ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী
‘আমার স্বাস্থ্য, আমার অধিকার’ — এটি এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মূল ভাবনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যবেক্ষণ, পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার ক্রমশ সঙ্কুফচিত হয়েই চলেছে। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে দিনে দিনে মানুষের নানান অসুখ-বিসুখ বাড়ছে, অন্যদিকে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। একদিকে দেশে দেশে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষ ও সংগঠিত গণহত্যার ফলে প্রাণহানি বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য, ক্ষুধা, মানসিক অসুস্থতা। জৈবজ্বালানির দহন কমানোর উদ্যোগে আশানুরূপ সাফল্য আসেনি, ফলে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে দূষণমুক্ত বাতাস থেকে, যা প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একজন করে মানুষরে মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছে। তাদের আরও পর্যবেক্ষণ, ১৪০টি দেশের সংবিধানে স্বাস্থ্যকে মানুষরে অধিকার বলে স্বীকার করা হলেও প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন, তার যথাযথ প্রয়োগ এবং উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার প্রশ্নে এখনো শৈথিল্য রয়েই গেছে অধিকাংশ দেশে।
কোনও মানুষের অসুস্থ হয়ে না পড়া, নির্ভর করে বেশ কগেকটি বুনিয়াদি মানবাধিকার রয়েছে কিনা তার উপর। যেমন নিরাপদ পানীয় জল, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যকর বাসস্থান, নিকাশি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পুষ্টিকর খাদ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নিরাপদ কাজের পরিবেশ, সামাজিক স্থিতি, ন্যায়বিচার, গোপনীয়তার অধিকার ইত্যাদি। স্বাস্থ্যের অধিকার মানে এটাও বোঝায় যে প্রত্যেকের নিজের শরীর ও মনের উপর আত্ম-নিয়ন্ত্রণ থাকছে, হিংসা ও বৈষম্য থেকে মুক্ত থাকবে এবং যৌন ও প্রজননগত স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ লব্ধ হবে, সেখানে প্রত্যেকের গোপনীয়তা ও সম্মান বজায় থাকবে। কাউকে গিনিপিগ হতে হবে না, জোর খাটানো হবে না, অবহিত সম্মতি ছাড়া কারো উপর কোনও চিকিৎসার-প্রকরণ প্রয়োগ করা হবে না।
১৯৭৮ সালে আমলা আটা ঘোষণাতে অসুস্থতা ও অস্বাস্থ্যের মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে পর্যাপ্ত খাদ্য, পুষ্টি, নিরাপদ পানীয় জল ইত্যাদির অভাব, উপযুক্ত বাসস্থানের অভাব, বিশ্রামের অভাব, অতিরিক্ত পরিশ্রম— এককথায় দারিদ্র ও কর্মহীনতার সঙ্গে যুক্ত সমস্যাবলী। এই আর্থ-সামাজিক কারণগুলি নিরসনের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করা গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রতিটি সরকারের দায়িত্ব। অথচ আমাদের দেশে হেলথ ইন্ডাস্ট্রির রমরমার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য পণ্য হয়ে উঠেছে ও স্বাস্থ্য পরিষেবা বড় বাণিজ্যে পর্যবসিত হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে দেশে মোট যা খরচ হয়, তার অর্ধেক ব্যয় হয় মানুষের পকেট থেকে। সরকার প্রাইভেট সেক্টরের বল্গাহীন মুনাফার ওপর লাগাম কষাতে ব্যর্থ। