Partha Chatterjee

জেল থেকে বেরোতে চলেছেন পার্থ চ্যাটার্জি

রাজ্য

হাজার হাজার মেধাবী যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের বঞ্চিত করে কোটি কোটি টাকায় সরকারি চাকরি বেচার কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত জেলবন্দি প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি জেল থেকে মুক্তি পেতে চলেছেন। সোমবার বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক তাঁকে জেলমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। পার্থ চ্যাটার্জির সঙ্গেই জেল মুক্তি পেতে চলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ডি লিট দেওয়ার প্রস্তাবক, প্রাক্তন এসএসসি চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য। 
ইতিমধ্যেই জামিনের শর্ত হিসেবে নব্বই হাজার টাকা জমা পড়ে গিয়েছে। আদালতের নথি মুখ্য বিচারবিভাগীয় আধিকারিকের কাছে পৌঁছোনোর পরেই জেলমুক্ত হবেন পার্থ চ্যাটার্জি। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর পার্থকে জেল মুক্তির নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট। এদিন এসএসসির এক আধিকারিকের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়। সিবিআইয়ের সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ। তাই সুপ্রিম কোর্টের আদেশানুসারে জেল থেকে মুক্তি পাবেন পার্থ।
এই মুহুর্তে বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীনপার্থ চ্যাটার্জি। তবে তিনি এদিন ভার্চুয়ালের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন। আদালত তাঁকে পাসপোর্ট জমা রাখা এবং নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার শর্ত দিয়েছে। এছাড়াও ৯০ হাজার টাকা জমা দেওয়া ও এলাকা ছাড়তে পারবেন না বলে শর্ত দিয়েছে।
রাজ্যে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতির ভয়াবহ ছবি সামনে এসেছিল ২০২২ সালের ২২ জুলাই। রাতভর জেরা, তল্লাশির পরে সেদিন পার্থ চ্যাটার্জিকে নাকতলার বাড়ি থেকেই গ্রেপ্তার করে ইডি। তার আগের দিন পার্থ চ্যাটার্জির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখার্জির ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় কোটি কোটি নগদ টাকা। নিয়োগ দুর্নীতির চেহারা প্রকট হয় পার্থ চ্যাটার্জির গ্রেপ্তারির পরেই। হরিদেবপুরে অর্পিতা মুখার্জির ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। তার কয়েকদিন বাদেই ফের বেলঘরিয়ায় পার্থ চ্যাটার্জির এই বান্ধবীর বাড়ি থেকে ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা নগদ উদ্ধার হয়। খাটের তলা থেকে ড্রয়িং রুম, বেডরুম থেকে এই কাঁড়ি কাঁড়ি নগদ টাকা উদ্ধারের দৃশ্য দেখেছিলেন রাজ্যের মানুষ। মোট উদ্ধার হয়েছিল নগদ ৪৯ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও প্রায় পাঁচ কোটি টাকার সোনার গয়না, বিপুল সম্পত্তি, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার হয়েছিল, মিলেছিল ভুয়ো কোম্পানির হদিশ।
মন্ত্রী থাকাকালীনই টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া, মেধা তালিকা পরিবর্তন করে দেওয়া, টাকার বিনিময়ে বিএড কলেজে অনুমোদন দেওয়া, ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা নগদ উদ্ধার, বারুইপুর থেকে শান্তিনিকেতনে একাধিক বাগানবাড়ি, স্ত্রী-জামাইয়ের নামে ভুয়ো সংস্থায় টাকা লেনদেন, ২০১টি শিখণ্ডী সংস্থা চালানোর নজির গড়েছেন একদা তৃণমূলের এই মহাসচিব।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ডিলিট দেওয়ার প্রস্তাবের ‘পুরস্কার’ হিসেবে সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়। তাঁকে হিল ইউনিভার্সিটির উপাচার্যও করে রাজ্য সরকার। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এসএসসি’র চেয়ারম্যান ছিলেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য। তাঁরই মেয়াদকালে ২০১৪ সালে উচ্চ প্রাথমিক, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের যে মেধা তালিকা বাতিল করা হয়েছিল, সেই তালিকা তৈরি হয়েছিল সুবীরেশ ভট্টাচার্য এসএসসি’র চেয়ারম্যান থাকাকালীন। তিনিও জেল মুক্তি পেতে চলেছেন।

Comments :0

Login to leave a comment