MUKTADHARA : STORY : POLTUR PERISCOP : SOURAV DUTTA : 23 SEPTEMBER 2024, MONDAY

মুক্তধারা : গল্প : কাল্টুর পেরিস্কোপ : সৌরভ দত্ত : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA  STORY  POLTUR PERISCOP  SOURAV DUTTA  23 SEPTEMBER 2024 MONDAY

মুক্তধারা : গল্প

কাল্টুর পেরিস্কোপ

সৌরভ দত্ত

স্কুলে নিত্যকার এমন কিছু কাণ্ড করে বসে যে স্যারেদের থেকে ভৎসনা জোটে।এইট বি সেকশনের ছাত্র কাল্টু। ভালো নাম কৌশিক মোদক।বাবা মুড়কি তৈরি করে ।হাটতলা বাজারে ওদের একটা ছোট তেলেভাজার দোকান আছে। দীর্ঘদিন তেল না মাখায় চুলটা লালচে খোঁচাখোঁচা।মুখে ছুরির দাগ।ইস্কুলের জামাটা নোংরা ,ছেঁড়া,।প্যান্টের একটা হুক ছেঁড়া।মা নেই বলে জামাটা কেউ রিফু করে দেয় না।জামায় পিছনের বেঞ্চে বসা বন্ধুরা লিখে দিয়েছে‌ বিভিন্ন আকথা-কুকথা।প্রচুর আঁকিবুঁকি কাল্টুর জামায়।ক্লাসে বদমায়েশি আর ঠিকঠাক পড়া না পারার জন্য স্যারেদের হাতে সর্বদা  মার খায়।কিন্তু সৌমেন স্যার কাল্টুকে খুব ভালোবাসে।

কাল্টুর স্কুল ব্যাগে বই খাতা দুএকটা থাকে।ব্যাগে ঠাসা থাকে বিভিন্ন জিনিসপত্র। চিরুনি,কাঁচি,ব্লেড, রঙিন বল,সিসা,আতশকাচ, রেডিওর ভাঙা ট্রানজিস্টর,চর্চের চুনি,তার,গালা,ব্যাটারি,ঝিনুক আরও কত কি!আর থাকে মিড-ডে-মিল খাওয়ার থালা,চামচ। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে সে বাবুলগাম আর আচার কিনে খায়। বিজ্ঞানের বিভিন্ন জিনিসপত্র বানাতে চেষ্টা করে।কাল্টু ভালো পেরিস্কোপ বানাতে পারে।ভৌত বিজ্ঞানের স্যার সৌমেনবাবু হাতে ধরে শিখিয়েছেন।কাল্টুদের ফাইনাল পরীক্ষা।কাল্টু হাতের কাজে একটা পেরিস্কোপ বানিয়ে স্কুলে জমা দিয়েছে।কাল্টু পেরিস্কোপটা দারুণ বানিয়েছে। বন্ধুরা পেরিস্কোপ নিয়ে কাড়াকাড়ি করে।এক বন্ধু জানলা দিয়ে মাঠের দিকে তাকায়।একটা শামুকখোল পাখিকে উড়ে গিয়ে বট গাছের মাথায় বসতে দেখে। বন্ধুরা মজা করে কাল্টুর নাম দিয়েছে–পেরিস্কোপ।পেরিস্কোপটা স্কুলের স্টাফরুমে রাখা থাকে।যে যখন পারে সেই পেরিস্কোপে চোখ রাখে।এক একজন এক এক রকম দৃশ্য দেখতে পায়। ডিপারচার বসাতে এসে–মহাদেব স্যার পেরিস্কোপে চোখ রাখতেই দেখতে পেয়েছিলেন 
অসুস্থ মায়ের ছবি। উৎকন্ঠায় হু হুঁ করে উঠেছিল মনটা। জনার্দন স্যার যন্ত্রটা হাত নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে থাকেন তারপর চোখ রাখে দেখতে পান–ইউক্রেন-রাশিয়া সাবমেরিনের যুদ্ধ। 
পাবলিশার্সের  ভদ্রলোক স্পেসিমেন কপি দিতে এসেছিলেন পেরিস্কোপে চোখ দিয়ে দেখলেন–আর.জি.কর। মধুমিতা ম্যাম সংসার সামলে প্রতিদিন একটু দেরিতে স্কুলে আসেন সেদিন পেরিস্কোপটা হাতে তুলে দেখলেন–একদিকে ধূমধাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে বিশ্বকর্মা পুজো‌ হচ্ছে, কাঁসর ঘন্টা বাজছে,ডি.জে চলছে।অন্যদিকে পুজোর অনুদানের টাকা ফেরাচ্ছে ক্লাবগুলো।শ্যামপুর থেকে আসেন স্কুলের গ্রুপ ডি বিশ্বজিৎ পাল পেরিস্কোপে দেখতে পেলেন কদিনের মধ্যেই তার চাকরিটা চলে যাচ্ছে।দেবু বাবু সব সময় খোশমেজাজে থাকেন। হঠাৎ টেবিল থেকে তুলে নিয়ে পেরিস্কোপটায় চোখ রাখতেই দেখতে পেলেন–মশাল হাতে একটা বিশাল মিছিল চলেছে।হেডস্যার বললেন– আ-আ-আমি একবার দেখি–তিনি দেখতে পেলেন দুর্নীতি।সহকর্মীরা তার সোচ্চার পদত্যাগ চাইছে। কিছুটা বমকে গিয়ে ঝট করে ফেলে দিলেন পেরিস্কোপটা।তবু ওটা ভাঙল না।কাল্টুর একদিন ইচ্ছে হল আমরা যন্ত্রটা গিয়ে দেখে আসি। পেরিস্কোপটায় চোখ‌ রাখতেই সে দেখতে পেল–মনশুকার বাঁধ ভেঙে হু হু করে বন্যার জল ঢুকছে।সব হারানো মানুষরা আর্তনাদ করছে। খাবার চাইছে, জল চাইছে। তাদের সামনে নীল-সাদা শাড়ি পরিহিতা একজন হা-পা নেড়ে বেশ গোল গোল কথায় ভাষণ দিচ্ছেন।তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে বহু মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। ‘গো ব্যাক–গো ব্যাক’ ধ্বনি দিচ্ছে।চারদিকে সংবাদ মাধ্যম এর অজস্র ক্যামেরা।তিনি হাত-পা নেড়ে বলছেন–‘আপনারা শুনুন এটা–ম্যান মেড ফ্ল্যাড!ওরা পরিকল্পিতভাবে বাংলায় জল ঢুকিয়ে ডুবিয়েছে।’ কাল্টু পেরিস্কোপ থেকে চোখটা সরিয়ে নেয় ।ভাবে ওখানে এসব কি হচ্ছে! কাল্টু ইংরেজিতে খুব কাঁচা সে ‘ম্যান মেড ফ্ল্যাড’ এর অর্থ জানে না … স্কুলে ঘুরে ঘুরে স্যার-ম্যাডামদের জিজ্ঞাসা করতে থাকে স্যার ‘ম্যান মেড ফেলাড’ এর মানেটা কি? সবাই লজ্জায় চুপ করে থাকেন।

Comments :0

Login to leave a comment