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি কর্পোরেট হেলথ সেক্টরের পক্ষ নিয়েছে। প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে গৃহীত জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে অর্থবরাদ্দ ক্রমশ কমছে। আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর থেকে যে জাতীয় যোজনা কমিশনের জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা, সম্প্রসারণ করা ও রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচিগুলো মানুষের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দেওয়া, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতায় এসেই সেই যোজনা কমিশনকে বিলুপ্ত করে নীতি আয়োগ তৈরি করে, যাদের মূল লক্ষ্য স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে মুনাফার জন্য কর্পোরেট জগতের হাতে তুলে দেওয়া।
মোদী সরকার আয়ুস্মান ভারত প্রকল্পে বিমা-ভিত্তিক স্বাস্থ্য পরিষেবার মাধ্যমে জনগণের করের টাকা অগ্রিম প্রিমিয়াম হিসাবে কর্পোরেট হাঙরদের পেটে ঢালার সুবন্দোবস্ত করে মানুষের রোগ প্রতিরোধের রাষ্ট্রীয় দায় ঝেড়ে ফেলল। এই নীতি গরিব, প্রান্তিক ও মধ্যবিত্ত মানুষের সুস্থ থাকার অধিকার সঙ্কুচিত করে বিমা-নির্ভর কর্পোরেট হাসপাতাল, ওষুধ কোম্পানি, ল্যাব ও ই-ফার্মেসির মিলিত মুনাফা-লালসার শিকারে পরিণত করল তাদেরকে। প্রধানমন্ত্রী জন-আরোগ্য যোজনার তহবিল এখন পূর্ণসময়ের এক সিইও’র অধীন এক ট্রাস্টের হাতে! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্যের জিডিপি’র অন্তত ৫ শতাংশ বরাদ্দের কথা বললেও ২০১৭-র স্বাস্থ্যনীতিতে ধাপে ধাপে ২০২৫-এর মধ্যে ২.৫শতাংশ বরাদ্দের কথা লেখা হল। বাস্তবে অবশ্য চলতি বছরে বরাদ্দ গত বছরের চেয়েও কমে ২.১ শতাংশ হয়ে গেল! এই যৎসামান্য বরাদ্দের মাত্র ১১ শতাংশ খরচ হয় রোগ প্রতিরোধে, সিংহভাগ চলে যায় বিমার প্রিমিয়াম দিতে। সারা দেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ কম। যেগুলো আছে, তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ ২৪ ঘণ্টা চালু থকে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট শয্যা ৮ লক্ষ, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমত আরও ৩৫ লক্ষ শয্যা প্রয়োজন। চিকিৎসক ও নার্সের মিলিত সংখ্যা প্রয়োজন অন্ততঃ ৪৫ লক্ষ, রয়েছে মাত্র ২৬ লক্ষ। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অডিট রিপোর্ট পেশ করে ক্যাগ সম্প্রতি প্রাথমিক স্বাস্থ্যের পরিকাঠামোর বেহাল দশা তুলে ধরেছে। ২০১৯-২০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশিত তথ্য অুনযায়ী দেশে দেড় লক্ষের কিছু বেশি উপস্বস্থ্যকেন্দ্র ছিল, যেখানে প্রয়োজন ছিল প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ। এই দেড় লক্ষের এক তৃতীয়াংশ আজও ভাড়া বাড়িতে চলে, ১০ শতাংশ কেন্দ্রে কোনও এএনএম নেই, ২৫ শতাংশ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, পানীয় জলের সরবরাহ নেই। সারাদেশে মাত্র ত্রিশ হাজার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, যেখানে থাকার কথা এর তিনগুণ বেশি। যে’কটি আছে, তার এক তৃতীয়াংশ মাত্র ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। সাম্প্রতিক অতিমারীর ধাক্কায় পরিকাঠামো ও মানবসম্পদের এই ঘাটতি আরও নগ্নভাবে ফুটে উঠেছে। এই সময়কালে কোভিড ও অন্যান্য রোগে এত বেশি মৃত্যুহারের কারণ এই ঘাটতিগুলো। পঞ্চম জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার রিপোর্টে উঠে এসেছে ভারতীয় মহিলা ও শিশুদের অর্ধেকের বেশি রক্তাল্পতায় ভুগছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও সমীক্ষা চালানো ২২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ১৫টিতেই, অর্থাৎ কেরালা ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো বাদে দেশের প্রায় সর্বত্র এই চিত্র। সরকারি পোষণ ট্র্যাকার অ্যাপের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ৩৩ লক্ষেরও বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, যার মধ্যে ১৮ লক্ষ গুরুতর অপুষ্ট।
