয় একটি বড় হাসপাতালে সরিয়ে নেই। কিন্তু পরের দিন, অর্থাৎ, ১৬ জুলাই দুপুর বারোটা পাঁচ নাগাদ রিতি আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায়।’’

পরিবারের অভিযোগ, গোড়া থেকে ১৮ জুলাই রিতির দেহ নিয়ে কলকাতায় ফেরা পর্যন্ত বিশাখাপত্তনম পুলিশ, স্থানীয় আইভি টাউন থানার পুলিশ, কোন সহযোগিতা তো করেনি। বরং তদন্ত ছাড়াই রিতির মৃত্যুকে সুইসাইড বলে দাবি করে।

সুখদেব সাহা বলছেন, ‘‘পোস্টমর্টেম-র আগে আমাদের দিয়ে জোর করে এই কথা লিখিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করে। কিন্তু আমরা সেটা চ্যালেঞ্জ করি এবং ওই কথা লিখতে অস্বীকার করি। সবচেয়ে বড় কথা যে ‘আকাশ বাইজুস’-এর দায়িত্বে আমি আমার যে ছোট্ট ফুটফুটে, ছটফটে, নাবালিকা মেয়েকে রেখে এসেছিলাম, এই কদিনে, তাদের একবারও রিতির খোঁজ নেওয়ার কথা মনে হয়নি, অথবা কেউ একবারও জানতে আসেনি রিতি কেমন আছে!’’

গত ৮ আগস্ট অন্ধ্র প্রদেশ হাইকোর্টে রিট-পিটিশন দাখিল করে রিতির এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর যাবতীয় নথি মহামান্য হাইকোর্টের হেফাজতে নেওয়ার জন্য। হাইকোর্ট সেই আবেদন গ্রহণ করে এবং একজন কোর্ট‌ কমিশনার নিয়োগ করে। বিশাখাপত্তনমে গিয়ে ওই সব নথি এবং প্রমাণ দেওয়া সময়ও অসহযোগিতার শিকার হয় পরিবার। 

মৃত ছাত্রীর বাবা বলছেন, ‘‘আমাদের মনে হয়েছে রিতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে নিশ্চয়ই কোন রহস্য রয়েছে এবং গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে রয়েছে। রিতির মৃত্যুর কারণকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে এবং এর পিছনে অত্যন্ত প্রভাবশালী কোন ব্যক্তি বা সংস্থার হাত থাকতে পারে।’’

তাঁরা জানাচ্ছে যে রিতির মৃত্যুর কিছুদিন পরে এ রাজ্যের মেদিনীপুরের এক ছাত্র বিজয়ওয়াড়ায় হস্টেলের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে একই রকম ভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। সেই ঘটনাকেও আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দেওয়া হয়। রিতি যেখানে ছিল সেই থানা এলাকারই একটি লেডিজ হস্টেলে আরেক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। 

Comments :0

Login to leave a comment