ভ্রমণ — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
আমতা আমতা করে হামতা...
অভীক চ্যাটার্জী
আমরা কিছু খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম মানালীর কিছু পরিচিত দ্রষ্টব্য দেখতে। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা বিয়াস,তার চঞ্চল উদ্দাম গতি কোনো সুন্দরী তন্নীর কথাই মনে করিয়ে দেবে। তার পাশের পার্বত্য উঁচু নিচু পথ বেয়ে আমি আর প্রতীক চললাম আমাদের প্রথম গন্তব্য ঋষি মনুর মন্দিরে।
হোটেল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার খাড়া চড়াই এর পর পৌঁছলাম মনু মন্দিরে। পথের পাশে অগুনতি মনোহারী দ্রব্য সামগ্রীর দোকান। সেখানে বিক্রি হচ্ছে হিমাচলি বস্ত্র, তিব্বতী থানকা, উপহার সামগ্রী , কিন্তু অদ্ভুত লাগলো এটা দেখে, যে সেই দোকানের মালিকেরা কোনো পর্যটককে রাস্তা থেকে ডাকছেন না। যদি কেউ দোকানে আসেন, তাকে দেখাচ্ছেন, কেউ কেউ কিনছে, কিন্তু বিক্রির জন্য কোনো জোরও করছেন না। বড়ো ভালো পরিবেশ। পথ যদিও খাড়া, কিন্তু এসব দেখতে দেখতে, আর গল্প করতে করতে আমি আর প্রতীক পৌঁছলাম মনু মন্দিরে।পাথরে নির্মিত এই ছোট্ট মন্দিরটি হিমাচলের সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করে। ঋষি মনুর পালকিটিও মন্দিরের ভেতরেই রাখা আছে। মন্দিরের চারিদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও মনোমুগ্ধকর।
সেখান থেকে আমরা চললাম হিডিম্বা দেবীর মন্দিরে। ভীমপত্নী আপাত রাক্ষসী হিডিম্বাকে হিমাচল প্রদেশের মানুষ দেবী জ্ঞানে পূজা করে। পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা মন্দিরটি এক অদ্ভুত উপলব্ধির জায়গা। বড়ো বড়ো মহীরুহের মাঝে কাঠের মন্দিরটির গায়ে অসংখ্য সুন্দর কারুকার্য নজর কাড়ে। অরণ্যের দেবী হিডিম্বার মন্দিরের গায়ে একে একে ঝোলানো রয়েছে প্রচুর বন্য পশুর করোটি। এ অরণ্য মাঝের মন্দিরের যোগ্য সঙ্গত দিতে পারে এই করোটিগুলি। এই মন্দিরটি তুলনামূলক ভাবে বড় এবং ভিড়ও বেশি এখানে।সেখান থেকে আরও একটু উপরে উঠলে ভীমপুত্র ঘটোৎকচের মন্দির।সেই নিবিড় অরণ্য বনানী মাঝে পূজিত হন মহাভারতের সবচেয়ে উপেক্ষিত বীর।সাদামাটা সে মন্দির দেখে আমরা চললাম আমাদের শেষ গন্তব্য বশিষ্ঠ মন্দিরের দিকে। এটির দূরত্ব একটু বেশি।
এই মন্দির মূলত বিয়াসের অপর পাড়ে অবস্থিত। কাঠের মন্দিরটির গায়ে অসংখ্য সূক্ষ্ম কারুকার্য মাখিয়ে পাহাড়ের গায়ে এই মন্দিরটিকেও হিমাচলিরা বড় যত্নের সাথে গড়ে তুলেছে। এর সাথে এর উষ্ণ প্রস্রবণটি একটি উপরি পাওনা। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে এই মন্দিরটি দেখে আমরা আস্তে আস্তে আমাদের হোটেলের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। পথে আসতে আসতেই আমার কাছে আমাদের ট্রেক অর্গানিজারের একটা ফোন আসে। তারা বলে, হিমাচল প্রদেশের সরকার পাহাড়ে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেখে সব ট্রেক বাতিল করে দিয়েছে। আগামী কালের ট্রেক অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত!!! আমাদের মাথায় হাত! এতদূর এসে ট্রেক ক্যান্সেল! এবার কি করবো আমরা!
চলবে
Comments :0