ক্ষুধার সূচকে ১২৫টি দেশের মধ্যে ভারতের নেমে হয়েছে ১১১তম, দারিদ্র্য সূচকে আমাদের অবস্থান ১৩৪, লিঙ্গ পার্থক্যের নিরিখে ১৪৬টি দেশের মধ্যে ১৩৫তম। এখনও ৪০ শতাংশ গ্রামের মানুষ পরিস্রুত পানীয় জল পায় না, ৩ কোটি ৭৭ লক্ষ মানুষ জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হন, ১০ শতাংশ বাড়িতে শৌচাগার নেই, ৬০ শতাংশ গ্রামের মানুষ বর্জ্য নিষ্কাশনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। আমাদের দেশের ৭ কোটি মানুষ কোনও না কোনও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত, গত বছর আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ২লক্ষ ৬০ হাজার। ৫৫শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত, তার অন্যতম কারণ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মোট অর্থের মাত্র ১ শতাংশ বরাদ্দ মানসিক রোগের জন্য।
২০১৭ সালে সারা দেশে চিকিৎসক ধর্মঘটকে অগ্রাহ্য করে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন আইন এনে মেডিক্যাল শিক্ষার বেসরকারিকরণ নিশ্চিত করেছে মোদী সরকার। পাড়ায় পাড়ায় পরিকাঠামোহীন মেডিক্যাল কলেজ খুলে ম্যানেজমেন্ট কোটার মাধ্যমে কোটি টাকার বিনিময়ে অসংখ্য অদক্ষ চিকিৎসক তৈরি করছে ব্যবসায়ীরা, যেখানে তফসিলি জাতি, উপজাতিদের সংরক্ষণের কোনও বালাই নেই। দীর্ঘ সাড়ে চার দশকের ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের নীতি বদলে বাজারের হাতে নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়েছে এই সরকার, তার উপর আবার অন্যায়ভাবে জিএসটি চাপিয়েছে। ইলেক্টোরাল বন্ডের দুর্নীতি আজ প্রকাশ্যে। জরুরি ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ শিকেয় তুলে ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে ঘুরপথে উৎকোচ সংগ্রহে তৎপর কেন্দ্রের শাসকদল।
রাজ্যের অবস্থা অথৈবচ। একদিকে কেন্দ্র স্বাস্থ্যখাতে এবং স্বাস্থ্যের নির্ণায়ক ক্ষেত্রগুলেতে বরাদ্দ ছাঁটাই করছে, অন্যদিকে এরাজ্যে সেই হ্রাসপ্রাপ্ত বরাদ্দের অর্থ নয়ছয় চলছে। সীমাহীন দুর্নীতির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বাস্থ্যের নিয়ামকগুলি। এমনকি বিপর্যয় মোকাবিলার সামগ্রীও আত্মসাৎ করছে শাসক। এরাজ্যেও স্বাস্থ্যসাথীর নামে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকা প্রিমিয়াম বেসরকরি বিমা কোম্পানির হাতে তুলে দিচ্ছে সরকার। সঙ্কুচিত করছে মানুষের কাজের অধিকার, গণতান্ত্রিক পরিসর, সামাজিক স্থিতি, মূল্যবোধের সংস্কৃতি-যেগুলি মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাকিজ স্বাস্থ্যের নির্ধারক।
