ভারতের ওপরতলার ১ শতাংশের আয়ের ভাগ এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি। ২২ শতাংশ আয় মাত্র ১ শতাংশের হাতে। এই অংশের হাতেই দেশের সম্পদের ৪০ শতাংশ। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার কেন্দ্রের আসীন হওয়ার পর থেকে খুব অল্প অংশের হাতে বিরাট আয় এবং সম্পদ্ চলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে লাফিয়ে।
বিশ্ব অসমতা তথ্যভাণ্ডার মোদী সরকারের সময়ে বিপুল সম্পত্তিবানদের আরও বৃদ্ধির এই ছবি হাজির করেছে। বৈষম্য আরও স্পষ্ট করছে নিচের তলার আয় ও সম্পদের ভাগ। আয়ের বিচারে নিচের তলার ৫০ শতাংশের হাতে পৌঁছায় দেশের মোট আয়ের মাত্র ১৫ শতাংশ।
সোজা হিসেবে ওপরে থাকা ১ শতাংশের হাতে যত আয় পৌঁছাচ্ছে তার চেয়ে অনেক কম নিচে থাকা ৫০ শতাংশের মোট আয়। প্রতিবেদনে ‘বিলিওনেয়ার রাজ’-কেই বৈষম্যের জন্য দায়ী করা হয়েছে। একশো কোটিতে এক বিলিয়ন।
অসমতা এবং বৈষম্যের এই বাস্তবতার জন্য কেন্দ্রের মোদী সরকারের নীতিকে দায়ী করেছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলছেন, ‘‘কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক শক্তির জোট জাতীয় সম্পদ লুট করছে। বড়লোকদের আরও বড়লোক করছে, গরিব আরও গরিব হচ্ছেন।’’
ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘অসমতা এবং বৈষম্যের এই প্রবণতা রুখতে উপায় একটিই। লোকসভা নির্বাচনে মোদী সরকারকে পরাজিত করতে হবে।’’
বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়তে আগ্রহী দলগুলির জাতীয় মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র ঘোষণাপত্রে বৈষম্যকে সামনে রাখা হয়েছে। বৈষম্যের কারণেই দেশের অর্থনীতিতে চাহিদা কমে যাওয়ার পরিস্থিতিতে জোর দেওয়া হয়েছে। সে কারণে কাজের সুযোগও কমছে। কমছে রোজগার। বেকারির হার স্বাধীনতার পরের যে কোনও পর্বের তুলনায় মোদীর মেয়াদে সবচেয়ে চড়া, বলেছে ‘ইন্ডিয়া’।
‘ওয়ার্ল্ড ইনইকোয়ালিটি ডেটাবেস’-র সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান জানাচ্ছে, ১৯৮০’র পর থেকে দেশে বৈষম্য বেড়েছে। ২০০০ সালের পর তার হার আরও চড়তে থাকে। বৈষম্য তীব্র হতে থাকে ২০১৪-১৫ থেকে ২০২২-২৩ পর্বে। বলা হয়েছে, নিট সম্পদের বিচার করলে ভারতের কর কাঠামোয় সম্পত্তিবানদের বেশি ছাড় দেওয়া হয়। সম্পদ এবং আয়র অনুপাতে কর বাসনো হয় না।
নিট করের বিচার করলে দেখা যায় কর্পোরেট এবং ধনীদের থেকে যা নেওয়া হয় ঋণে ছাড় এবং বিভিন্ন প্রকল্পে করে ছাড় দেওয়া হয় বড় মাত্রায়। তার ওপর শিল্প বা পরিষেবার জন্য উৎসাহ প্রকল্পের নামে চলে ছাড়।
সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীরা বারবারই কর কাঠামোয় পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। যাতে সম্পত্তিবান এবং সুবিধাবান অংশের থেকে মোটের বিচারে সঙ্গত মাত্রায় কর আদায় করা যায়। আন্তর্জাতিক স্তরের এই সমীক্ষাটিও বলছে, কর কাঠামো পরিবর্তন করে অতি বত্তবানদের অতিরিক্ত আয়ে কর বসানো উচিত। তা’হলে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো খাতে খরচ বাড়াতে পারবে সরকার।
সমীক্ষার অভিমত, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে চিহ্নিত সবচেয়ে সম্পদশালী ১৬৭টি পরিবারকে ২ শতাংশ সম্পত্তি কর দিতে বলা হোক। কর আদায় বাড়বে জাতীয় আয়ের ০.৫ শতাংশ।
মোদী সরকার ২০১৫’তে সম্পত্তি কর বাতিল করেছিল। কর্পোরেট করের হারও কমিয়েছে লাগাতার।
Comments :0