এরাজ্যেই ২০১০ সালে ৭৩ শতাংশ মানুষ সরকরি হাসপাতালে পরিষেবা নিতেন, যেখানে জাতীয় গড় ছিল মাত্র ৪০ শতাংশ। গরিব, মধ্যবিত্ত মানুষের ভরসার স্থল ছিল সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা। ১৯৭৭ সালের তুলনায় অন্তর্বিভাগে রোগী ভর্তি ২০১০ সালে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৬৩ শতাংশ, গ্রামীণ হাসপাতালে ৩৩ শতাংশ, মহকুমা ও স্টেট জেনারেল হাসপাতলে ২৩ শতাংশ ও জেলা হাসপাতালে ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০১০ সালে পুরুষ ও মহিলাদের জাতীয় গড় আয়ু ছিল যথাক্রমে ৬৮.৮ বছর ৬৮.১ বছর, আর এরাজ্যে তা ছিল যথাক্রমে ৬৮.২৫ বছর ও ৭০.৯ বছর। ঐ বছরে জাতীয় জন্মহার ছিল প্রতি হাজারে ২২.৫, এরাজ্যে ছিল হাজারে ১৭.২। তখন শহরাঞ্চলে দেশের নিম্নতম জন্মহার ছিল এরাজ্যেই (হাজারে ১২.১), যখন জাতীয় গড ছিল ১৮.৩। একই সময় দেশে মৃত্যুর হার ছিল হাজারে ৭.৩, এরাজ্যে ছিল ৬.২, যা ছিল দেশের নিম্নতম। দেশে সেসময় মাতৃমৃত্যুর হার দেশে চতুর্থ নিন্মতম — হাজারে মাত্র ৩৩। আর ঐ সময় শহরাঞ্চলে ছিল দেশের নিম্নতম হার- হাজারে ২১ মাত্র।
আসলে সে সময় পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক একটা শক্তিশালী ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা থাকায় ক্ষমতার প্রকৃত বিকেন্দ্রীকরণ পরিলক্ষিত হতো। রাজনৈতিক সদিচ্ছার ফলে গ্রামের উন্নয়নের পরিকল্পনা ও তার রূপায়ণ গ্রামের মানুষ সংসদ বসিয়ে করতেন, শহরের মানুষও ওয়ার্ড কমিটিতে বসে তা করতেন। অর্থ বরাদ্দ করা হতো গ্রামের পাড়ায় পাড়ায়, শহরের মহল্লায় মহল্লায় সেই তৃণমূলস্তরের কমিটিগুলির ফাংশনিংয়ের জন্য। ফলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সূচকগুলো ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছিল, কোন কোন সূচক দেশের সর্বোৎকৃষ্টি ছিল। শ্রেণিদৃষ্টিতে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও তার রূপায়ণে মানুষের সমষ্টিগত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেই রাজ্যকে ঐ উচ্চতায় তুলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল। ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, আমলানির্ভরতা, নিয়োগে পোস্টিংয়ে, পদোন্নতিতে ও কেনাকাটায় সীমাহীন দুর্নীতি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, স্বাস্থ্য দপ্তরকে রাজনীতির আখড়া বানানো, কর্পোরেট-বান্ধব নীতি রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রের গরিমাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। আজ বাংলার মাতৃমৃত্যুর হার জাতীয় হারকে ছাপিয়ে গেছে, বাল্যবিবাহ ও টিন-এজ প্রেগন্যান্সিতে রাজ্য দেশের প্রথম সারিতে। প্রেশার, সুগার, ক্যানসারের রুগীরা হয়রান হচ্ছে হাসপাতালে ওষুধ না পেয়ে। এমনকি স্যালাইন, সামান্য জ্বরের ওষুধও সরকারি হাসপাতালে অমিল থাকছে বছরের বেশিরভাগ সময়। গরিব মানুষ হাসপাতালে একটা অপারেশনের তারিখ পেতে বছর গড়িয়ে যাচ্ছে।
সুতরাং, কেন্দ্রে ও রাজ্যে স্বাস্থ্যের অধিকারকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও তার যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিমা-ভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে এক শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা, বেসরকারি ক্ষেত্রকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ওষুধের মূল্য ও গুণমান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যখাতে অবিলম্বে জিডিপি’র ৩.৫শতাংশ ও পর্যায়ক্রমে ৫শতাংশ বাজেট বরাদ্দ হাসিল করার লড়াইয়ে শামিল হওয়াই আজকের দিনে শ্রমজীবী মানুষের অগ্রাধিকার হোক।
Post Editorial
স্বাস্থ্য এখন কর্পোরেট মুনাফার জগৎ
×
Comments :0